ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

উন্নয়ন, প্রামাণ্যচিত্র ও বিরাজমান সমাজ ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২৭ জুন ২০১৮

উন্নয়ন, প্রামাণ্যচিত্র ও বিরাজমান সমাজ ব্যবস্থা

দেশ যে গত সাড়ে নয় বছরের অধিককাল এগিয়েছে তা দ্বিমতের অবকাশ নেই। এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা উচিত। উন্নয়নের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জনগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধা করেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-নেত্রীদের মধ্যে বন্ধুত্ব নেই- বরং দলাদলি ও কোন্দল বজায় থাকে। পাশাপাশি স্থানীয় সাংসদদের সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন এলাকায় থাকাটি জনগণ প্রত্যাশা করেন। তবে জননেত্রীর সূর্যের আলোয় সবাই যে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে থাকে তা সব সময়ে হয় না। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েন- ‘তৃণমূলের মধ্যে হানাহানি বন্ধ করতে, নচেৎ প্রার্থী হারলে তার দায়ভার তাদেরই বহন করতে হবে’। নেত্রীর এ সুন্দর নির্দেশনাটি স্পষ্ট। এটি অত্যন্ত বাস্তবতাপ্রসূত। এখন আশা করব বিভেদ ভুলে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা। অবশ্য এই ঐক্যের মধ্যে বর্ণচোরা বিএনপি-জামায়াতী-হুজিদের কথা সরকারপ্রধান বলেননি। বরং প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের মধ্যে ঐক্যের জোর দিয়েছেন। এদিকে কিছু বামপন্থী আবার বর্ণচোরার মতো আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তারা বারংবার গিরগিটির মতো রং বদলাচ্ছে। আর কিছু অবশ্য সময়ের বিবর্তনে প্রকৃত আওয়ামী লীগার হয়েছেন। শেষোক্তরা অবশ্যই আওয়ামী লীগে গ্রহণযোগ্য। অন্যদিকে যারা আওয়ামী লীগে ঢুকে এখনও আওয়ামী লীগের মূল স্রোতধারায় মিশতে পারেননি বরং বিষাক্ত সাপের ছোবলে আহত করেন ক্রুশবিদ্ধ করেন দলকে তাদের সম্পর্কে একটি কথাই বলতে পারি, ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। এরা গাছেরটাও খায় আবার তলারটাও কুড়ায়। এ ধরনের লোকেরা বর্ণচোরা হওয়ায় বর্তমান সরকারের উন্নয়নকে সাদা চোখে না দেখে বরং বাঁকা চোখে দেখে থাকে। আজ সরকার যে ১০টি মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করেছে, সেগুলো যাতে বাস্তবায়িত হয় সেদিকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অবশ্যই আরও অধিক হারে উন্নয়ন করা, সাধারণ মানুষের আর্থিক মুক্তির জন্য বর্তমান সরকারকে ধারাবাহিকভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগামী একটি টার্মের জন্য দোরগোড়ায় জনগণের সমর্থন পাওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারপ্রধান নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। তবে সবাই যে তার অনুসৃত নীতি পালন করছেন কি-না তা শুধু রাজনৈতিক গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং রাজনৈতিক গোয়েন্দারা দলীয় প্রধানের কাছে নিশ্চয়ই পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিতে পারেন। কেননা সূর্যের আলোর মতো শেখ হাসিনার আলোয় অন্যরা মহিমান্বিত হচ্ছে এবং সুযোগ নিচ্ছে। দেশে উন্নয়নের বহু মৃত পদ্ধতি গ্রহণ করে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এটি ২০৩০ সাল নাগাদ যাতে বাস্তবায়িত হয়- সে জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার উন্নয়নের ফসল সরিয়ে দিচ্ছেন। এই ফসলও জনগণ অনুভব করছেন। কিন্তু জনগণের কাছে জননেত্রীর গ্রহণযোগ্যতা আকাশচুম্বী- তবে যারা তার সামনে অনেক ক্ষেত্রে গিরগিটির মতো রং পাল্টান, বেরিয়ে নানা ভেক ধারণ করেন- তাদের কাছে সমাজ ব্যবস্থায় অসততার চেয়ে বড় কিছু নেই। অসৎরা সত্যকে ভয় পেলেও বর্ণচোরার মতো মিথ্যা স্তবক দেন। এদের অবশ্যই চিহ্নিত করা দরকার। এদের বাছতে গেলে অবশ্য সেই প্রবাদ বাক্যের মতো ‘ঠগ বাছতে গা উজাড়।’ আজ ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায় কেবল অসাধু ব্যবসায়ীরা জড়িত নয় এমনকি শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, ব্যাংকার, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, আমলা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউ কেউ জড়িয়ে যাচ্ছেন। এদের আসলে সবাইকে না হোকÑ যারা বিএনপি-জামায়াত-হুজী, আর বর্ণচোরা বামপন্থী যারা সরকারের বিরুদ্ধে স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে প্রপাগান্ডা করে চলেন তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করা দরকার। আত্মত্যাগী, নির্ভীকসহ, সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত ও পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ নেতারাই আগামী জাতীয় সংসদে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলেই বিশ্বাস। যারা এমপি/মন্ত্রী হয়েও স্ব-স্ব এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কিছু না করে আখের গুছিয়েছেনÑ তাদের তালিকা নিশ্চয়ই নীতি-নির্ধারকের কাছে রয়েছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগই একমাত্র দলÑ যারা জনকল্যাণের কথা ভেবে থাকে। এ জন্যই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখতে প্রয়োজনে দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। এদিকে সম্প্রতি হোয়াটস এ্যাপ মেসেজের মাধ্যমে সুন্দর স্টিকারের মাধ্যমে দেশের অগ্রগতি ও প্রগতির স্থিরচিত্র ফুটে উঠেছে। এটি যতটুকু সম্ভব আমরা সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি বিভিন্ন জনকে জানাতে। তবে একটি জিনিসের বড্ড অভাব অনুভব করছিÑ আর সেটি হলো অত্যন্ত সরল ভাষায় গত সাড়ে নয় বছরের প্রামাণ্যচিত্র। এ প্রামাণ্য চিত্রটি বাংলা ও ইংরেজী দ্বিভাষিক হতে পারে। আর এটিতে পরিসংখ্যান কম দিয়ে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য গান/কবিতা, স্বল্প কথায় চিত্র দিয়ে তুলে ধরা দরকার। অন্যদিকে রেডিওর মাধ্যমেও গান/কবিতা, স্বল্প কথা দিয়ে ঋড়বঁংবফ নধংবফ প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এটির সময় তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়। সব টিভি ও রেডিওতে তথ্য ও চলচ্চিত্র অধিদফতর থেকে তৈরি করে ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ নানামুখী মাধ্যমকে এখন থেকেই সক্রিয় করা দরকার। জনগণের দোরগোড়ায় উন্নয়নের ফসল পৌঁছলেও সেটির থেকে কি ধরনের ফসল উঠছে সেটি বোধগম্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ জন্য কেবল উন্নয়ন সঠিক পথে হলেই হবে না বরং এর প্রচার ও প্রসারের ব্যাপকতা দিতে হবে। দুঃখ লাগল সম্প্রতি চলতি বছরে অর্থনীতিতে পাওয়া একুশে পদকের অধ্যাপকের একটি লেখা দেখে। অথচ বর্তমান সরকারের উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেকেই পিছপা হননি। তবে সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। যারা বিভিন্নভাবে সরকার থেকে সুযোগ-সুবিধা নেন, তারা কতটুকু প্রতিদান দিয়ে থাকেন তা পরিমাপের জন্য উদ্যোগী হতে হবে। শিক্ষকদের মধ্যেও আজকাল এক ধরনের দুষ্টু গ্রহ আছে। একদা বামপন্থী, পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। সেই সাবেক অধ্যাপক শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে থাকার সময় তৎকালীন উপাচার্য মোঃ সালেউদ্দীনের ঘোর বিরোধিতা করে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের সমর্থক ছিলেন। আশ্চর্য একটি কুচক্রী মহলের অংশ হিসেবে রিটায়ার করার পরও তিনি আওয়ামী লীগপন্থীদের সহ্য করতে পারেন না। এখন ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে ক্লাসে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধাচরণ না করে পানও চিবুতে পারে না। এ ধরনের অসৎ মানসিকতা ব্যক্তির শিক্ষকতা পেশা পরিত্যাগ করা উচিত। তার অসততার একটি বড় প্রমাণ হলো তিনি দীর্ঘদিন চাকরি না করেও ফুল বেনিফিট আদায় করেছেনÑ যা নিয়মবহির্ভূত। এ ধরনের বর্ণচোরা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে উস্কে দেন। এ সমস্ত ধান্ধাবাজ সদামিথ্যা বলেন, অবৈধভাবে বয়স হলেও অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেন। যে পাত্রে খান, সে পাত্র কানা করে দেন। এদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতী-হুজির সঙ্গে পার্থক্য নেই। শুধু একদা বামপন্থী ছিলেন। কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে অন্যায্য বলা ছাড়া অন্য কিছুই করার ক্ষমতা নেই। ন্যায্য পাওনাটুকু অর্থাৎ প্রশংসা করার ক্ষমতা ওই অধ্যাপকের নেই। বস্তুত, দেশের অগ্রযাত্রার কারণে আজ সরাসরি বিরোধিতা করার মতো লোকের অভাব রয়েছে। কিন্তু শেক্সপিয়ারের সেই নাটকের মতো জুলিয়াস সিজারকে যিনি শেষে আঘাত করেছিলেন, যাতে তিনি বলে উঠেছিলেন ‘দি ব্রুটাস’-এর মতো লোকেরও অভাব নেই। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে, ‘দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য’। উন্নয়নের মহাসড়কে পদ্মা সেতুর কার্যক্রমের শীঘ্রই ফসল ঘরে উঠবে। তবে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের দ্বিতীয় রানওয়ে তৈরির পাশাপাশি অধিকতর সম্প্রসারণ ও স্থানাভাব দূর করা দরকার। আজ যেহেতু সরকার সেফটি নেটের কার্যক্রম ও আওতা প্রসারিত করেছে- সেটি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে। সাধারণ অসহায় দুস্থ মানুষদের পাশে মানবিকতা নিয়ে সরকারপ্রধান কাজ করে চলেছেন। একজন বিশ্বমাপের স্টেসম্যান হিসেবে ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে মানব উন্নয়নের অগ্রযাত্রীর নির্দেশক ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকপাল হিসেবে শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার শান্তিতে পাওয়া উচিত ছিল। কেবল নিজের দেশের মানুষের পাশে নয়, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আউং সান সুচির একগুয়েমি, মিথ্যাচার আসলেই দুঃখজনক। আউং সান সুচির মতোই ড. ইউনূস এখন যেভাবে দুর্নামের ভাগিদার হয়েছেনÑ তা আসলেই জনগণের কাছে দুঃখ নামের বোঝাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের সংস্কার সাধন বোর্ড থেকে শুরু করে ব্যবসা পদ্ধতির পরিবর্তনে অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। আশা করা যায়, নির্বাচন পরবর্তীতে সরকার গঠিত হলে এ ব্যাপারটি সুরাহা করে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে জনকল্যাণ যাতে সাধিত হয়- সেদিকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামোর সংস্কার চাই। এদিকে সরকারের যে সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে- যাতে সেগুলো মানবকল্যাণকে আরও গ্রথিত করতে পারে, সে ব্যাপারে অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। এ জন্য কর্মসূচীর কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি এ সমস্ত কর্মসূচীকে বাস্তবায়নে স্থানীয় সাংসদদের একটি ভূমিকা থাকা দরকার। শিক্ষা খাতে প্রসার আর মান উন্নয়নে সরকার কাজ করে চলেছে। এতে বেশ সাড়াও পড়েছে। কয়েকদিন আগে বাজেট ঘোষণার আগের দিন একটি টিভি চ্যানেলে বিএনপির এককালীন শিক্ষা সম্পাদক যিনি ডক্টরেট ডিগ্রীধারী তার জ্ঞানের নমুনা দেখে হতাশ হলাম। সেখানে থাইল্যান্ডের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে স্কুপাস লিস্টেড জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে হয় প্রমোশন পাওয়ার জন্য, আর উন্নত বিশ্বে স্কুপাস/থমসন-রয়টার্স, ইআরএ লিস্টিং জার্নালে প্রকাশ হতে হয়Ñ সেটি সম্পর্কে তার কোন ধ্যান-ধারণা নেই। কেবল ভুল বকলেই চলবে না, তাকে অবশ্যই জ্ঞানের সাধনা করতে হবে। নইলে ভুল/ভাল কর্মকা-ই কেবল পালন করতে হবে। ইউজিসির উচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাঙ্কিং করার। এমনকি বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রকাশিত জার্নাল সমূহেরও র‌্যাঙ্কিং করার জন্য ইউজিসিকে উদ্যোগী হতে হবে। আইকিউএসিকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এ্যাক্রেভিশন কাউন্সিল এখনও শুরু হয়নি। সরকারের উদ্যোগে গত সাড়ে নয় বছরে যে অভাবনীয়ভাবে দেশের সর্বত্র বিশ্ববিদ্যালগুলো ছড়িয়ে পড়েছেÑ শিক্ষক তৈরির ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারলে কর্ম উপযোগী শিক্ষিত ছাত্রছাত্রী তৈরি হবে। এ সাফল্যটিও কিন্তু সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ বিশেষ। আসলে ভাল কর্মকা-কে জনগণকে জানানো উচিত। একই সঙ্গে জনগণকে অবহিত করার জন্য প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে কমিউনিটি ক্লিনিক আসলে শেখ হাসিনার অনন্য অবদান। ন্যূনতম স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য তার অবদান অপরিসীম। এই কল্যাণময়ী কীর্তিটি অবশ্যই প্রামাণ্যচিত্রে আশা উচিত। দেশে কিছু পাঁচ তারকা হাসপাতালে গলাকাটা রেটে চিকিৎসা দিচ্ছে। কিন্তু হায় হতিশ্য। সেখানে একজন ভুক্তভোগী রোগী হিসেবে বলছি বহু নার্স টেস্ট করার জন্য ব্লাড নিতে পারে না- এমনও নার্স রয়েছে। পরে দেখা গেল সমস্ত বিছানা রক্তে ভিজে গেছে। এদিকে ২২ তারিখ সকালে যখন কলকাতা থেকে আমি তখন দেখলাম ৭৫% যাত্রী হচ্ছে চিকিৎসার জন্য কলকাতা, ব্যাঙ্গালুরুর, চেন্নাই, ভেলোরে গিয়েছিল। এদের অনেকে দুটো বিষয়ে আফসোস করছিল, মেডিক্যাল ভিসা আর নতুন করে ফরেনারদের ওপর চিকিৎসার ক্ষেত্রে করারোপ করায়। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হলেও বাংলাদেশী পাঁচ তারকা হোটেলের মতো চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী সংস্থার কাছাকাছি খরচ কোন কোন ক্ষেত্রে এদেশে দাম বেশি। এখানকার চিকিৎসকদের কেউ কেউ প্রয়োজন ছাড়া নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায়, রোগীকে ভয় দেখিয়ে অর্থ-আদায় করে নানা উছিলায়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ওই সমস্ত চিকিৎসালয়ে চিকিৎসা করার প্রধান শর্ত চিকিৎসকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়- রোগী থেকে কত বেশি অর্থ আদায় করা যায়। এ সমাজে এখন ভদ্রতাকে দুর্বলতা বলা হয়Ñ অন্যায়কারীরা অনায়াসে মিথ্যা অপবাদ দেয়। এদিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ দেশের অগ্রযাত্রাকে সম্মানিত করেছে। আবার ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতি দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। সরকার যেভাবে দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেÑ কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে এবং সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করছে। এগুলোকে সরল ভাষায় জনগণের কাছে প্রচার ও প্রসার করে দিতে হবে। দেশে বর্তমান সরকারের আরেকটি সাফল্য হচ্ছে ট্রেন লাইনের বিস্তার সাধন করা। এটি অবশ্যই একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এ ব্যাপারটিও প্রামাণ্যচিত্রে স্থান পাওয়া দরকার। যদি কুমিল্লা-দাউদকান্দি-মেঘনা-কাঁচপুর বরাবর রেললাইন নির্মাণের ব্যাপারটি আগামী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এতে ঢাকার ওপর চাপ কমত। কিন্তু এ ধরনের প্রকল্প এখন পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হয়নি। নদীর ড্রেজিং করার ওপর সরকার গুরুত্ব আরোপ করেছে। এটিও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। অন্যদিকে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটানো এবং সিস্টেম লস কমিয়ে আনায় সরকার যে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন তা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে থাকে। এ ব্যাপারটিও প্রামাণ্যচিত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা এবং প্রগতিতে সরকারের সদিচ্ছার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চেতনাকে বাস্তবায়ন করা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা অপরিসীম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে মানবতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সরকারÑ যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আসলে দেশের সব ফ্রন্টে সরকারপ্রধান উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেছেনÑ যার জন্য আরেকটি মেয়াদেও ধারাবাহিকতা রক্ষা করা প্রয়োজন। বাজার ব্যবস্থাপনার অর্থনীতিতে ওঠা-নামা থাকবেই। তবে একটি ব্যাংকিং কমিশন ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠন করা গেলে ভাল হতো। কেননা যে কোন কারণেই হোক বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সরকারের প্রথম ৭-৮ বছরের মতো দৃশ্যমান আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কাজটি করতে পারছে না। এদের সঠিক জায়গায় সঠিক মন্ত্র দেয়া দরকার। এদিকে রফতানি ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য রয়েছে। এ সাফল্য রফতানি বহুধা বিভক্তকরণে এগিয়ে আসতে হবে। তবে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত মাত্র দশ শতাংশ। সেখানে অধিকাংশ উদ্যোক্তা ট্যাক্স ঠিকমতো দিতে চায় না, ব্যবসায়ীরা কর রেয়াত কেবলি চান, এমনকি বিড়ির ওপর কর বসালে খেপে যায়Ñ কেবল চাকরিজীবীদের ওপর থেকে কতটুকু কর আদায় করা সম্ভব? আবার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় সেখানে ১৩% কাজ করে, অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় ৮৭% কাজ করে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় আনা গেলে কর বাড়বে। এবারের ঈদে একটি জিনিস লক্ষণীয় যে সরকারের সুব্যবস্থাপনার কারণে স্বাচ্ছন্দ্যে মানুষ বাড়ি যেতে পেরেছে। বাস-ট্রেন-নৌপথ যথাযথ ছিল। তবে এবার গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছিÑ আকাশপথে দেশে ও বিদেশের ক্ষেত্রে আগে-পরে তিন থেকে চারগুণ দামে টিকেট বিক্রি হয়েছে। যেমন ২৩ তারিখে ঢাকা-কলকাতার টিকেট আকাশচুম্বী ও সোনার হরিণ হয়ে গিয়েছিল। শেয়ারবাজারের মতো ক্ষণে ক্ষণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে যাতে ঈদ বা বড় বন্ধে আকাশ পথে টিকেটের দাম মনিটরিং করতে হবে। আরেকটি কথা না বললেই নয় কুমিল্লায় একটি বিমানবন্দর স্থাপন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। খুলনাতেও একটি বিমানবন্দর স্থাপন করা দরকার। নারী উন্নয়নে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ আকাশ ছোঁয়া সাফল্য নিয়ে এসেছে। দেখতে ভাল লাগে, নারীরা আর আগের মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ নেই। বিশ্বসূচকে নারীদের অবদানকে আজ সময়ের বিবর্তনে গ্রন্থিবদ্ধ করা হচ্ছে। নারীদের এই যে দীর্ঘ প্রচার, প্রসার ও উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্তকরণ দেশের অগ্রযাত্রাকে আরও অধিক হারে গুরুত্ব দিচ্ছে। গুছিয়ে কাজ করার জন্য সমাজের নানা স্তরে ডিসিশন মেকিং প্রসেসে নারীরা নিরলস কাজ করে চলেছে। নারী উন্নয়নের বিষয়টি প্রামাণ্যচিত্রে আসা দরকার। মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান তাও অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে নির্দোষ যেন ভুলের শিকার না হয় সে জন্য অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। দেশের উন্নয়নের জন্য সরকারপ্রধান কর্ম-উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা ও উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাই নির্দিষ্ট দিনকে উদ্যোক্তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা এবং সেটি পালনের উদ্যোগ নেয়া বাঞ্ছনীয়। এদিকে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সে এক বছর মেয়াদি পোস্ট গ্রাজুয়েট এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট এবং দেড় বছর মেয়াদি মাস্টার্স ইন এ্যান্ট্রি প্রিনিউরশিপ ইকোনমিক্স চালু করেছেন। ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কনস্টিটিউট ইনস্টিটিউট। এখন এ্যান্ট্রি প্রিউনিরশিপ ইকোনমিক্সে স্নাতক প্রোগ্রাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনক্রমে চালুর উদ্যোগ নেয়া উচিত। এ জন্য অবশ্যই সরকারের ও দেশের চাহিদাটি বিবেচনায় নিতে হবে। বর্তমানে পিকেএসএফের কার্যক্রম অনেকখানি জনকল্যাণমুখী। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদের নেতৃত্বে ‘মানব মর্যাদা’ বৃদ্ধিতে পিকেএসএফ কাজ করে চলেছে। সমৃদ্ধি কর্মসূচী একটি মানবহিতৈষী কার্যক্রম। এই কার্যক্রম সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য অধিক সরকারী অর্থের বরাদ্দের প্রয়োজন। যদিও পিকেএসএফের অন্যান্য প্রকল্প রয়েছে যার মধ্যে মাইক্রো এ্যান্টি প্রিনিউরশিপ কর্মসূচীসমূহ অন্যতম। একজন মানবহিতৈষী অর্থনীতিবিদ হিসেবে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। পিকেএসএফের কার্যক্রম এখন মানবকল্যাণমুখী ও জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। তবে জাতীয় আয় গণনায় অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে আনতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব গঠনমূলক হতে হবে। ইদানীং বড়-ছোট লঘু জ্ঞান শিক্ষকদের মধ্যে হারিয়ে যায় আর সুযোগ নেয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তাদের মূল কাজই হচ্ছে ডিভাইড এ্যান্ড রুল পলিসি। এ ধরনের ন্যাস্টি পলিটিক্স দূর করা গেলে দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান আরও বাড়ত। চিকিৎসক-নার্সদের সততার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এদিকে প্রকৌশলী, আমলা, সাংবাদিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সবাইকে নিজ দায়িত্বে থেকে স্বচ্ছতা, ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। দুঃখী মানুষের পাশে কমিউনিটি সার্ভিসের আওতায় কাজ করতে হবে। দেশে কমিউনিটি ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হবে। লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ [email protected]
×