ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

‘নানা সীমাবদ্ধতার পরও জনগণের আশা, আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হতে চাইছে অধিদফতর’

এশিয়ার সেরা প্রতিষ্ঠান হতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২৯ জুন ২০১৮

এশিয়ার সেরা প্রতিষ্ঠান হতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস

মশিউর রহমান খান ॥ অগ্নিকা-সহ সকল দুর্যোগ মোকাবেলায় এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পদ রক্ষার মাধ্যমে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দিনরাত কর্তব্যের ডাকে সবার আগেই সেবা প্রদানে এগিয়ে আসতে দেখা যায় শতভাগ সেবাদানকারী এই প্রতিষ্ঠানটিকে। কর্তব্যের ডাকে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ দুর্ঘটনা কোথায় নেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা? জঙ্গী দমন অভিযানে অংশগ্রহণ করে জীবনদানসহ, অগ্নিদুর্ঘটনা, রাস্তায় দুর্ঘটনা, পানিতে ডুবে যাওয়া ও নৌদুর্ঘটনায় আহত নিহতদের উদ্ধার কাজ এমনকি যে কোন বিপদেই কর্তব্যের খাতিরেই সবার আগে এগিয়ে আসতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসকে। সরেজমিনে দেখা গেছে যে কোন দুর্যোগ দুর্ঘটনায় পড়ে মানুষজন যখন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে শুরু করে ঠিক তখনই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিজের জীবনকে বাজি রেখে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছান। গতি সেবা ও ত্যাগ এই তিন মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে কাজ করা এ প্রতিষ্ঠানটি একসময় জাতীয় পর্যায়ের বড় বড় দুর্যোগে তেমন কোন ভূমিকা পালন করতে না পারলেও বর্তমান সরকারের আমলে এর দৃশ্যপট বদলে গেছে। হাজারও সমস্যা আর সীমাবদ্ধতার পরও পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই জাতীয় আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হতে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। গত তিন বছরের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে ফায়ার সার্ভিস বেশকিছু বিষয়ে অগ্রগতিসাধন করেছে। দেশে ও বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে ফায়ার কর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা, নাগরিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি, দুর্যোগে ও যে কোন সাধারণ নাগরিকের সমস্যায় নিজস্ব বিশেষ সুবিধা সমৃদ্ধ এ্যাম্বুলেন্স সেবা সার্ভিস চালু, যে কোন সময় দেশের যে কোন প্রান্তে যে কোন দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া দিতে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ৯৯৯ এর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া, দ্রুততার সঙ্গে অধিক সেবা প্রদানের জন্য মূল স্টেশনের ব্যাকআপ হিসেবে রাজধানী ঢাকায় এগারোটি মোবাইল ফায়ার ইউনিট স্থাপন করেছে সেবাদানকারী সংস্থাটি। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত অগ্নিসেনাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বার্ন ট্রিটমেন্ট হাসপাতাল স্থাপন, দুর্যোগে দ্রুত সাড়া প্রদানের মাধ্যমে প্রায় ৪৭ হাজার কর্মী আগুন নেভানোর কাজে অংশগ্রহণ করে সংস্থাটির করা হিসেবে গত তিনবছরে ৫ হাজার ২১০ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। এর বাইরে গত তিন বছরে ১৭ হাজার ৭ শ’ ৯৭টি সড়ক ও নৌদুর্ঘটনার পর এতে অংশ নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৯ হাজার ৭ শ’ ৫৯ জনের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে মোট ৪ হাজার ৮ শ’ ৫২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সঙ্গে ২০১৮-১৯ সালের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির সময় দেয়া ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সঙ্গে ২০১৮-১৯ সালের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী সেবাদানকারী সংস্থাটি দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত ১০ হাজার ৪ শ’ রোগীকে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মাধ্যমে ফ্রি পরিবহন সেবা প্রদান করবে। তাৎক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দুর্ঘটনাপ্রবণ ৯০ পয়েন্টে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অগ্নিদুর্ঘটনায় নিজেদের জীবনবাজি রেখে হলেও শতভাগ সাড়া দেয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংস্থাটি। ভূমিকম্প অগ্নি নির্বাপণ উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে বস্তি এলাকা থেকে শুরু করে শপিংমল, হাটবাজার, বিভিন্ন বিপণিবিতানে, সরকারী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সকল প্রকার বহুতল ভবন ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নি-দুর্ঘটনাসহ যে কোন সমস্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সচেতন করে গড়ে তুলতে ৭ হাজার ৭ শ’ ৪০ মহড়া পরিচালনা করবে। একই সঙ্গে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ৪ হাজার ৯ শ’ ৩০ বিভিন্ন ছোটবড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হবে। শিল্পসহ অন্যান্য সকল প্রকার প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে মোট জরিপ পরিচালনা করবে। এছাড়া জনসংযোগ ও গণসংযোগ বৃদ্ধির জন্য ১০ হাজার ৫০ টপোগ্রাফি পরিচালনা করা হবে। কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী, অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে সরকারী বেসরকারী প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার জনকে মৌলিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করা হবে। সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে ৯৬ জনকে। এর বাইরে ২ শ’ জনকে বৈদেশিকি উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। নতুন ১ শ’ ৩০ নতুন ফায়ার স্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ করে অনলাইনে ২ শ’ ৯৫ বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়া পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ১৩ হাজার ৪ মালগুদাম ও কারখানার জন্য ফায়ার লাইসেন্স প্রদান করা হবে। এতে ভবিষ্যতেও অগ্নিসহ যে কোন প্রকার দুর্ঘটনা কমবে বলে আশা করছে সংস্থাটি। এর বাইরে ফায়ার রিপোর্ট ও লাইসেন্স প্রদান বাবদ সংস্থাটি প্রায় ৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মূলত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগকে অন্যান্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে কাজ করতে আগ্রহী এ সংস্থাটি। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে নানা বাধা থাকলেও তা অতিক্রম করে মূল লক্ষ্যে পৌঁছতে চায় রাষ্ট্রীয় সেবাদানকারী সংস্থাটি। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান পিএসসি (অব) জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের যে কোন প্রান্তে যে কোন সময় ঘটা দুর্যোগ মোকাবেলায় এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। দুর্যোগ-দুর্ঘটনা-জীবন ও সম্পদ রক্ষার মাধ্যমে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলার অভিলক্ষে আমরা দিনরাত জলে-স্থলে সর্বত্র কাজ করে যাচ্ছি। কর্তব্যের ডাকে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ দুর্ঘটনায় কোথায় নেই আমাদের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা? জঙ্গী দমন অভিযানে অংশগ্রহণ করে জীবনদানসহ অগ্নিদুর্ঘটনা, রাস্তায় দুর্ঘটনা, পানিতে ডুবে যাওয়া ও নৌদুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের উদ্ধার কাজ এমনকি যে কোন বিপদে কর্তব্যের খাতিরেই সবার আগেই এগিয়ে আসে ফায়ার সার্ভিস। বার্ষিক কর্মসম্পদন চুক্তির লক্ষ্য ও বাস্তবায়নের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী আমরা শতভাগ তা পালনের চেষ্টা করব। বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসকে প্রকৃত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে যা সকলের দৃশ্যমান। এর বাইরেও জনবল বৃদ্ধি, উন্নতমানের ও শক্তিশালী সরঞ্জামাদি ক্রয়সহ সরকারের কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে যা বাস্তবায়ন শেষ হলে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করা সম্ভব। যার মাধ্যমে যে কোন দুর্যোগে নাগরিক সেবা বৃদ্ধিতে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়া সম্ভব হয়। এর মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ও জানমাল রক্ষা করা যাবে। মোটকথা, আমাদের গৃহীত নানা পদক্ষেপের সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আমরা এশিয়ার সেরা প্রতিষ্ঠান হতে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। এজন্য তিনি সমাজের সকল স্তরের নাগরিকদের অগ্নিসহ যে কোন দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতন সৃষ্টিতে সহযোগিতা কামনা করেন।
×