ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যসেবার নামে চলছে চরম নৈরাজ্য

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ৬ জুলাই ২০১৮

চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যসেবার নামে চলছে চরম নৈরাজ্য

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে অনুমোদনহীনভাবেই চলছে বেসরকারী পর্যায়ের অসংখ্য ক্লিনিক-হাসপাতাল, ল্যাব-ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অনুমোদনহীন এসব স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়ে গলাকাটা ফিও। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমোদন না নিয়ে কোন কোন ক্লিনিক-হাসপাতাল, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সেবার নামে এ অপবাণিজ্য দিনের পর দিন কীভাবে চালিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের বর্তমান নিয়মানুযায়ী, বেসরকারী পর্যায়ে এ ধরনের ক্লিনিক-হাসপাতাল ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনায় স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগরে অন্তত অর্ধশত বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সরকারী অনুমোদন না নিয়েই পরিচালিত হচ্ছে বলে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সরকারী অনুমোদন না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান চলছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরে ১০৬ ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিবেশের ছাড়পত্র আছে। কিন্তু নগরে ১৯ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই চিকিৎসার নামে বাণিজ্য করে যাচ্ছে। তবে বাস্তবে এর চেয়ে আরও বেশি এ ধরনের অবৈধ প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় প্রায় ৫০৪ বেসরকারী ক্লিনিক-হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ল্যাবের কোন তালিকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নেই বলে এ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ‘চট্টগ্রামে অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে তা ঠিক। কিন্তু এর কোন তালিকা তাদের কাছে নেই। তবে সরকার নতুন করে এসব নিয়ে অন লাইন নির্ভর একটি ডাটা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। এর মাধ্যমে কোন ক্লিনিক-হাসপাতালে কী সেবা আছে, অনুমোদন আছে কী না- এসব তথ্য সেখানে থাকবে। তাই তারা অনুমোদন এবং অননুমোদনহীন উভয়ের একটি তালিকা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।’ পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রামের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, ‘যারা পরিবেশের অনুমোদন না নিয়ে হাসপাতাল ও ল্যাব পরিচালনা করছে তাদেরকে তারা নোটিস দিয়েছেন। এদের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে, কিছু প্রতিষ্ঠানের আবেদন প্রক্রিয়াধীন। তবে নির্দিষ্ট সময়ের পরও যদি কেউ ছাড়পত্র না নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ দিকে বিএমডিসির দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, অবহেলায় কোন রোগী মৃত্যুর বিষয়টি কোনভাবেই কাম্য নয়। কোন রোগী যদি অবহেলায় মৃত্যুবরণ করেন তাহলে তাদের স্বজনরা বিএমডিসিতে অভিযোগ করলে ডিসিপ্লিনারি কমিটি তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে তদন্ত করানোর বিধান রয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বিএমডিসির নির্বাহী কমিটিতে যাবে। এরপর অভিযোগ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। কোন ‘চিকিৎসক কোন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেন না’-এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই সূত্র জানায়, ‘অভিযোগ আসলে তারা সিনিয়র ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়েই তদন্ত কমিটি গঠন করে থাকে। ফলে এখানে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠার সুযোগ নেই।’ অভিযোগ আছে, সরকারী হাসপাতালের সমস্যা-সঙ্কট এবং নানা অব্যবস্থাপনাকে পুঁজি করে একশ্রেণীর অসাধু চিকিৎসা ব্যবসায়ী অনুমোদন ছাড়াই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করছে। কিন্তু এসব হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোন নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না। রেজিস্ট্রেশন ফি, সেবা ফি, করসহ নানা নামে আদায় করা হয় গলাকাটা অর্থ। এ নিয়ে অভিযোগ করার কর্তৃপক্ষ থাকলেও এর কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না বলে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
×