ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

হায়াৎ মামুদের জন্মদিনে আনন্দ আয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৫ জুলাই ২০১৮

হায়াৎ মামুদের জন্মদিনে আনন্দ আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুমাত্রিক পরিচয়ের বরেণ্য এক ব্যক্তিত্ব হায়াৎ মামুদ। গত ২ জুলাই ৮০ বছরে পদার্পণ করেন এই সাহিত্যিক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ। শনিবার বিকেলে আনন্দ আয়োজনে উদ্যাপিত হলো তার আশিতম জন্মদিন। ফুলেল শুভেচ্ছার সঙ্গে বিশিষ্টজনের কথন, সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা এবং কবিতা আবৃত্তিতে সাজানো হয় আয়োজন। বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হায়াৎ মামুদ জন্মোৎসব উদ্যাপন পরিষদ । অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রদর্শিত হয় হায়াৎ মামুদের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র। এরপর স্পন্দনের নৃত্যশিল্পীরা ‘এ দিন আজি কোন ঘরে গোখুলে দিলো দ্বার’ গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করেন। নাচের তালে তালে শিল্পীরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে হায়াৎ মামুদকে বরণ করে মঞ্চে নিয়ে আসেন। জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। শংসাপত্র পাঠ করবেন মফিদুল হক। হায়াৎ মামুদকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, প্রাবন্ধিক ও গবেষক সরকার আব্দুল মান্নান, জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন, পুঁথিনিলয়ের স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে হায়াৎ মামুদের জন্মদিনের স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুভূতি ব্যক্ত করে হায়াৎ মামুদ বলেন, আমার এতটুকু আত্মশ্লাঘা নেই। লেখক হিসেবে যখন শুনি যে আমার কোন লেখা কারো পছন্দ হয়নি তখন দুঃখবোধ হয়; কিন্তু কখন রুষ্ট হইনি। তখন ভাবি, দুর্বলতার কারণে, লেখনীর কারণে পাঠকের ভাল লাগেনি। আমি সারা জীবন আমার মনের কথা বলার জন্য লিখে গেছি। পাঠকের স্বাধীনতা রয়েছে, সে তা পছন্দ করবে কি করবে না। নিজের শিক্ষকতা জীবন বিষয়ে বলেন, মাস্টার হিসেবে আমি যেটা করেছি, তা হলো আমি ছাত্রছাত্রীদের পথ দেখিয়ে গেছি। আমি আর কিছু করিনি। সব শেষে সবার দোয়া চেয়ে বলেন, আমি আমৃত্যু সত্যনিষ্ঠ হয়ে বাঁচতে চাই। আনিসুজ্জামান বলেন, হায়াৎ মামুদের গুণগ্রাহিতা শুধু সাহিত্য ক্ষেত্রের জন্য নয়, সংস্কৃতির সব ক্ষেত্রেই রয়েছে। তার সমাজভাবনা, রাজনীতি ভাবনা, বিশ্বভাবনার কথা যখন বলি তখন তার মতো লোক খুব বেশি দেখি না। বক্তব্যে হায়াৎ মামুদের গে-ারিয়ার বাড়ির আড্ডামুখর দিনগুলোর কথা স্মরণ করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, পুরাতন ঢাকার যেকজন অধিবাসী এখনও ‘পাড়া সংস্কৃতি’ টিকিয়ে রেখেছেন, তদের মধ্যে হায়াৎ মামুদকে অন্যতম। হায়াৎ মামুদের মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, অসাধারণ মানবতাবাদী ও সৃজনশীল মানুষটি আমাদের অনুসরণীয়। তিনি একজন বিবেকবান ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। রামেন্দু মজুমদার বলেন, আমি তাকে বরাবরই মহর্ষি বলে সম্বোধন করি। একজন মহর্ষির মতোই জীবনযাপন করে চলেছেন তিনি। কোন বিষয়ে তার কোন উদ্বেগ নেই। নিজের কাজ তিনি আপনমনে করে যাচ্ছেন। কঠিন কথা তিনি বড় সহজ করে লিখে যান। এগুলো কেবল তাদের মতো মানুষের দ্বারাই সম্ভব। আলোচনা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সম্মেলক কণ্ঠে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী ‘তুমি নির্মল কর মঙ্গল করো’ এবং সুরতীর্থের শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘যাবার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যাও’ শিরোনামের গান। একক কণ্ঠে আবৃত্তি করেন হাসান আরিফ ও নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি। সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের জাতীয় সম্মেলন ॥ শনিবার সকালে জাতীয় সঙ্গীতের সুরে বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের সূচনা হয়। দিনভর নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যায় নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পুনরায় তপন মাহমুদ সভাপতি ও বিশ্বজিৎ রায় সাধারণ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে ৩১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জঙ্গীবাদ,সন্ত্রাস যেমন সমাজ থেকে দূূর হয়নি তেমনি দুর্নীতিমুক্ত সমাজও এখন পর্যন্ত গঠন করা যায়নি। এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে সঙ্গীতের সুর ও বাণী দিয়ে মানুষকে অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য ঝুনা চৌধুরী, পথনাটক পরিষদের সহসভাপতি সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি শিল্পী তপন মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত রায়। পরে তিনি সাধারণ সম্পাদকের বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠ করেন। রামেন্দু মজুমদার বলেন, দেশ বৈষয়িক দিক দিয়ে উন্নতি করেছে। কিন্তু নৈতিক দিক দিয়ে মানুষের অবক্ষয় হয়েছে। সংস্কৃতিই একটি দেশের চালিকাশক্তি হওয়া উচিত। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন নেই। তিনি বলেন, আন্দোলন করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু কাউকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। কোটা আন্দোলনে যুক্ত এক ছাত্রের মা এসে পথে পথে ছেলের মুক্তির জন্য ঘুরছে। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ছাত্রের হাড় ভেঙ্গে দেয়। কিন্তু তার কোন বিচার হয় না। এ পরিস্থিতি কার কাম্য নয়। এর জন্য সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ প্রয়োজন। মানুষের মাঝে সাংস্কৃতিক বোধ না থাকলে শুধু উন্নয়ন দিয়ে দেশের ভাল হয় না। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, সংস্কৃতির মাধ্যমে অপশক্তি রুখে দেবার কথা বলে সরকার। সেটা করতে হলে প্রান্তিক পর্যায় থেকেই জাগরণটা শুরু করতে হবে। কিন্তু সরকার সংস্কৃতি খাতকে যে স্বল্প বরাদ্দ দেয় তা দিয়ে এ কাজ সম্ভব নয়। মূল বাজাটের এক শতাংশ এ খাতে বরাদ্দের দাবি জানান তিনি। বিশ^জিৎ রায় বলেন, বাংলাদেশের হাজার বছরের যে ঐতিহ্য নিয়ে আমরা গর্ব করি। তার সিংহভাগই সঙ্গীত। মানবিক অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা গড়ে তুলেছে যে দর্শন তার বাহনও এ সঙ্গীত। বাংলাদেশের সঙ্কটে-সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে সঙ্গীত আমাদের প্রেরণা দিয়েছে। সেই সঙ্গীতকে অবলম্বন করেই আমরা সামনের পথ চলতে চাই। তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে পরিষদের ১০টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৯টি জেলার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এগুলো হলো রংপুর, রাজশাহী, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও ঢাকা। দর্শনীর বিনিময়ে এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী ॥ প্রথমবারের মতো দর্শনীর বিনিময়ে এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনীর আয়োজন করল শিল্পকলা একাডেমি। চীন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পকলা একাডেমির এ্যাক্রোবেটিক দল শনিবার সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে নিজেদের কসরত প্রদর্শন করে। আয়োজকরা জানান, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও চীন সরকারের সহযোগিতায় এবং শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় দশ এ্যাক্রোবেটিক শিল্পী এক বছরের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে একাডেমির একটি বড়দের দল এবং একটি ছোটদের দল সারাদেশে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আয়োজনে এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করছে। মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ৩৫ বছর পূর্তির আয়োজন ॥ পথচলার ৩৫ বছর পূর্ণ করে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়। এ উপলক্ষে শনিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পুনর্মিলনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কোরিওগ্রাফি, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সম্মাননা প্রদান ও আলোচনায় সাজানো ছিল অনুষ্ঠান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সংস্কৃতিজন গোলাম কুদ্দুছ এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিম-লীর সদস্য নাট্যজন লাকী এনাম। দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কবির আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। সন্ধ্যায় মহাকালের ‘নীলাখ্যান’ নাটকের ৪১তম মঞ্চায়ন হয়। কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাপুড়ে’ আশ্রয়ে আনন জামান রচিত প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন ইউসুফ হাসান অর্ক । নাটকের অভিনয় শিল্পীরা হলেন মনামী ইসলাম কনক, কোনাল আলী সাথী, শাহিনুর প্রিতী, সুরেলা নাজিম, সম্রাট, মানিক চন্দ্র দাশ, সুমাইয়া তাইয়ুম নিশা, জাহিদ কামাল চৌধুরী দিপু, আমিনুল আশরাফ, শিবলী সরকার, শাহরিয়ার হোসেন পলিন, তারেকেশ্বর তারোক, স্বপ্নিল, মোঃ আহাদ, রাসেল আহমেদ, রাজিব হোসেন, ইকবাল চৌধুরী, মোঃ শাহনেওয়াজ ও মীর জাহিদ হাসান।
×