ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএনসিসির নতুন উদ্যোগ

‘রোড সুইপারে’ ৬ ঘণ্টায় ১৮ কিমি আবর্জনা মুক্ত

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১৫ জুলাই ২০১৮

 ‘রোড সুইপারে’ ৬ ঘণ্টায় ১৮ কিমি আবর্জনা মুক্ত

মশিউর রহমান খান ॥ দৈনিক মাত্র ৬ ঘণ্টায় গড়ে আঠারো কিলোমিটার রাস্তা নিবিড়ভাবে পরিষ্কার করছে রাস্তা ঝাড়ু দেয়ার আধুনিক পদ্ধতির মেশিন ‘রোড সুইপার’। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) পরিচ্ছন্নকর্মী দিয়ে যেসব রাস্তায় শলার ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করা যায় না এই মেশিনটি দিয়ে সেসব স্থান অনায়াসেই পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের মতো রাস্তা পরিষ্কারের এ আধুনিক যন্ত্রটি প্রতিদিন ২টি এলাকা থেকে গড়ে ৩ হাজার ৮শ ৬৩ কিলোগ্রাম বর্জ্য অপসারণ করতে পারছে। বর্তমান পদ্ধতিতে এই পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ করতে দৈনিক ৮৬ জন পরিচ্ছন্নকর্মীর প্রয়োজন হয়। এ মেশিনটি গড়ে ঘণ্টায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা পরিষ্কার করতে পারছে। রাস্তার ধুলাবালি, আবর্জনা পরিষ্কার করতে নামানো অত্যাধুনিক এই ‘রোড সুইপার’টি বেশ ভালই কাজ করতে পারছে। ধুলাবালি থেকে শুরু করে কঠিন বর্জ্য নিমিষেই পরিষ্কার করতে সক্ষম হচ্ছে এই যন্ত্রটি। প্রযুক্তি নির্ভর এই রোড সুইপারের মাধ্যমে একদিকে ডিএনসিসির যেমন অর্থসাশ্রয় হচ্ছে অন্যদিকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর তুলনায় অনেক কম সময়ে অধিক পরিমাণ রাস্তা হচ্ছে ঝকঝকে। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, রাস্তায় ধুলার পরিমাণ বেশি না থাকলে ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা এই মেশিনটি দিয়েই পরিষ্কার করা সম্ভব। এ মেশিন দিয়ে রাস্তার সকল প্রকার আবর্জনা পরিষ্কার করার ফলে রাস্তা পরিষ্কারে সময় সাশ্রয়ের পাশপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমেই বেশ গতির সঞ্চার করেছে। এছাড়া রাস্তা পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দুর্ঘটনার শিকার হতেন, রোড সুইপারের কল্যাণে সেটি থেকেও রক্ষা পেয়েছেন কর্মীরা। জানা গেছে, বর্তমানে প্রাথমিকভাবে মানিক মিয়া এভিনিউ, খেজুরবাগান, ক্রিসেন্ট লেক, বিজয় সরণি, ইন্দিরা রোড, গণভবন, সংসদ ভবনের আশপাশে পরিচ্ছন্নতার কাজে এই মেশিনটি ব্যবহৃত হচ্ছে। ডিএনসিসির একমাত্র রোড সুইপারটি দুটি রুটে প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত রোড সুইপ করছে। যাতে দিনে গড়ে রাস্তা পরিষ্কার হচ্ছে ১৮ কিলোমিটার। কোন কোন ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার রাস্তাও পরিষ্কার করা হচ্ছে। ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়মিতভাবে এই মেশিনটি কাজে লাগানো গেলে ভবিষ্যতে পুরো ডিএনসিসি এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সিংহভাগ এ যন্ত্রের মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। চার কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিটেনের বিখ্যাত জনস্টন কোম্পানির উন্নতমানের এ রোড সুইপারটির চ্যাসিস জাপানের হিনো কোম্পানির তৈরি। সেবা সার্ভিস প্রদানকারী কোম্পানি পরবর্তী তিন বছরের গ্যারান্টি প্রদান করেছে। এর মধ্যে কোন যন্ত্র নষ্ট হলে তা বিনামূল্যে প্রদান করবে উক্ত কোম্পানি। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, যন্ত্রটি কোনার পর তা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য থাইল্যান্ডের একটি টেকনিক্যাল টিম ডিএনসিসির তিন জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। নিয়ম মেনে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে যন্ত্রটি দ্বারা কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত একটানা রোড পরিষ্কারের কাজ করা সম্ভব হবে। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, গত ৫ মার্চ রাজধানীর দুটি রুটে পরীক্ষামূলকভাবে রোড সুইপারটি নামানো হয়। চালুর পর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮৩ দিনে ৩শ ৯৩ ঘণ্টা রাস্তা সুইপ করে এক হাজার ২শ৭৯ কিলোমিটার রাস্তা পরিষ্কার করেছে যন্ত্রটি। এই সময় যন্ত্রটি দুটি রুট থেকে ৩ লাখ ২১ হাজার কিলোগ্রাম বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছে। অত্যাধুনিক রোড সুইপারটি বর্তমানে ঘণ্টায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার রাস্তা পরিষ্কার করছে। তবে ধুলার তীব্রতা কম থাকলে এর স্পিড ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা পরিষ্কার করা যায়। তবে ঢাকার বাস্তবতায় ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারের বেশি কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, যন্ত্রটি প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ৮শ ৬৩ কিলোগ্রাম বর্জ্য অপসারণ করছে। এই পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ করতে একদিন ৮৬ জন পরিচ্ছন্নকর্মীর প্রয়োজন হতো। এর ফলে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচছে। একইসঙ্গে অধিক পরিমাণ স্থান পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চেয়ে অনেক আগেই পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাস্তা পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দুর্ঘটনার শিকার হতেন, রোড সুইপারের কল্যাণে সেটি থেকেও রক্ষা পেয়েছেন কর্মীরা। আধুনিক প্রযুক্তির কাভার্ডভ্যানের মতো দেখতে এই রোড সুইপারটির ইঞ্জিন দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগে পথ মাড়ানো ও অন্যভাগে কাজ রাস্তা ঝাড়ু দেয়া। যন্ত্রটির সামনের দিকে দুটি সাকশন (শোষণ) পাইপ রয়েছে। প্রতিটি পাইপ একসঙ্গে দেড় ফুট ব্যাসের জায়গার ময়লা-আবর্জনা শুষে নিতে পারে। যন্ত্রটি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার ময়লা সাকশন পাইপের মাধ্যমে টেনে নিয়ে ওপরের গার্বেজ ট্যাঙ্কারে জমা হয়। আরেকটি ইঞ্জিনের মধ্যমে গাড়িটি ধীরে ধীরে চলার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার সব ময়লা-আবর্জনা শুষে ট্যাঙ্কে নিয়ে যাবে। ট্যাঙ্কটিতে ছয় টন বর্জ্য ধারণ করতে সক্ষম। সঙ্গে একটি পৃথক পানির ট্যাঙ্কও রয়েছে। প্রয়োজনে ট্যাঙ্ক থেকে পৃথক পাইপের মাধ্যমে রাস্তায় পানি ছিটিয়েও রাস্তা পরিষ্কার করা যাবে। বর্তমানে প্রতিদিন পাচ থেকে ছয় ঘণ্টা যন্ত্রটি চালানো হচ্ছে। তবে ডিএনসিসির সকল রাস্তা পরিষ্কার করতে আরও কম পক্ষে ২টি রোড সুইপার প্রয়োজন। এসব মেশিন দিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ সঠিকভাবে করতে পারলে ডিএনসিসির প্রায় সকল রাস্তা আবর্জনামুক্ত ধুলাবালিহীন রাখা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর আব্দুর রাজ্জাক জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীতে গুণগত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করা আমাদের অঙ্গীকার। বর্তমানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী দ্বারাই অধিকাংশ রাস্তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে উন্নত বিশ্বের ন্যায় আধুনিক পদ্ধতিতে কম সময়ে অধিক পরিমাণ রাস্তায় পড়ে থাকা ধুলাবালি ও ময়লা পরিষ্কার করতে ও সকল প্রকার আবর্জনা মুক্ত রাস্তা রাখতে এই রোড সুইপারটি প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হয়েছে। এটি পরিচালনার জন্য তিনজনকে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আধুনিক এ রোড সুইপারটি বর্তমানে অধিক পরিমাণ কাজ করতে পারছে। এটি দিয়ে দৈনিক গড়ে দৈনিক মাত্র ৬ ঘণ্টায় কমপক্ষে গড়ে আঠারো কিলোমিটার রাস্তা নিবিড়ভাবে পরিষ্কার করতে সক্ষম হচ্ছে। রাস্তায় ধুলাবালি কম থাকলে এটি দিয়ে ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা পরিষ্কার করা সম্ভব। শলার ঝাড়ু দিয়েও যেসব ময়লা পরিষ্কার করা যায় না, সেখানে এই রোড সুইপার অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।
×