ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২০ জুন ২০১৮

  প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে নির্ধারিত বিনিয়োগসীমার মধ্যে থেকেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে দুটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে শীঘ্রই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাঠানো প্রস্তাব দুটির মধ্যে প্রথমটি হলো, অমেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডে উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসীমা গণনা থেকে অব্যাহতি দেয়া। অনুমোদন মিললে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমানে ১৪টি অমেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা এক হাজার ২২০ কোটি টাকা বিনিয়োগসীমার বাইরে চলে যাবে। তখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে এই পরিমাণ অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। বিএসইসির দ্বিতীয় প্রস্তাব হলো অ-রূপান্তরযোগ্য অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার (নন-কনভার্টেবল প্রেফারেন্স শেয়ার), অ-রূপান্তরযোগ্য ডিবেঞ্চার ও অ-রূপান্তরযোগ্য বন্ড (নন-কনভার্টেবল বন্ড ও ডিবেঞ্চার) এবং শুধু ডেব্ট ইনস্ট্রুমেন্টে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে বিনিয়োগ করে তাকেও বিনিয়োগসীমার বাইরে হিসাব করা। অনুমোদন মিললে বিদ্যমান বিনিয়োগসীমার মধ্য থেকে সমপরিমাণ অর্থ শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করার সুযোগ হবে। জানা যায়, ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারে এক্সপোজার হিসাব বিবেচনায় অ-রূপান্তরযোগ্য অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড বাদ দেয়ার নির্দেশনা জারি করেছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এই দুই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এগুলো বাস্তবায়িত হলে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা আসবে এবং বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ সহজতর হবে। এর ফলে বাংলাদেশের আর্থিক বাজার ও শেয়ারবাজারে বড় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছে বিএসইসি। লিখিত প্রস্তাব দুটি গত ৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিএসইসি। ব্যাংক কোম্পানি আইনে বলা আছে, কোন ব্যাংক তাদের পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি, রিটেইন আর্নিংয়ের (টিয়ার-১ মূলধন) মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে না। বর্তমানে ১৪টি অমেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডে উদ্যোক্তা হিসেবে ১০টি ব্যাংক ও চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ২২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। প্রস্তাব দুটি গৃহীত হলে এই বিনিয়োগ বিনিয়োগসীমা গণনার মধ্যে পড়বে না। তখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারবাজারে মোট বিনিয়োগ নির্ধারিত ২৫ শতাংশের নিচে চলে আসবে। তখন তারা নতুন করে এক হাজার ২২০ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। কমিশনের মতে, অমেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডে উদ্যোক্তা হিসেবে বিনিয়োগ করা মোট ফান্ডের ১০ শতাংশ অর্থ দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। বিনিয়োগের এই অর্থকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হিসাবায়নের বাইরে রাখা হলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নতুন মিউচুয়াল ফান্ড গঠনে উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন করতে পারবে। ফলে ফান্ড গঠনের জন্য বাকি ৯০ শতাংশ অর্থ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। বিধি অনুযায়ী মিউচুয়াল ফান্ডের মোট অর্থের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হয়। বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ারবাজারের বাইরে যেমন সরকারী সিকিউরিটিজ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয় স্কিমে বিনিয়োগ করে থাকে। বর্তমানে ৮৬টি ফান্ডের অধীন প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বে মিউচুয়াল ফান্ড গঠনের ক্ষেত্রে সাধারণত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশে বিদ্যমান ৭৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৪৩টি মিউচুয়াল ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছে। ৩৯টি অমেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান উদ্যোক্তা হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি ফান্ডে ব্যাংক ও চারটি ফান্ডে আর্থিক প্রতিষ্ঠান উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন করছে। এই ১৪টি অমেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এক হাজার ২২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ আটকে রয়েছে। কমিশন শর্ত শিথিল করলে সমপরিমাণ অর্থ শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। বর্তমানে মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তার বিনিয়োগ করা অর্থের ১০ শতাংশ ফান্ডের মেয়াদ পর্যন্ত রেখে দিয়ে বাকি অর্থ এক বছর পর বিক্রি করতে পারে। আর অমেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড হলে বিনিয়োগ করা অর্থ ফান্ড গঠনের তারিখ থেকে অন্তত তিন বছর পর্যন্ত সার্বক্ষণিকভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। বিএসইসির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজার তথা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করা একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের অবদান ১ শতাংশের নিচে, অথচ ভারতে এটি ১১ শতাংশ এবং উন্নত দেশগুলোতে ২০ শতাংশের বেশি। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা দক্ষ ব্যবস্থাপকের অধীন পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে তাদের ক্ষতির আশঙ্কা কমবে, বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে এবং সর্বোপরি বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচিত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ থেকে জানা যায়, শেয়ারবাজারের নেতিবাচক অবস্থার কারণে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমানে সরকারের যুগান্তকারী অর্জন ম্লান হতে বসেছে। বিষয়টি নীতি নির্ধারণী মহল থেকেও অর্থমন্ত্রীকে বলা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীও বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং তিনি ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগকে বিএসইসির প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে বাজেট অনুমোদনের আগে সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা খুবই কম বলে সূত্রটি উল্লেখ করে।
×