ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্রজের চিকিৎসার্থে মাহিদুলের আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘নন্দিত নিবেদন’

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৭ জুলাই ২০১৮

  অগ্রজের চিকিৎসার্থে মাহিদুলের আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘নন্দিত নিবেদন’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমিও মায়ের কোলে চড়ে সেই ধোঁয়া দেখছিলাম/সবাই আতঙ্কে ‘রায়ট লাগুছে, রায়ট লাগছে’, বলে ছোটাছুটি করছিল/এবং তার ক’দিন পরই সদ্য-বিবাহিত দাদা-বৌদির সঙ্গে/আমাকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল/আমি ছেড়ে এসেছিলাম আমার মাকে, আমার বাবাকে/ছেড়ে এসেছিলাম আমাদের সেই বুড়ো বটগাছ/টিনের চালওয়ালা গোবরলেপা বেড়ার ঘর...। এভাবেই কবিতা কথনে প্রতিধ্বনিত হলো ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত রাষ্ট্রচ্যুত এক নাগরিকের বেদনা। দেশভাগের নির্মমতার সাক্ষ্যবহ কবিতাটির শিরোনাম ছিল ‘মাতৃভূমির জন্য’। সৃজন সেন রচিত কবিতাটি পাঠ করলেন প্রখ্যাত আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম। সোমবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে হৃদয়ছোঁয়া এমন অনেক কবিতাপাঠ করেন এই বাচিকশিল্পী। এদিন অনুষ্ঠিত হলো নন্দিত নিবেদন শীর্ষক শিল্পীর একক আবৃত্তিসন্ধ্যা। শিল্পীর অগ্রজ ক্যান্সার আক্রান্ত ফখরুল ইসলামের চিকিৎসার্থে এই কবিতাপাঠের আসর অনুষ্ঠিত হয়। দর্শনীর বিনিময়ে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন স্বরচিত্র আবৃত্তিচর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র এবং আবৃত্তিমেলা। মাহিদুল ইসলাম জানান, তার বড় ভাই এস এম ফখরুল ইসলাম বর্তমানে ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সংস্কৃতিপ্রেমী এই আইনজীবীর চিকিৎসার অর্থ সংকুলনের জন্য তিনি কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন দুই বাংলার বরেণ্য কবিদের কবিতা। মাহিদুল ইসলাম পরিবেশনার শুরুতেই পাঠ করেন ‘মাতৃভূমির জন্য’ শীর্ষক কবিতাটি। এরপর কণ্ঠে তুলে নেন কবীর চৌধুরী অনূদিত কাহ্লিল জিবরানের কবিতা ‘ভালোবাসা বিষয়ে’।। একে একে পাঠ করেন শান্তি লাহেড়ীর কবিতা ‘গন্তব্য’, জীবনানন্দ দাশের ‘হাওয়ার রাত’, নির্মলেন্দু গুণের ‘যাত্রাভঙ্গ’ ও ‘তোমার চোখ এত লাল কেন’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পায়ে চলার পথ’ ও ‘বোঝাপড়া’, সব্যসাচী দেবের ‘চন্ডালিকা’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘একদা একটি দেশ ছিল’, ‘নিজেকে ঠিক তোমার জন্য’, ‘আমার পরিচয়’ ও ‘মধুসূদনরূপে অমলেন্দু বিশ্বাসকে দেখে’, দাউদ হায়দারের ‘সেই কথা বলা হল না’, জসিমউদ্্দীনের ‘প্রতিদান’, শামসুর রাহমানের ‘অভিশাপ দিচ্ছি’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কবির মৃত্যু’, ভাস্কর চৌধুরীর ‘আমার বন্ধু নিরঞ্জন’, সুবোধ সরকারের ‘শাড়ী’ ও ‘কাল্লু’, জয় গোস্বামীর ‘পাঁচালি : দম্পতিকথা’, সৃজন সেনের ‘থানা গারদ থেকে’ এবং জয়দেব বসুর ‘ভারত এক খোঁজ’। মাহিদুল ইসলাম আবৃত্তি করেন সুভাষ মুখোপাধ্যায় অনূদিত নাজিম হিকমাতের ‘জেলখানার চিঠি’। সবশেষে পাঠ করেন কাজী নজরুল ইসলামের ‘যদি আর বাঁশি না বাজে’। মাহিদুল ইসলামের কবিতাপাঠের ফাঁকে ফাঁকে সংক্ষিপ্ত কথন এবং তাঁর সঙ্গে যুগলবন্দী আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহ্্কামউল্লাহ্্, প্রখ্যাত বাচিকশিল্পী শিমুল মুস্তাফা, গোলাম সারোয়ার, রূপা চক্রবর্তী প্রমুখ। গানের খেয়ার আয়োজনে রবীন্দ্র ও নজরুলজয়ন্তী ॥ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনে ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী’ পালন করলো সাংস্কৃতিক সংগঠন গানের খেয়া। সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘তোমারে করি আহ্বান’ শিরোনামে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। যার শুরুতেই ছিল আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি স্বপন কুমার দাস। আলোচনা শেষে শুরু হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। যাতে স্বপন কুমার দাস পরিবেশন করেন ‘আজ মধুরও বাঁশরী বাঁজে ও ফুল ফুটিয়ে গেলে চলে’ শিরোনামের দুটি নজরুলগীতি। শিল্পী অপর্ণা খান পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘এসো হে জ্বেলে দিয়ে যাও’ এবং নজরুলগীতি ‘খেলিছে জলদেবী’ শিরোনামের দুটি গান। সেলিনা আফরোজ পরিবেশন করেন নজরুলের ‘খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে এবং জাগো অনশনে বন্দী’ শিরোনামের দুটি গান। এছাড়াও দীপ্তি চৌধুরী পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথের ‘নিশিত রাতের বাদল ধারায়’ ও নজরুলের ‘চোখের আলোয় দেখেছিলাম’, রেজাউল করিম হিটলু গেয়ে শোনান রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী ও একটুকু ছোঁয়া লাগে’ এবং মোসলেমা আক্তার গেয়ে শোনান নজরুলের ‘যাক না নিশি গানে গানে’ শীরোনামের গানসহ আরও একটি গান।
×