ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দারিদ্র্য, দুর্যোগ আর কর্মহীনতায় টিকে থাকে চরের মানুষ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১ জুলাই ২০১৮

দারিদ্র্য, দুর্যোগ আর কর্মহীনতায় টিকে থাকে চরের মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের চরাঞ্চলের কথা বললেই ভেসে ওঠে ধূসর ভূমিতে দরিদ্র মানুষের সংগ্রামী জীবনের চিত্র। যেখানে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চলে প্রতিনিয়ত। চরম দারিদ্র্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর কর্মহীনতার নানা রকম বঞ্চনায় জীবন যুদ্ধে টিকে থাকে চরের মানুষরা। বহুবিদ কারণে এখনো দেশের চরাঞ্চলে পরিবেশ সম্মত উন্নত কৃষি ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা বিদ্ধমান। তবে সুষ্ঠু নীতি আর বিদ্যমান সমস্যা মোকাবিলা করে এগিয়ে গেলে চর হতে পারে এক সম্ভাবনার নাম। ‘বাংলাদেশের চরাঞ্চলের কৃষি উৎপাদন : বিনিয়োগ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এই সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে বক্তারা আরও মনে করেন, চরের কৃষিতে অধিক হারে বিনিয়োগ করা হলে খাদ্য চাহিদার বিরাট অংশ যেমন পূরণ হবে তেমনি চরের মানুষের হবে কর্মসংস্থানও। বিশেষ করে কৃষি ও প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রে একেকটি চর একেকটি স্বর্ণ খনি হতে পারে। উন্নয়ন সমন্বয়ের উদ্যোগে এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফাম ইন বাংলাদেশের সহায়তায় শনিবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে বাংলাদেশের চর ও চরের পরিস্থিতি নিয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে উন্নয়ন সমন্বয়ের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অক্সফাম বাংলাদেশের কমিউনিকেশন ম্যানেজার শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। পরে উন্নয়ন সমন্বয়ের রিসার্চ ফেলো আব্দুল্লাহ নাদভী চর নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেখান। প্রেজেন্টেশনে চর নিয়ে কয়েকটি উপজেলায় দারিদ্র্যের হার, অতিদারিদ্র্যের হার, প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র, বিদ্যুত সেবার চিত্র দেখানো হয়। উপস্থাপনায় চরের উন্নয়নে কৃষি খাতকে অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়। বলা হয়, ৭০ শতাংশের বেশি চর অধিবাসী জীবিকার জন্য প্রধানত কৃষি খাতের ওপরে নির্ভরশীল। কৃষি নির্ভর অতিদরিদ্র পরিবারগুলোকে দরিদ্র থেকে তুলে আনতে প্রতিটি পরিবারের জন্য প্রয়োজন ৫০০ ডলার। ৬২ শতাংশের বেশি চর অধিবাসীর বয়স ১৫ থেকে ৬২ বছরের মধ্যে যাদের প্রশিক্ষণ ছাড়া বা সামান্য প্রশিক্ষণেই উৎপাদনমুখী কৃষিতে যুক্ত করা সম্ভব। উপস্থাপনায় বলা হয়, চরের উন্নয়নে সরকার বেশ কিছু কর্মসূচী সফলভাবে বাস্তবায়ন করছে। এনজিওগুলো চরের উন্নয়নে কাজ করছে। বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারাও বর্তমানে চরের মানুষের জন্য বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করছেন। চর নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জের কথা বললেও কার্যকর উদ্যোগের জন্য কিছু সুপারিশও করা হয়। যেখানে বলা হয়, দুধ উৎপাদনে উৎসাহিত করতে চিলিং প্লান্ট স্থাপন করা, মসলাসহ অন্যান্য উচ্চ মূল্যের ফসল চাষে প্রণোদনা, ফসলের সংরক্ষণাগার স্থাপন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি ব্যবহার করার সুপারিশ করেন প্রেজেন্টেশনে। এছাড়াও উন্মুক্ত আলোচনায়ও নানা তথ্য উঠে আসে চর নিয়ে। বক্তারা বলেন, আধুনিক চাষাবাদ সুবিধা না থাকায় চরাঞ্চলে বিস্তীর্ণ ভূমির তুলনায় কৃষি উৎপাদন অনেক কম। চরের জমিতে অধিক উৎপাদন করতে হলে চরের কৃষকদের বিভিন্ন কৃষিসহায়তা, প্রশিক্ষণ, কৃষিপ্রযুক্তিসহ উন্নতমানের বীজ সরবরাহের কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, চর নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সবার পরামর্শ নিয়ে যদি আমরা একত্রে এগিয়ে যাই তবেই সমস্যা চিহ্নিত হবে, সমাধান হবে এবং চরের মানুষেরও উন্নয়ন হবে। মন্ত্রী বলেন, সব চরের বৈশিষ্ট এক নয়। একেক চর একেক ধরনের। এতে অঞ্চলিকতার সমস্যাও উঠে এসেছে। তবে কিছু সাধরণ সমস্যা বিদ্যমান। চরের সমস্যা নিয়ে আমাদের সরকার অবহিত এবং কাজও করছে। কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি উৎপাদন নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। চরের সমস্যা কোন একটি একক মন্ত্রণালয়ের নয়। এটি সব মন্ত্রণালয়েই কম বেশি। এজন্য সমস্যার আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করবে। আমাদের প্রাণিসম্পদের চরের কোন উন্নয়নে প্রয়োজনে প্রজেক্ট গ্রহণ করব। মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের মার্কেটিং সিস্টেমটা আরও উন্নয়ন করতে হবে। এসময় চরের ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও কথা বলেন তিনি। প্রাণিসম্পদ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, চরগুলোতে গরুর চেয়ে মহিষ লালন পালন বেশ ভাল হবে। ভেড়া পালনও লাভজনক হবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমাদের সরকার জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে চরও বাদ যাবে না। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে চায় সরকার। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। এ ছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন চর এ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান এম. আনিস উদ দৌলা, জামালপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হক খান, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কর্মসূচী পরিচালক এমবি আখতার, সিপিডির গবেষণা পরিচালক, খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহ প্রমুখ। এছাড়াও সংলাপে বিভিন্ন এনজিও ও কৃষি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
×