ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে

৫৬ ভারি যানবাহন কিনেছে ডিএসসিসি ॥ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২২ জুলাই ২০১৮

৫৬ ভারি যানবাহন কিনেছে ডিএসসিসি ॥ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন

মশিউর রহমান খান ॥ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে উন্নত প্রযুক্তির বিশেষ সুবিধা সম্পন্ন ৫৬টি ভারি যানবাহন কিনেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। বাংলাদেশ সরকার ও জাপান সরকারের যৌথ অর্থায়নে নেয়া একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এসব যানবাহন কেনা হয়েছে। একই প্রকল্পের আওতায় প্রথমবারের মতো এসব যানসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সকল যানবাহন মেরামত ও সংস্কার করতে ডিএসসিসি এলাকায় একটি ওয়ার্কশপ কাম ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ করা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যেই এসব যানবাহন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এসব যানবাহন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হলে কমপক্ষে আগামী ৩ বছর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত যানবাহনের সমস্যা থাকবে না বলে জানা গেছে। রাজধানীতে অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়া বর্জ্যরে চাহিদা অনুযায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমুন্নত রাখা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভবিষ্যতে সৃষ্ট যে কোন সমস্যা মোকাবেলায় এসব যানবাহন ক্রয় করা হয়েছে। একইসঙ্গে বর্তমানের চলমান ব্যবহার উপযোগিতা হারিয়ে যাওয়া ২৮ থেকে ৩০ বছর আগের পুরনো যানবাহনের ফলে সৃষ্ট নানা সমস্যার সমাধানে এর বিপরীতে নতুন যানবাহনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই এসব যানবাহন ক্রয় করা হয়েছে বলে ডিএসসিসি সূত্র জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে। যানগুলোর মধ্যে কমপেক্টার ২২টি, কন্টেনার ক্যারিয়ার ২৪টি ও ডাম্প ট্রাক ১০টি। এসব যানবাহন যুক্ত হলে বর্জ্য পরিবহন ও সংগ্রহে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে। তবে গত এপ্রিল মাসে এসব যানবাহন ঢাকায় আনা হলেও এখনও এসব ভারি যানবাহনগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে যুক্ত করা হয়নি। সোমবার বিকেল পর্যন্ত ডিএসসিসির নগর ভবনের পেছনে সারিবদ্ধভাবে এসব যানবাহনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ডিএসসিসির বর্জ্য শাখা জানায়, প্রাথমিকভাবে এসব যানবাহন চালানোর উপযোগী কি না তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে আধুনিক এসব যান ব্যবহারের জন্য চালক ও সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। সূত্র আরও জানায়, এসব গাড়ির চালক কারা হবেন সেজন্য পরিবহন শাখার মহাব্যবস্থাপককে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপরদিকে ওয়ার্কশপ কাম ট্রেনিং সেন্টারে কাজ করতে ও এসব গাড়ি পরিচালনা তথা অপারেটিংয়ের জন্য জাইকার পক্ষ থেকে চালকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করার কাজ চলছে। এছাড়া কোন অঞ্চলে কতটি বর্জ্যরে গাড়ি প্রয়োজন তা নির্ধারণে ডিএসসিসির সচিব প্রধান করে ৫টি অঞ্চলের চাহিদা প্রদান করে পরে তা ভাগ করে দেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে আগামী একমাসের মধ্যেই এসব যানবাহন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অপর একটি সূত্র জানায়, কোন অঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী কতগুলো গাড়ি প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের পরই কেবল এসব গাড়ি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহার করা হবে। ডিএসসিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় ৪ মাস আগে এসব গাড়ি আনা হলেও অতি প্রয়োজনীয়তা থাকা স্বত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে এসব গাড়ি ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে না। অন্যান্য প্রকল্পের গাড়ি ক্রয়ের পরপরই তা ব্যবহারের জন্য দিয়ে দেয়া হয়। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ছোট বড় প্রায় ৩ শতাধিক যানবাহন রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ বছর থেকে ৩০ বছরের পুরনো ও অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী গাড়িও রয়েছে প্রায় ৮০টি। এর মধ্যে কিছু গাড়ি এখনই ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়ে ফেললেও প্রয়োজনীয় হওয়ায় এসব গাড়ি কোনক্রমে মেরামত করেই জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। এসব গাড়ি মাঝে মাঝে রাস্তায় বন্ধ হয়ে যায় বলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে তিন শতাধিক গাড়ি থাকলেও ভবিষ্যত চাহিদা অনুযায়ী ও রাজধানীবাসীর উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া বর্জ্যরে সুব্যবস্থাপনায় তা অনেক কম বলে জানা গেছে। এছাড়া লোকচক্ষুর অন্তরালে রেখে রাতের বেলায় ময়লা আবর্জনার যানবাহন পরিচালনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা থাকলেও প্রকাশ্যে দিনের বেলায় অতি পুরনো ভাঙ্গাচোরা এসব যানবাহনকে ময়লা পরিবহনের কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়। যা দৃষ্টিকটু বটে ও রাস্তায় প্রতিনিয়তই দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রক্রিউরমেন্ট অব ইকুইপমেন্ট ফর সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় এসব যানবাহন ক্রয় করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের যৌথ অর্থায়নের এই প্রকল্পটি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ মোট ৩টি সিটি কর্পোরেশনের সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি প্রথমবারের মতো বাস্তবায়নের সময় ডিএসসিসি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে জন্য ৬২টি ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্য ৫০টি মোট ১শ’ ১২টি যানবাহন প্রদান করে। তখন ২ সিটিকে যুক্ত করলেও পরবর্তীতে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চলমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে সরকারের সঙ্গে এমওইউ চুক্তির মাধ্যমে চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে যুক্ত করা হয়।
×