স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে ক্যাম্পাসে। অভিযোগ, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এবার খোদ বিভাগীয় চেয়ারম্যানসহ একই বিভাগের সহকর্মীরা। অভিযুক্ত অধ্যাপকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বুধবার অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে সাময়িকভাবে বরখাস্তসহ ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান উপাচার্য। দায়িত্বে অবহেলার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোর ড. জাহিদুল করিমকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর আগে বুধবার সকালে শিক্ষক নেতৃবৃন্দসহ অভিযোগকারীরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। উপাচার্য বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক নেতৃবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, এটি অপপ্রচার ছাড়া কিছুই নয়।
তিনি বলেন, আসল কথা হচ্ছে থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের প্রথম ব্যাচের এমএ মৌখিক পরীক্ষায় ৯ শিক্ষার্থীর ফেল নিয়ে মঙ্গলবার বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনাকালে এর প্রতিবাদ করার জেরে এই ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে। যদি তিনি কাউকে যৌন হয়রানি করে থাকেন তাহলে এর আগে কেন অভিযোগ করা হয়নি-প্রশ্ন অধ্যাপক রুহুল আমিনের। ২০১১ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত জামালপুর জেলার বাসিন্দা অধ্যাপক আমিন।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইসমত আরা ভুঁইয়া ইলা, সহকারী অধ্যাপক নীলা সাহা ও নুসরাত শারমিন এই ৩ শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করার পর জানাজানি হয় সহকর্মীদের যৌন হয়রানির কথা। অভিযোগকারী শিক্ষকরা জানান, সহকর্মী মোহাম্মদ রুহুল আমিন দীর্ঘদিন যাবত নারী শিক্ষকদের গায়ে হাত দেয়া থেকে শুরু করে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। নানা ছলছুঁতোয় সহকর্মীদের চুলে, গালে ও মাথায় অশালীনভাবে হাত চালাতেন। তার আচরণ ও চোখের চাহনিও ছিল অশোভন। এ নিয়ে বিব্রত সহকর্মীরা এর আগেও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উর রহমানের কাছে নালিশ করেছিলেন। কিন্তু কোন প্রতিকার মেলেনি। সর্বশেষ মঙ্গলবার অফিস কক্ষে শিক্ষক রুহুল আমিনের এমন আচরণে হতভম্ব ও হতবাক খোদ বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলা।
সহকর্মী একজন শিক্ষকের এমন অশালীন আচরণে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ হয়রানির শিকার শিক্ষকরা জানান, এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। শিক্ষকের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ ক্যাম্পাসের শিক্ষকসমাজসহ শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে সমাবেশ করে অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।