ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে শেখ হাসিনা

এলাকায় গিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করুন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৬ জুলাই ২০১৮

এলাকায় গিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করুন

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যে ফর্মেই হোক বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসতে পারে। তাই আগামী নির্বাচন হবে অত্যন্ত কঠিন। সেভাবেই নির্বাচনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। দলের মধ্যে কোন ধরনের কোন্দল, দ্বন্দ্ব বা অনৈক্য মেনে নেব না, বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা না বলে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে দুর্নাম রটানো সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, প্রত্যেক এমপি-মন্ত্রীর জরিপ রিপোর্ট আমার কাছে আছে। সর্বশেষ জরিপ চলছে। এই জরিপ এবং তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে, তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রার্থী নয়, বঙ্গবন্ধুর নৌকাকে বিজয়ী করতে সবাইকে একাট্টা হয়ে কাজ করতে হবে। এবার অজনপ্রিয় কাউকে মনোনয়ন দেব না। তাই এলাকায় গিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করেন, তাদের আপদে-বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ান। দলের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করুন, যেখানে যতটুকু দূরত্ব আছে তা দ্রুতই ঘুচিয়ে ফেলুন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারী দলের সম্মেলন কক্ষে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ধারণা করছি আগামী অক্টোবরেই নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। সেজন্য আমাদের নির্বাচনের দ্রুত প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা দ্রুতই দলের নির্বাচনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করব। আর মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামতকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, সভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভোটারদের কাছে সরকারের ৯ বছরের উন্নয়ন-সফলতা ও অগ্রগতিগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুঃশাসন, বিদেশে অর্থপাচার, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের চিত্রগুলোও তুলে ধরার নির্দেশ দেন। বৈঠকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সংসদের মেয়াদ ৫ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর করার প্রস্তাব দিলে প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করে দিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু সংবিধান দিয়ে গেছেন, সংসদের মেয়াদ ৫ বছরই থাকবে। এটার পরিবর্তন দরকার নেই। রাঙ্গামাটির সংরক্ষিত মহিলা আসনের এক এমপি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের উন্নয়ন ও ত্রাণের টাকা জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে দেয়া হয়। কিন্তু ডিসি সাহেবরা স্থানীয় এমপি বা জনপ্রতিনিধিদের না জানিয়ে তা বিতরণ করে নিজেরা ক্রেডিট নেন। এটা হতে পারে না, এর পরিবর্তন করতে হবে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি দেখবো। সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল, একটি বিশাল পরিবার। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। এ দলে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। কিন্তু প্রার্র্থিতার নামে অনেকেই রয়েছেন যারা নির্বাচনে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেন না, দলের মন্ত্রী-এমপি বিরুদ্ধে কথা বলে দলের দুর্নাম করছেন। এটা সংরক্ষিত নারী আসনেরই হোক কিংবা দলের যে পর্যায়ের নেতাই হোন না কেন, এটা মেনে নেয়া হবে না। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এমপি-মন্ত্রী হলে আশপাশে অনেক সুবিধা শ্রেণী তৈরি হয়, এতে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হন। কিন্তু দলের তৃণমূলের কর্মীরাই আমার কাছে আসল। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এলাকায় গিয়ে কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়ুন। বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় খুবই প্রয়োজন উল্লেখ করে বলেন, আমরা কঠোরভাবে দেশ থেকে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করেছি। শত বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। বিচারের রায়ও কার্যকর করেছি। তাই সাহসের সঙ্গে আমরা যারা বিচার করেছি, এই বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের তো আমরা বিপদে ফেলতে পারি না। তাই জনগণের মন জয় করে আমাদের আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতেই হবে। তাই ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের মন জয় করুন, নৌকাকে বিজয়ী করতে সবার দ্বারে দ্বারে যান। বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী আগামী ৮ জুলাই জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বাড়াতে আনীত সংবিধান সংশোধন বিল পাসের দিন সবাইকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের উদ্দেশে করে বলেন, এখন থেকেই আপনারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে দলকে শক্তিশালী করুন। অন্য দলগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন, যাতে আওয়ামী লীগ একা না হয়। তবে জামায়াতের সঙ্গে নয়। এ প্রসঙ্গে ৯১ সালের নির্বাচনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি আমার ক্ষমতার লোভই থাকত তবে ’৯১ সালে নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় যেতে পারত। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ আমাদের ডেকেও ছিলেন। কিন্তু আমরা যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত এবং পতিত দল জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যাইনি। তখন এ দুই দলের সমর্থন নিলে বিএনপি কোনভাবেই ক্ষমতায় যেতে পারত না। কিন্তু আমরা নীতি ও আদর্শের সঙ্গে কোন আপোস করিনি, করবও না। সূত্র জানায়, বৈঠকে আসন্ন বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, এখানে জনগণ যাকে পছন্দ করে ভোট দেবে, সেই নির্বাচিত হবেন। আমরা বিএনপির মতো কোন মাগুরা মার্কা নির্বাচন হতে দেব না। এই নির্বাচনে পরাজিত হলে সরকার পরিবর্তন হবে না। তাই এসব নির্বাচনে দলের কোন দুর্নাম যেন না হয়, বিরোধী পক্ষ এ নির্বাচন নিয়ে কোন ইস্যু তৈরি করতে না পারে।
×