ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিএমপির সিসি ক্যামেরার নিচেই ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১ জুন ২০১৮

সিএমপির সিসি ক্যামেরার নিচেই ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপিত ক্যামেরার নিচেই চলছে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুমের রেকর্ড অনুযায়ী পুলিশের অপরাধ কখনওই মনিটরিং করা হয়না বলে খোদ পুলিশ কর্মকর্তাদেরই অভিযোগ। তাহলে পুলিশের অপরাধ রেকর্ডেই থেকে যাবে এমন প্রশ্ন টোকাই থেকে শুরু করে পুরো নগরবাসীর। সিএমপি’র সিসি টিভি ক্যামেরা কন্ট্রোল রুমের হিসেব অনুযায়ী ১১৩টি ক্যামেরার অর্ধেকেরও বেশি অচল। এছাড়াও অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা নিজেদের ফায়দা লুটতে ইচ্ছাকৃতভাবে সিসি ক্যামেরার কানেকশন খুলে দিয়েছে আবার কিছু ক্যামেরার দিক পরিবর্তন করে দিয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে খ্যাত কাস্টমস, জিইসি, আকবরশাহ, অলংকার এমনকি যেখানেই সিসি ক্যামেরা আছে সেখানেই পুলিশের চাঁদাবাজির চিত্র রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু এসব পোশাকধারী অপরাধী পুলিশ দমনে কোন পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়তলীর রেলওয়ে কবরস্থানের পাশেই পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণমুখী করে তিনটি সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে সিএমপির। কিন্তু এসব ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল অপরাধীদের অপরাধ দমনে। কিন্তু ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী অপরাধীরা সতর্ক হলেও সচেতন হয়নি পুলিশ। উল্টো দাপটের সঙ্গেই পুলিশের চাঁদাবাজি চলছে এসব সিসি টিভি ক্যামেরার নিচে। প্রমাণ হিসেবে রয়েছে মঙ্গলাবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ট্রাফিক সার্জেন্ট তৌহিদুল ও কনস্টেবল বাবুল পাহাড়তলীর রেলওয়ে কবরস্থানের পূর্ব কোণে একের পর এক পিকআপ ও ট্রাক থামাচ্ছিলেন। আর নানা ছলচাতুরী করে অর্থ আদায়ে মেতে উঠলেও আইনের পোশাকের কারণে প্রত্যক্ষদর্শীদের কিছুই করার নেই। এক পর্যায়ে পশ্চিমমুখী ক্যামেরা থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে বগুড়া (বগুড়া-ড-১১-১৬২৬) থেকে আসা একটি মিনি ট্রাক থামানো হলো। ট্রামে ৩৫টি ড্রামে পাঙ্গাস মাছের পোনা নিয়ে আসছিলেন বাঁশখালীর জনৈক মামুন। মিনি ট্রাকটির চালক ছিলেন দেব কুমার। গাড়িটির ডকুমেন্ট ফেল তথা নবায়নের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে এমন তথ্য হেলপারের। কনস্টেবল বাবুল তিন হাজর টাকা দাবি করেছেন সার্জেন্ট তৌহিদুলের জন্য। এই টাকা দেয়া না হলে মামলার হুমকি। আর দাবিকৃত টাকা দিলে নতুন কর্ণফুলী ব্রিজ পর্যন্ত এই ট্রাক ট্রাফিক আইনের বিপদমুক্ত। অবশেষে ২ হাজার টাকায় দফারফা হয়। অবশেষে সকাল সাতটায় টাকা চলে যায় কনস্টেবল হয়ে সার্জেন্টের পকেটে। আর মিনি ট্রাকটি চলে যায় গন্তব্যে। এরপর মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানে কবরস্থানের কোণায় তথা ব্যস্ততম জাকির হোসেন রোডের শহীদ লেন নুতন রাস্তার মোড়ে টার্নিং পয়েন্টে আরেকটি মিনি পিকআপকে থামানো হলে পুরো সড়কে জ্যাম লেগে যায়। কিন্তু নাছোড়বান্দা পুলিশ তাদের কাজেই ব্যস্ত ছিলেন। এর মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে কবরস্থানের পশ্চিম কোণে সিমেন্টবাহী একটি মিনি ট্রাক বিকল হয়ে যায়। ট্রাফিক সার্জেন্ট তৌহিদুল মোটরসাইকেল নিয়ে দৌড়ে যান ট্রাকটির কাছে। ট্রাকটির (চট্টমেট্রো-) সামনের চাকা পাংচার হওয়ার কারণে রাস্তার একপাশে চালক চাকা পরিবর্তনের চেষ্ট করছিল। কিন্তু গাড়ির ডকুমেন্ট ঠিক থাকায় এই যাত্রায় বেঁচে গেলো চালক। তবে মঙ্গলবার সকালের পুলিশের অনিয়মের কারণে যানবাহন চালকরাও অনিয়ম শুরু করেছে অর্থের বিনিময়ে। কারণ, যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার দ-নীয় অপরাধ হলেও পুলিশের এ বিষয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য গাড়িতে হুটার ও বিকন লাইট ব্যবহার করা নিষিদ্ধ হলেও সম্প্রতি রেন্ট এ কার-এর গাড়িতেও ব্যবহার হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগের চরম অব্যবস্থাপনার কারণেই এ ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। এতে ফায়দা লুটছে অর্থের বিনিময়ে একশ্রেণীর ট্রাফিক ও থানা পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, অপরাধীদের অপরাধ কর্মকা- ছাড়াও পুলিশের অপরাধ বন্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপই কার্যকর হচ্ছে না। সড়কের মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে। কিন্তু সিসি ক্যামেরার সামনেই চলছে থানা ও ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। এছাড়াও ওয়ানওয়ে সড়কে বিপরীত থেকে গাড়ি চলাচলে পুলিশের অনিয়মও কম নয়। বিশেষ করে ডবলমুরিং থানা পুলিশের দেওয়ানহাট ব্রিজ অতিক্রমের চিত্র নিত্যদিনের। অপরদিকে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে খুলশী থানা পুলিশের গাড়ি তল্লাশি ও দেহ তল্লাশির নামে অসাধু পুলিশের লাগাম টেনে ধরতে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেই সিএমপির।
×