ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবিতে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বসানো হচ্ছে নিরাপত্তা চৌকি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১১ জুলাই ২০১৮

ঢাবিতে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বসানো হচ্ছে নিরাপত্তা চৌকি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহিরাগতদের অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বসানো হচ্ছে নিরাপত্তা চৌকি। চৌকিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্ব পালন করবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান এ ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, কোটা আন্দোলনের মতো স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন কিছু অশুভ শক্তির অনুপ্রবেশের ফলে নষ্ট হয়েছে। কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আমি জঙ্গী বলিনি। বলেছি ভিডিও বার্তায় উস্কানিমূলক বক্তব্যসহ তাদের কর্মকা- জঙ্গীদের সঙ্গে মিলে যায়। এদিকে বহিরাগতদের অবস্থান ও কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞাকে বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার চরম বিরোধী অভিহিত করে অবিলম্বে আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি। এর আগে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা প্রোক্টরের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগতদের’ অবস্থান, ঘোরাফেরা এবং কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, আবাসিক হল ও হোস্টেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন, চরমপন্থী ও উগ্র ভাবাদর্শ প্রচারে ও কর্মকা-ে কেউ সংশ্লিষ্ট থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে আদেশে বলা হয়, এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেয়া হবে। এরপর মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হবে। উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বাজারঘাটের জায়গা নয়। এটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জায়গা। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উপাদান এখানে সম্মিলন ঘটে। যেহেতু এটি গণতন্ত্রের সূতিকাগার এখানে সকল প্রকার কর্মসূচী পালিত হবে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিতর্ক, কবিতা, গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালিত হবে এ সকল কাজে এখানে সবাই আসবে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সাধারণ জীবন বিঘিœত হয় এমন বহিরাগতদের অযথা অবস্থান এখানে কাম্য নয়। এখানে বহু মানুষ এসে জায়গাটিতে নষ্ট করবে, এটি করতে দেয়া যায় না। বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আমরা কিছু নিরাপত্তা চৌকি বসাব-এমন মন্তব্য করে উপাচার্য বলেন, যাতে ভ্রাম্যমাণ মানুষ অন্য কোন গোষ্ঠী এখানে এসে হঠাৎ করে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে। কেউ এসে হঠাৎ করে মাইক দিয়ে আওয়াজ তুলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করবে এটি আমরা বরদাশত করব না। শিক্ষা-সাংস্কৃতিক কর্মকা-কে বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় স্বাগত জানায়। স্বাভাবিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটায় ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নষ্ট করে এমন বহিরাগতদের এখানে অবস্থান আমাদের কাম্য হতে পারে না। আমরা দেখেছি, অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গাড়ি প্রবেশ করে। এটা বন্ধ করা হবে। আমরা সড়ক ব্যবস্থাপনা করব। যেমন ফুলার রোডে দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল চালানো রোধে সড়ক গতিরোধক বসিয়েছি। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে তারা যেন নিরাপদ থাকে আমরা সেই চেষ্টা করব। নিরাপত্তা চৌকি মানে ক্যান্টনমেন্ট নয়, পুলিশ পোস্ট নয়, এখানে আমাদের সিকিউরিটি গার্ড থাকবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকটি যাতে বসতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, ক্লাস পরীক্ষায় বাধা দেয়া কোনক্রমেই শুভ পদক্ষেপ নয়। কয়েক মাস ধরে এ ধরনের কর্মকা- দেখতে পাচ্ছি। কেউ কেউ বাধা প্রদান করছে। সেগুলোকে আমরা কোনক্রমেই স্বাগত জানাই না। এটা একেবারেই নিরুৎসাহিত করি এবং বলি ওই ধরনের কর্মকা- থেকে তারা যেন ফিরে আসে। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন হয় এমন কোন বক্তব্য, আচরণ ও উস্কানি যেন কেউ না দেয়। কোটা আন্দোলনে অশুভ অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে উল্লেখ করে ড. আখতারুজ্জামান বলেন, কোটা আন্দোলন একটি স্বতঃর্স্ফুত আন্দোলন ছিল। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এতে অংশ নিয়েছে। আমরা নৈতিক সমর্থন দিয়েছি। সময়ের আবর্তে বিভিন্ন অপশক্তি ও অশুভশক্তি এতে ঢুকে পড়ল। এমন একটি অবস্থায় গেল যে এদের পরে গোপন জায়গা থেকে ভিডিও বার্তার মধ্য দিয়ে আন্দোলন করতে হলো। স্বতঃর্স্ফূত আন্দোলনকে দুষ্টচক্র নষ্ট করে ফেলল। কিছু অপশক্তি ও অশুভশক্তির অনুপ্রবেশের ফলে ভাল একটি আন্দোলন নস্যাৎ হয়ে গেল। ফারুকসহ তিনজন রিমান্ডে ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নাশকতা ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ করা দুই মামলায় সাধারণ ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানসহ তিনজনের দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। অপর দুজন হলেন, জসিম উদ্দিন ও মশিউর। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আব্দুল আল মাসুদ এই আদেশ দেন। মামলায় অপর এক আসামি তরিকুল ইসলামের পরীক্ষা থাকায় তিনি আদালতে হাজির হতে পারেননি। তাই তার রিমান্ড বিষয়ে শুনানির দিন ১৭ জুলাই ধার্য করেছে আদালত। এদিকে রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, শাহিদ রিজবি, জাহিদুর রহমান জাহিদ প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রিমান্ড বাতিলের বিরোধিতা করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক এ আদেশ দেন। নিষেধাজ্ঞা বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার চরম বিরোধী Ñওয়ার্কার্স পার্টি ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগতদের’ অবস্থান ও কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞাকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার চরম বিরোধী’ অভিহিত করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। মঙ্গলবার দলটির পলিটব্যুরোর এক বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি চরম দুঃখজনক। আন্দোলন-সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কোনো সময়েই এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এটা বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার চরম বিরোধী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য এবং তার ধারণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় বলে আমরা বিশ্বাস করি। আশা করি শীঘ্রই এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। সুুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপিপন্থী অংশের দাবি ॥ আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের ‘জঙ্গী’ বলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপিপন্থী অংশের নেতারা। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলেন। সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, অবিলম্বে উপাচার্যের পদত্যাগ করা উচিত। তাকে প্রমাণ করতে হবে যে ছাত্ররা জঙ্গী। জঙ্গী হিসেবে এখন কাউকে মেরে ফেলা হলে এর দায় ভিসিকে নিতে হবে। সভাপতি জয়নুল আবেদিন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে যখন সবাই যৌক্তিক আন্দোলন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের জঙ্গী আখ্যা দিয়ে তাদের জঙ্গী সংগঠনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কোটা আন্দোলনে জঙ্গী সম্পৃক্ততা আছেন কথা বলে উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার অধিকার সবার আছে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের ঢালাওভাবে জঙ্গী সম্পৃক্ততার কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পথ বন্ধ করার আদেশ উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের গ্রেফতার না করার দাবি জানিয়ে জয়নুল আবেদিন বলেন, গ্রেফতার করা সব ছাত্রকে বিনা পয়সায় আইনি সহায়তা দেবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, গোলাম রহমান ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানার ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ওই বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী। হামলার তদন্ত ও বিচার শুরু না করা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। অপরাজেয় বাংলার সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন যে, শিক্ষকদের কাছে আমরা মানবিক শিক্ষার দীক্ষা নেই তারাই আমাদের কোন খবর নিলেন না। এ ধরনের হামলার মাধ্যমে শহীদ মিনার ও বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এভাবে যেন আর কাউকে নির্যাতনের শিকার হতে না হয়।
×