ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহাসিক শিরোপা জয় ॥ নারী এশিয়া কাপ টি২০

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১১ জুন ২০১৮

ঐতিহাসিক শিরোপা জয় ॥ নারী এশিয়া কাপ টি২০

মিথুন আশরাফ ॥ মাশরাফি, সাকিব, তামিমরাও যা কখনও করে দেখাতে পারেননি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোন শিরোপা ঘরে তুলতে পারেননি। সালমা, রুমানা, ফারজানারা তা করে দেখিয়েছেন। এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছেন। রবিবার নারী এশিয়া কাপ টি২০’র টানটান উত্তেজনাময় ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে দিয়ে শিরোপা জিতেছেন দেশের নারী ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের প্রথম কোন শিরোপা দেশের নারী ক্রিকেটারদের হাত ধরেই আসল। গৌরব এনে দিয়েছেন তারা। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিনরারা একাডেমি ওভালে রবিবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি হয়। ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সালমা খাতুন। এ ভেন্যুতে যে পরে ব্যাটিং করেই বারবার জিতেছে বাংলাদেশ। এবারও তাই হলো। ভারত নারী ক্রিকেটাররা আগে ব্যাট করার সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি। রুমানা আহমেদ (২/২২) ও খাদিজা তুল কুবরা (২/২৩) কাজে লাগাতে দেননি। দুইজনের বোলিং ঘূর্ণির সামনে পড়ে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১১২ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত। অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌর সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন। জবাব দিতে নেমে নিগার সুলতানার ২৭, রুমানার ২৩, আয়েশা রহমানের ১৭ ও শামীমা সুলতানার ১৬ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১১৩ রান করে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। শেষ বলে গিয়ে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। বল ও ব্যাট হাতে নৈপুণ্য দেখানোয় রুমানা আহমেদ ম্যাচসেরা হন। নারী এশিয়া কাপে ফাইনালে উঠেই ইতিহাস গড়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছিল। ফাইনালে ভারতকে হারানো মানেই হচ্ছে ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ করা। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেই শিরোপা জিতলেই সেই ইতিহাস লেখা হয়ে যাওয়া। সেই ইতিহাস লিখলও বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটাররা। পুরুষ দল যেখানে বারবার শিরোপার কাছে গিয়েও তা অর্জন করতে পারেনি। শেষ বলে গিয়ে, শেষ বেলায় গিয়ে দম ফুরিয়েছে বারবার। সেখানে নারী ক্রিকেটাররা অর্জনের খাতায় নিজেদের ইতিহাসের সঙ্গী করে ফেলেছেন। লীগপর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে প্রথম ম্যাচটি হারের পর টানা চার ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াকে সর্বশেষ হারিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে। লীগপর্বে ভারতকেও হারিয়েছে। তাই আশা ছিল লীগপর্বে শুধু বাংলাদেশের কাছে হারা ভারত ফাইনালেও হারতে পারে। হারলেই তো বাংলাদেশের ইতিহাস। প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতা হয়ে যায়। তবে আবার একটু শঙ্কাও ছিল। ভারত যে ফাইনালে জেতা দল সবসময়। বাংলাদেশ যেখানে প্রথমবার ফাইনালে খেলেছিল, সেখানে ভারত প্রতিবারই ফাইনালে খেলেছিল। এবার নিয়ে সপ্তমবারের মতো হয়েছে এশিয়া কাপ। প্রথম চারবার (২০০৪, ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৮ সাল) ওয়ানডে ফরমেটে হয়েছে এ টুর্নামেন্ট। এবারসহ পরের তিনবার (২০১২, ২০১৬ ও ২০১৮ সাল) হয়েছে টি২০ ফরমেটে। প্রতিবারই ভারত ফাইনালে খেলেছে। টানা ছয়বার চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। নারী এশিয়া কাপ টুর্নামেন্ট মানেই ভারত চ্যাম্পিয়ন। সেই কথা সবারই মুখে ছিল। কিন্তু এবার এমন এক দলের বিপক্ষে ফাইনাল খেলেছে ভারত, যে দলটি প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলেছে। লীগপর্বে হারিয়েছেও। এবার আর ভারতকে চ্যাম্পিয়ন হতে দেয়নি বাংলাদেশ। টানা ছয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দল ভারতকে এবার হারিয়ে সপ্তম আসরের শিরোপা ঘরে তুলেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক সালমা খাতুন দেশ ছাড়ার আগে ফাইনালে খেলার স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘এশিয়া কাপে আমাদের প্রথম লক্ষ্য ভাল খেলা। যদি আমরা ভাল খেলতে পারি, নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি তাহলে যে কোন দলকেই হারানো সম্ভব। যদি ম্যাচের ফল আমাদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে অবশ্যই ফাইনালে খেলা সম্ভব।’ সেই প্রতিশ্রুতি তো সালমাবাহিনী রক্ষা করেছেই। এমনকি বাংলাদেশকে শিরোপাও উপহার দিয়েছে। যেন ঈদ উপহার মিলে গেল দেশবাসীর। নারীদের এশিয়া কাপ সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বাংলাদেশ নারী দল টুর্নামেন্টে অংশ নেয়নি। প্রথম তিনবার খেলেনি। ২০০৮ সালে প্রথমবার অংশ নিয়ে পাকিস্তানকে হারায়। ২০০৮ সালের এশিয়া কাপ পর্যন্ত ওয়ানডে ফরমেটে খেলা হয়। এরপর ২০১২ সালের টুর্নামেন্ট থেকে এশিয়া কাপ টি২০ ফরমেটে হচ্ছে। প্রথম টি২০ এশিয়া কাপেই বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলে। প্রথমবার গ্রুপপর্বে খেলা হয়। সেমিফাইনালও থাকে। কিন্তু দ্বিতীয় আসর থেকেই লীগপর্বে খেলা শুরু হয়। তাতে করে পয়েন্ট তালিকায় সেরা দুইয়ে থাকা দল দুটি ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। বাংলাদেশ তাই দ্বিতীয় আসরে দুটি ম্যাচ জিতেই সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু এবার টানা চার ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ে। এরপর ফাইনালে জিতে শিরোপাই নিজেদের করে নেয়। নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াকে হারিয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপাও জিতে নেয়। দেশের জন্য গৌরব এনে দেন নারী ক্রিকেটাররা।
×