ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিমন্ত্রী শোনালেন এই সাফল্যের নেপথ্য কথা

বাংলাদেশ এখন দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৬ জুলাই ২০১৮

বাংলাদেশ এখন দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান সরকারের বিশেষ নজরদারিতে কৃষির উন্নয়ন হয়েছে। ফলে কৃষির সাফল্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে অনন্য মর্যাদায় স্থান দিয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এসব সম্ভব হয়েছে কৃষকরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষি উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই দেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। কৃষির উন্নতিকল্পে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন করেছে বলেও জানান মন্ত্রী। রবিবার রাজধানীর গাবতলীতে বিএডিসি আয়োজিত বীজআলু হিমাগার, সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি ও গ্রিন হাউসের উদ্বোধন ও বিএডিসির বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষির উন্নয়নে নানা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে। বিনামূল্য ও স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ, সহজ শর্তে কৃষিঋণের সুযোগ বৃদ্ধি, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে শতকরা ৫০ থেকে ৭০ ভাগ উন্নয়ন সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে কৃষকের কাছে কৃষি যন্ত্রপাতি অত্যন্ত সুলভ মূল্যে সহজলভ্য করা, ই-কৃষির সম্প্রসারণ, বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণায় সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানসহ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই দেশ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে এক কোটি মে.টনের অধিক খাবার আলু উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে প্রায় ৬ লাখ মে.টন বীজআলুর চাহিদা রয়েছে। বিএডিসি চাহিদার প্রায় ৬ শতাংশ বীজআলু চাষিদের মাঝে সরবরাহ করছে। কৃষক বিএডিসির সরবরাহকৃত বীজ পরবর্তী তিন উৎপাদন মৌসুমে পুনরায় বীজ হিসেবে বর্ধন ও ব্যবহার করে থাকে। বীজআলু উৎপাদনে বৃদ্ধির হার ১০ গুণ বিবেচনা করলে দেখা যায় বিএডিসি প্রতি বছর চাহিদার ৬০ ভাগ মানসম্পন্ন বীজ প্রতিস্থাপন করছে। মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমাদের ধান, আলু, শাকসবজি উৎপাদনে বিরাট সফলতা অর্জিত হয়েছে এবং ভুট্টা, ডাল, তেল ও মসলায় উল্লেখযোগ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, শাকসবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় ও কাঁচা পাট রফতানিতে প্রথম, আলু ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, আম উৎপাদনে সপ্তম। দক্ষিণাঞ্চল, হাওড়-বাঁওড়ে কৃষির উন্নয়নে সরকার কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিভিন্ন ফসলের জলবায়ু সহনশীল জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। জৈব প্রযুক্তি গবেষণায় সরকারের ইতিবাচক নীতির ফলস্বরূপ বিটি বেগুন উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ মাইলফলক তৈরি করেছে। পাটের জিনোম রহস্য আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এর ধারাবাহিকতায় কাক্সিক্ষত পাটের জাত তৈরির পথ সুগম হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। ’৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিলের লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান সরকার রূপকল্প-’৪১ বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় সদা সচেষ্ট। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সরকার বদ্ধপরিকর। জানা গেছে, আগে বিদেশ হতে বিএডিসি বেসিক বীজআলু আমদানি করত। তা প্রতি কেজি ১৬০ টাকা মূল্য দিতে হতো। বর্তমানে বিএডিসি বেসিক বীজের চেয়ে উন্নত মানের ব্রিডার/প্রি-ফাউন্ডেশন বীজআলু টিস্যু কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন করছে যার উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি মাত্র ৮০ টাকা। শুধু তাই নয়, মানসম্পন্ন বীজআলু কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করায় দেশের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১২ মে.টন হতে ২০ মে.টনে উন্নীত হয়েছে। কৃষক ব্যবহৃত বীজ মানসম্পন্ন হলে দেশের ফলন হেক্টর প্রতি ২৫ মে.টনে উন্নীত করা সম্ভব। ফলে ৫ লাখ হেক্টর জমির পরিবর্তে ৪ লাখ হেক্টর জমিতেই ১ কোটি মে.টন আলু উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে করে ১ লাখ হেক্টর জমি অন্য ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও বিএডিসি এ প্রকল্পের মাধ্যমে সিড হেলথ্ ও মলিকুলার ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছে। সিড হেলথ্ ল্যাবে আলু ভাইরাস রোগসহ অন্য ফসলের রোগব্যাধি শনাক্তকরণ ও তা দমনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যাবে এবং বীজের মান নিশ্চিত হয়ে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা যাবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএডিসির চেয়ারম্যান মোঃ নাসিরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্সহ উর্ধতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে কৃষিমন্ত্রী বিএডিসি প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করেন। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিএডিসির ৩০ হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা ৪৫ হাজার ৭শ’ মে.টন। এরমধ্যে মিরপুর হিমাগারে ২ হাজার মে.টন বীজআলু সংরক্ষণের সক্ষমতা আছে। আগামী ২০২০-২১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মে.টন বীজআলু সংরক্ষণের সুবিধা তৈরি হবে এবং যা জাতীয় চাহিদার ১০ ভাগ। বিএডিসির এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের মেয়াদকালে তিনটি টিস্যু কালচার স্থাপন করেছে। উক্ত ল্যাবরেটরিতে টিস্যু কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে প্লান্টলেট এবং তা থেকে মিনি টিউবার, ব্রিডার, ভিত্তি ও প্রত্যায়িত বীজআলু উৎপাদন করে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করছে। এ প্রক্রিয়ায় বিএডিসি বীজআলু আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০৯-১০ হতে এ যাবত ৩০ লাখ প্লান্টলেট উৎপাদন করেছে এবং তা থেকে মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদন ও সরবরাহ করায় বিএডিসি গত তিন বছর যাবত বীজআলু আমদানি শূন্যের কোটায় পৌঁছে দিয়েছে।
×