ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্ত হচ্ছে শামুক ॥ প্রভাব পড়ছে কৃষি ভূমি ও মৎস্য সম্পদের ওপর

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৪ জুলাই ২০১৮

 বিলুপ্ত হচ্ছে শামুক ॥ প্রভাব  পড়ছে কৃষি ভূমি ও মৎস্য  সম্পদের  ওপর

সমুদ্র হক ॥ প্রবাদের শম্বুক গতির জলজ প্রাণী শামুক বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সরাসরি প্রভাব পড়েছে কৃষি ভূমি, মৎস্য সম্পদ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর। নদী ও বিল এলাকায় নির্বিচারে চলছে শামুক নিধন। বিশেষ করে দেশের বড় চলনবিলে শামুকের আশ্রম দিনে দিনে ধ্বংস হতে চলেছে। সোনালি শামুকসহ কয়েক প্রজাতির শামুক বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কৃষি ভূমি হারাচ্ছে উর্বরতা। পরিবেশ হারাচ্ছে স্বাভাবিক ভারসাম্য। ডাঙ্গা ও জলের প্রাণী শিকার, ধ্বংস, অসৎ উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করে বিক্রি, রফতানি ও পাচার আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এই আইনের প্রয়োগ চোখে পড়ে না। তবে ডাঙ্গার প্রাণী (বন্যপ্রাণী) বাঘ, হরিণ রক্ষায় বন বিভাগের তৎপরতা দেখা যায় কালেভদ্রে। জলজ প্রাণী শামুক জমির উর্বরতা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। শামুক প্রাকৃতিক ফিল্টার। শামুক দূষিত পানি পরিশোধিত (ফিল্টার) করে প্রাকৃতিকভাবে পানি দূষণমুক্ত রাখে। ঝিনুক পরিবেশের বিশেষ বন্ধু হিসেবে পরিচিত। শামুক ও ঝিনুক মারা যাওয়ার পর মাংস ও খোলস পচে জমির মাটিতে প্রাকৃতিকভাবেই ক্যালসিয়াম ফসফেট ও পটাশ তৈরি করে। এভাবে জমির উর্বরতা বাড়িয়ে ধান ও অন্য ফসলের গাছের শিকড় মজবুত করে ফলন বাড়ায়। বর্ষা মৌসুমে জীবিত শামুক আমন চারার উপকার করে। শামুক বর্ষায় আমন আবাদের উপকার করে। আবার মাছের অন্যতম খাদ্য শামুকের ডিম ও মাংশ। কৈ, শিং, মাগুর, টাকি, ল্যাটা, ট্যাংরা, পাবদা, শোল ও অন্যান্য মাছের পোনার একমাত্র খাদ্য শামুকের ডিম। শামুকের ডিম না পেলে মাছের পোনা বাঁচে না। যমুনা পাড়ের কয়েক মৎস্যজীবী বলেন, শামুকের অভাবে মিঠা পানির অনেক মাছের উৎপাদন কমে গিয়েছে। অধিকাংশ জলাভূমি বর্ষার শুরু ও শেষ সময়ের পরও কিছুটা সময় ডুবে থাকে। এসব জলাভূমি ও জলমগ্ন থাকা কৃষি ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় অনেক শামুক। নিরীহ এই জলজ প্রাণীকে সহজেই কুড়িয়ে নেয়া যায়। নিকট অতীতে এই শামুককে কেউ ধরত না, বিরক্ত করত না। খুব বেশি হলে কাঠি দিয়ে সরিয়ে দিত বা দূরে ছুড়ে দিত। গেল শতকের সত্তরের দশকের মধ্যভাগ থেকে শামুকসহ জলজ প্রাণীর ওপর খড়্গ নেমে এসেছে। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী শামুক নিধন শুরু করে। চলনবিলপাড়ের লোকজন জানায়, শামুক সংগ্রহ করে প্রতিজন প্রতিদিন গড়ে ৩শ’ টাকা রোজগার করছে। কেউ নৌকায় জঙ্গল তুলে দুই একদিন ডুবিয়ে রেখে তোলার পর মাছ ও শামুক সংগ্রহ করে। কেউ আবার কাদাপানি থেকে সংগ্রহ করে। অনেক ব্যবসায়ী চলনবিলপাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে শামুক সংগৃহীত শামুক কিনে নিয়ে ট্রাকে করে নিয়ে যায়। এক সূত্র জানায় চলনবিল থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩শ’ টন শামুক চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এভাবে জলজ প্রাণী কমে গিয়ে পরিবেশ ও কৃষির ক্ষতি করছে। কি পরিমাণ জলজ প্রাণী কমে যাচ্ছে তার কোন হিসাব কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। এই প্রাণীগুলো রক্ষার উদ্যোগ তো নেইই।
×