ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫০ লাখ টাকারও বেশি ফল বিক্রি

আম জাম কাঁঠালের ম-ম ঘ্রাণের জাতীয় ফল প্রদর্শনী সমাপ্ত

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৫ জুন ২০১৮

 আম জাম কাঁঠালের ম-ম ঘ্রাণের জাতীয় ফল প্রদর্শনী সমাপ্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চারদিকে শুধুই মুখরোচক নানা ফলের সমাহার। কেউ কিনছেন কেউ বা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। গত তিনদিন ধরে এ দৃশ্য ছিল রাজধানীর খামারবাড়িতে জাতীয় ফল প্রদর্শনীতে। রবিবার মেলার শেষদিন হওয়ায় ভিড়ও অন্য দুইদিনের চেয়ে একটু বেশি। এদিন ফল না কিনে খালি হাতে কেউ ফেরেনি। গত তিন দিন ধরে চলা এই ফল প্রদর্শনীতে লাখো মানুষের পদচারণায় বিক্রি হয়েছে ৫০ লাখ টাকারও বেশি ফল। কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘অপ্রতিরোধ্য দেশের অগ্রযাত্রা, ফলের পুষ্টি দেবে নতুন মাত্রা’ প্রতিপাদ্যে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া জাতীয় ফল প্রদর্শনীর সমাপনী টানা হয় রবিবার। সমাপনী অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে তুলে দেয়া হয় পুরস্কারও। মেলায় প্রবেশ করতেই একটি মিষ্টি সুঘ্রাণ আসে। আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, আনারসসহ প্রায় শতাধিক নানা ধরনের ফলের ঘ্রাণে একটি আলাদা মম ঘ্রাণ সৃষ্টি হয়েছে মেলার ভেতরে। মেলার ভেতরেই নানা ফল দিয়ে তৈরি হয়েছে ফলের স্তম্ভ। দর্শনার্থীরা নানা ধরনের ফল ও বৃক্ষ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এই ফল মেলার প্রদর্শনীর মধ্যেই আ কা মু গিয়াস উদ্দিন মিলকী অডিটরিয়ামে সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দিন দিন কৃষি জমি কমলেও খাদ্যে ঘাটতি নেই। দেশ উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের খাদ্যাভাস পরিবর্তন হয়েছে। জনগণের মধ্যে ফল নিয়ে আরও আগ্রহ বৃদ্ধিতে এই প্রদর্শনী। রাজধানীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সারাদেশে নানা ধরনের সভা সেমিনার র‌্যালিও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা এখন এক কোটি ২১ লাখ মেট্রিন টন ফল উৎপাদন করছি। ফল চাষের জন্য আলাদা জমি লাগে না। কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনায় করা যায় তাই অনেকের আগ্রহ বেড়েছে বলেও মনে করেন তিনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ উইং) সৈয়দ আহম্মদ বলেন, এবারের প্রদর্শনীতে জাতীয় ফল কাঁঠাল কর্ণার নিয়ে সবার বেশি আগ্রহ দেখেছি। কাঁঠাল নিয়ে এত রকমের আইটেম হয় তা অনেকেরই জানা ছিল না। এখানে এসেই অনেকে জেনেছেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোঃ নাসিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ অমিতাভ দাস। আয়োজকরা জানান, গত তিনদিনে লক্ষাধিক দর্শনার্থী এসেছেন প্রদর্শনী মেলায়। যেখানে আমসহ অন্যান্য ফলের ৮০ টন ফল বিক্রি হয় যার মূল্য ৫০ লাখ টাকারও বেশি। এবারের ফল প্রদর্শনীতে ৯ সরকারী ও ৫১ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মোট ৮১ স্টল ছিল। আমের ১০২ জাতসহ ৯৯ প্রজাতির ফল প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে ছিল প্রচলিত ৫৪, অপ্রচলিত ৩৬ ও বিদেশী ফলের ৯ জাত। প্রদর্শনীতে জাতীয় ফল কাঁঠালের একটি বিশেষ কর্ণারে কাঁঠালে তৈরি ১২৩ রকমের মুখরোচক খাবার প্রদর্শন করা হয়। পায়েশ থেকে নানা ধরনের পিঠাতেও ব্যবহার করা হয় কাঁঠালের। কাঁঠাল কর্ণারে সেই চিত্রই তুলে ধরা হয়। দর্শনার্র্থীরা মুগ্ধ হয়ে কাঁঠালের নানা ধরনের তৈরি খাদ্যপণ্যের বিষয়টি উপভোগ করেন। এদিকে, সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ফল প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী স্টল, ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, প্রগতিশীল কৃষক, প্রতিষ্ঠান পর্যায় ও সর্বোচ্চ ফলদ বৃক্ষ রোপণকারী জেলাকে পুরস্কৃত করা হয়। জাতীয় ফল প্রদর্শনীতে আম, কাঁঠাল, কলাসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বাহারি ফল প্রদর্শনের জন্য সরকারী স্টল হিসেবে প্রথম স্থান অর্জনকারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে যৌথভাবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। তৃতীয় স্থান অর্জন করে যৌথভাবে কৃষি তথ্য সার্ভিস, কৃষি বিপণন অধিদফতর ও হর্টেক্স ফাউন্ডেশন। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে যথাক্রমে সুপার চেইন শপ আগোরা, মায়ের দোয়া নার্সারী ও ভাই ভাই ফল বিতান (রিপন)। ব্যক্তি পর্যায়ে খুলনার শেখ শাখাওয়াত হোসেন, চট্টগ্রামের কামাল উদ্দিন ও রংপুরের মথুর চন্দ্র বর্মণ যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ঢাকা শহরে বাড়ির ছাদে ফল বাগান সৃজনে বিশেষ সফলতার জন্য পুরস্কার পান কদমতলীর মনি মালা মন্ডৈল, আদাবরের আব্দুল গণি তালুকদার এবং আফরোজা আক্তার, শাহবাগের আনোয়ার হোসেন ও তেজগাঁয়ের সিদ্দীকা বেগম। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে খাগড়াছড়ির এডহক ফরমেশন রিক্রুট ট্রেনিং সেন্টার (এএফআরটিসি) ও খুলনার জনতা বহুমুখী সমবায় সমিতিকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। সর্বোচ্চ ফলদ বৃক্ষ রোপণকারী জেলা হিসেবে কুমিল্লা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী উপলক্ষে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১৫ ছাত্রছাত্রীর মাঝে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়।
×