ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাশেদ হত্যা ॥ যুবলীগ নেতা সোহেলসহ ৫ জনকে খুঁজছে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ জুলাই ২০১৮

রাশেদ হত্যা ॥ যুবলীগ নেতা সোহেলসহ ৫ জনকে খুঁজছে পুলিশ

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর মহাখালীতে যুবলীগ কর্মী কাজী রাশেদ (৩৭) হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে যুবলীগ নেতা ইউসুফ সরদার ওরফে সুন্দর সোহেলসহ ৫ জনকে খুঁজছে পুলিশ। এদিকে যে স্থানে লাশ রাখা হয়েছিল, সেই স্থানে আশপাশে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চার যুবককে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে তিনদিনেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গলিপথ দিয়ে যে চার ব্যক্তি কাজী রাশেদের লাশ যখন মূল সড়ক মুখে ফেলে রেখে যায়। তখন তাদের হাত কাপড় বা পলিথিন জাতীয় কিছু দিয়ে মোড়ানো ছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। পুলিশের ধারণা, খুনিরা হাতের ছাপ এড়ানোর জন্য হাতে পলিথিন মুড়িয়ে নিয়েছিল। রবিবার ভোরে বনানীর মহাখালী জিপি-গ/৩৩/১ নম্বর বাড়ির পেছনের গলি থেকে গুলিবিদ্ধ যুবলীগ কর্মী কাজী রাশেদের লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। নিহত কাজী রাশেদ বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ইউসুফ সরদার সোহেল ওরফে সুন্দর সোহেলের দেহরক্ষী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। এ ঘটনার নিহতের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে ইউসুফ সরদার ও তার সহযোগীদের আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেছেন। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ইউসুফ বনানী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজী রাশেদ ইউসুফের সঙ্গে ছায়ার মতো ছিলেন। হুমকি ধমকির মুখেও রাশেদ তার বস্ ইউসুফকে ছাড়েনি। পুলিশ জানায়, ইউসুফের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। রাশেদসহ বেশ কয়েকজন তার সহযোগী হিসেবে কাজ করত। চাঁদাবাজির জের ধরে ইউসুফ সরদার ওরফে সুন্দর সোহেলই রাশেদকে খুন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। নিহত কাজী রাশেদের বাবা, ভাই ও স্ত্রীর অভিযোগ, এই হত্যাকাণ্ডে যুবলীগ নেতা সোহেল ও তার সহযোগীরা জড়িত। নিহত রাশেদের বড় বোন বাবলী আক্তার জানান, আমার ভাই সারাদিন সোহেলের সঙ্গে চলত। রাশেদ বাড়িতে থাকলে তাকে ফোন দিয়ে পাগল বানিয়ে ফেলত সোহেল। বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যেত। বাবলী আক্তার আরও জানান, শনিবার দুপুরে ভাত খেয়ে ভাই রাশেদ বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর রবিবার ভোরে রাস্তার ভাই রাশেদের লাশ পড়ে থাকতে দেখি। সোহেলের অফিসের কাছেই তার লাশ পড়েছিল। ওই ঘটনার পর সোহেল ও তার সহযোগীরা কেউ এলাকায় নেই। কেউ একটা ফোন দিয়েও খোঁজ নেয়নি। তাদের অফিসও তালা দেয়া। নিহত রাশেদের বোন বাবলী জানান, সোহেলসহ তার সহযোগীরা অফিসে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কেন? এতেই স্পষ্ট হয় তারা সবাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তিনি অভিযোগ করেন, এই খুনের ঘটনায় সোহেলের সঙ্গে তার সহযোগী সাজু, দিপু, সাগরসহ আরও অনেকে জড়িত। আমি ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। বাবলী আক্তার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, এই সোহেল আমার ভাইকে বাসা থেকে ডেকে নিত। একটু সময়ের জন্যও তাকে বাসায় থাকতে দিত না। তবে হত্যার কারণ তিনি জানাতে পারেনি। তিনি বলেন, এর আগেও রাশেদকে কয়েকবার মারধর করেছে সোহেল। ছোট বিষয় নিয়েও মারত। তবে রাশেদ ভয়ে কিছু বলত না। সোহেলের সঙ্গে চলাফেরা আমাদের পরিবারের কেউ পছন্দ করত না। কিন্তু ওদের ছেড়ে আসতে চাইলে সোহেল রাশেদকে হুমকি দিত। সুন্দর সোহেল হিসেবে পরিচিত বনানী যুবলীগের আহ্বায়ক একটি অনলাইন পত্রিকার প্রকাশক। রেইনবো নিউজ ২৪ ডটকম নামের অনলাইন পত্রিকার অফিস মহাখালীর স্কুল রোডের জিপি গ-৩৩/১ বাড়ির তৃতীয় তলায়। সেখানেই সোহেল তার অনুসারী ও বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিত। তবে ঘটনার পর তার অফিসটি তালাবদ্ধ রয়েছে। নিহতের মা রাবেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, রাশেদের বাবা আবুল হোসেন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। রাশেদ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এরপর থেকে তিনি ইউসুফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ইউসুফের বাবাও সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালাত। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় রাশেদ ও ইউসুফ দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা দেশে ফেরে। এরপর থেকেই মূলত ইউসুফের দেহরক্ষী, ডান হাত হিসেবে কাজ করছিল রাশেদ। প্রতি মাসে কিছু টাকা রাশেদকে দিত ইউসুফ। রাশেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, ইউসুফের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল রাশেদ। ইউসুফ বাসা থেকে বের হয়ে নিজের কার্যালয়ে এসে রাশেদকে না পেলেই ফোন করত। নিহত রাশেদের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে সোহেলের মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ যাচাই বাছাই করছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও মামলাটি ছায়াতদন্ত শুরু করেছে। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলী বলেন, আমরা সবকিছু বিবেচনায় রেখেই তদন্ত করছি। তবে এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।
×