ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

খাদের কিনারা থেকে উঠতে পারবেন মেসিরা?

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৬ জুন ২০১৮

খাদের কিনারা থেকে উঠতে পারবেন মেসিরা?

জাহিদুল আলম জয় ॥ সত্যিকার অর্থে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে আর্জেন্টিনা। ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল দু’টির একটির ভাগ্য ঝুলছে সুতায়। লিওনেল মেসি, সার্জিও এ্যাগুয়েরোরা আদৌ রাশিয়া বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে খেলতে পারবে কিনা সেটা এখন বিলিয়ান ডলারের প্রশ্ন! অনেক হিসেব-নিকেশ আর সমীকরণ সামনে রেখে আজ রাতে ভাগ্যনির্ধারণী ম্যাচে মাঠে নামছে বিশ্বকাপের বর্তমান রানার্সআপরা। রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গে আফ্রিকার সুপার ঈগল নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার অগ্নিপরীক্ষা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায়। একই সময়ে ‘ডি’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে রোস্টভে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে নবাগত আইসল্যান্ড। এই গ্রুপ থেকে ইতোমধ্যে টানা দুই জয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত হয়ে গেছে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া ক্রোয়েশিয়ার। বাকি তিন দলের স্বপ্ন এখনও বেঁচে আছে। এর মধ্য থেকে চোখের জলে বিদায় নিতে হবে দু’টি দেশকে। আর একটি দেশ টিকেট পাবে দ্বিতীয় রাউন্ডের। ‘ডি’ গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচের দিকে তাই দৃষ্টি গোটা ফুটবল দুনিয়ার। নাইজিরিয়া-আর্জেন্টিনা ম্যাচটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি একই আবহ থাকছে আইসল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচেও। বর্তমানে এই গ্রুপে দু’টি করে ম্যাচ শেষে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ক্রোয়েশিয়া। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নাইজিরিয়া। এখনও গ্রুপে চার দলের মধ্যে চতুর্থ আর্জেন্টিনা। দুই ম্যাচে মেসিদের পয়েন্ট মাত্র ১। তৃতীয় স্থানে থাকে আইসল্যান্ডের পয়েন্টও ১। তবে গোল পার্থক্যে এগিয়ে আইসল্যান্ড। আর্জেন্টিনার বর্তমান গোল পার্থক্য যেখানেÑ৩ সেখানে আইসল্যান্ডেরÑ২। এই অবস্থায় নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে জিতলে আর্জেন্টিনার নকআউট পর্বে খেলা নিশ্চিত হতে পারে। কারণ তখন মেসিদের পয়েন্ট হবে চার। এক্ষেত্রে আইসল্যান্ডকে জয়বঞ্চিত থাকতে হবে ক্রোয়েটদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আইসল্যান্ড যদি ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দেয় সেক্ষেত্রে আবার বাদ পড়তে হতে পারে আর্র্র্জেন্টিনাকে। কেন না তখন আর্জেন্টিনা জিতলেও তাদের পয়েন্ট হবে চার, আর আইসল্যান্ডের ভা-ারেও জমা হবে একই পয়েন্ট। কিন্তু গোলগড়ে মেসিরা পিছিয়ে। তাই মিকেল-মুসাদের বিরুদ্ধে যত বেশি সম্ভব গোল করার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে আলবেসেলেস্তাদের। টিকে থাকার লড়াইয়ে মুখোমুখি পরিসংখ্যানে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। এ পর্যন্ত নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে আটবারের দেখায় পাঁচবার জিতেছে ম্যারাডোনার দেশ। দু’টিতে জিতেছে নাইজিরিয়া। অপর ম্যাচটি ড্র হয়। তবে বিশ্বকাপের মুখোমুখি লড়াইয়ে শতভাগ জয়ের রেকর্ড দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে সুপার ঈগলদের বিরুদ্ধে চারবার খেলে প্রতিবারই জিতেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি। গত বিশ্বকাপে তো দল দু’টি একই গ্রুপে খেলেছিল। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত আসরে ‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচে ৩-২ গোলে জিতেছিল লিওনেল মেসির দল। তবে দু’দলের সর্বশেষ দেখায় কিন্তু জিতেছে নাইজিরিয়া। ২০১৭ সালের ১৪ নবেম্বর আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মেসিবিহীন আর্জেন্টিনা হেরেছিল ২-৪ গোলে। এরপরও জয়ের আকাক্সক্ষা ও নকআউট পর্বে খেলার স্বপ্ন নিয়ে নাইজিরিয়া পরীক্ষায় অবতীর্ণ হচ্ছেন মেসি-মারিয়ারা। বাঁচা-মরার এই লড়াইয়ে প্রাণভোমরা মেসিই যে আর্জেন্টিনার প্রধান ভরসা সেটা বলাইবাহুল্য। ক্ষুদে এই জাদুকর জ্বলে উঠলে সবকিছুই সম্ভব। তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো মাঠ মাতিয়ে চলেছেন। নেইমারও শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ফিরেছেন স্বরূপে। আলো ছড়িয়ে চলেছেন হ্যারি কেন, রোমেলু লুকাকুরা। কিন্তু এখনও অনুজ্জ্বল মেসি! এটা বিশ্বাসই করতে পারছেন না বিশ্বব্যাপী তার কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থকরা। তবে নাইজিরিয়ার বদৌলতে সুযোগ আসায় এখন ৩১ বছর বয়সী এই সুপারস্টারের দিকেই চেয়ে আছে পুরো বিশ্ব। তাদের বিশ্বাস আফ্রিকান দেশটির বিরুদ্ধে ঠিকই জ্বলে উঠে দলকে উদ্ধার করবেন পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। কিন্তু শঙ্কাও কাজ করছে। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে মেসির পারফরমেন্সসহ শারীরিক অবয়ব ছিল অবাক করার মতো। ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে মাঠের লড়াইয়ে মেসিকে চেনাই যাচ্ছিল না! মাঠে নামার সময় তাকে কেমন যেন নিস্তেজ দেখা যাচ্ছিল। পরে ময়দানী লড়াইয়েও একই চিত্র দেখা যায়। প্রথম ৬০ মিনিট তো মেসিকে দুরবিন দিয়ে খুঁজতে হয়েছে! এরপর মাঝেমধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে তার চলাফেরা দেখা যায়। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, ক্রোয়েট ফুটবলারদের মাঝে মেসি ছিলেন রীতিমতো অসহায়। আশপাশে বল থাকলেও মনে হচ্ছিল তার শরীরটা সেদিকে এগুতে সায় দিচ্ছিল না! নিশ্চিতকরেই এই করুণ অবস্থা আর দেখতে চায়না আর্জেন্টিনা। সেরা তারকার জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় তারা। ২৪ জুন ৩১তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন মেসি। জন্মদিনে সব জরাজীর্ণ ভুলে নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার পণ করেছেন। সতীর্থ ও শুভাকাক্সক্ষীরাও তাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন। তাতে যে অনুপ্রাণিত হয়েছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে আর্জেন্টাইন অধিনায়কের কথাতে। ভাগ্য পেন্ডুলামের মতো ঝুললেও বিশ্বকাপ জিতেই অবসর নেয়ার অঙ্গীকার করেছেন জন্মদিনে। এ প্রসঙ্গে মেসি বলেন, আমি গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব কিছুই জিতেছি। কিন্তু শেষটাতে এসে আমি উচ্চাভিলাষী। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ না জিতে আমি ফুটবল থেকে অবসর নেব না। কারণ বিশ্বকাপ জয় আমার কাছে অনেক বড় কিছু। আর্জেন্টিনার জন্য বিশ্বকাপ জয় বিশেষ একটা ব্যাপার। আর্জেন্টিনার হয়ে একবার বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে মরিয়া মেসি বলেন, বিশ্বকাপের ট্রফি ওপরে তুলে ধরার স্বপ্ন আমি সব সময়ই দেখে আসছি। বিশ্বকাপ জেতার পর যে আনন্দের অনুভূতি হয়, সেটা অন্যদের মধ্যে দেখেছি। ওই মুহূর্তটি নিয়ে ভাবলে আমার মাথার চুল দাঁড়িয়ে যায়। আমি বিশ্বের লাখ লাখ আর্জেন্টাইনকে বিশ্বকাপের আনন্দ দিতে চাই। আমি সকলের এই স্বপ্নটা বিসর্জন দিতে পারি না।
×