নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ৯ জুলাই ॥ মাত্র ২৫ বছর বয়সেই স্বামী মারা গেছেন। এরপর বিভিন্ন ম্যাচে রান্না এমনকি মাঝে মাঝে দিন মজুরি করেও দুই সন্তানকে লালন পালন করেছেন তিনি। তার দুই ছেলে বিয়ে করে সংসার চলাচ্ছে। তাদেরও অভাবের সংসার। মায়ের দেখাশোনা করার সামর্থ্য নেই তাদের। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স এখন ৫৮ বছর, যদিও তিনি বলছেন তার বয়স ৭০ বছরের কাছাকাছি। প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত তিনি। লাঠির ওপর ভর করে কোনমতে চলাফেরা করেন।
এক যুগ আগে স্থানীয় ইউপি সদস্যের একটি ফড়িয়ার মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা দিয়ে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। কিছুদিন পরে ইউপি সদস্যের সেই ফড়িয়া তার টাকা ফেরত দিয়ে তার বিধবা ভাতা হবে না বলে জানিয়েছেন। এরপর বার বার ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের পেছনে ঘুরে ক্লান্ত তিনি। মৃত্যুর আগে তার বিধবা ভাতা অথবা বয়স্ক ভাতা করে দিবে কেউ- এমনটাই তার শেষ চাওয়া। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দীনের স্ত্রী নিহার বেওয়া। বিয়ের ৬ বছর পর ভিটেবাড়ির ৭ শতক সম্পত্তি রেখেই মারা যান স্বামী তমিজ উদ্দিন।
জীবন যুদ্ধের সংগ্রামে অভাব অনটনের কারণে পড়ালেখা করাতে পারেননি দুই ছেলেকে।
তিনি বলেন, ‘পেটের ভাতের ট্যাকা নাই, ছুয়ালাক লেখাপড়া শিখাম কেংকরে, মাটি খায়হানে মানুষ হইছে বেটালা, এলা মানসির বাড়িত কাম করে খাচে।‘ তার বড় ছেলে মকলেসুর রহমান বলেন, মা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় কোনমতে চিকিৎসা চলছে। সপ্তাহে পাঁচশ’ টাকার ওপরে ওষুধ লাগে। পাঁচ মাস আগে অপারেশন করতে রংপুর নিয়ে গেলেও টাকার জন্য অপারেশন করতে পারিনি। ছোট ছেলে বাসিরুল ইসলাম বলেন, আমরা দুই ভাই অন্য জনের বাড়িতে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছি। মায়ের অপারেশনের জন্য গরু বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে রংপুর গেলেও আরও ৫০ হাজার লাগবে শুনে ফেরত এসেছি। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) আব্দুর রহিম নিহার বেওয়ার জন্য বিধবা ভাতার ব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তারও ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।