ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের গিফটের তালিকায় বগুড়ার চিকন সেমাই

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৩১ মে ২০১৮

ঈদের গিফটের তালিকায় বগুড়ার চিকন সেমাই

সমুদ্র হক, বগুড়া ॥ দেশের জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের বগুড়ার পরিচিতি ‘ল্যান্ড অব পুন্ড্র সিভিলাইজেশন’। তার সঙ্গে বগুড়ার ঐতিহ্যের সম্পৃক্ততায় নানা পণ্য এসেছে। এর অন্যতম একটি ‘বগুড়ার দই’। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যের দইয়ের পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বগুড়ার চিকন সেমাই। নিকট অতীতে যে সেমাইয়ের কদর ছিল স্বল্প রোজগেরে মানুষের কাছে সেই চিকন সেমাই এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ বিভূঁইয়ের গর্বিত পরিচয়ে পৌঁছেছে। চিকন সেমাই এখন গ্রামের হাট বাজার থেকে নগরীর শপিংমল হয়ে রাজধানীর পাঁচ তারকাখচিত হোটেলে মেলে। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সকলের ঘরে বগুড়ার চিকন সেমাই সমান জনপ্রিয়। শিশু থেকে বয়স্ক সকলের দাবি চিকন সেমাই চাই-ই চাই। গেল ক’বছর ধরে এই চিকন সেমাই ঈদের ‘গিফটের’ খাতায় নাম লিখিয়েছে। নিকট অতীতে বগুড়ার গ্রামের নারী কাপড় কাছার বড় পিঁড়ি পরিষ্কার করে তার ওপর ময়দা ছেনে হাতের তাঁলুর ডলান দিয়ে বানাতো এই সেমাই। নিখুঁত হাতের কারুকাজে সেমাই এতটাই চিকন হয়ে উঠতো যে ভাবনাতেও আসত না হাতে বানানো। গেল শতকের ৮০’র দশকেও কদর ছিল না এই সেমাইয়ের। ঈদের দু-একদিন আগে গ্রামের কিষান বধূর হাতে তৈরি সেমাই কৃষক ডালায় ভরে কাঁধে তুলে নিয়ে আসতো শহরে। পসরা নিয়ে বসত পথের ধারে। শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীও এই সেমাই কিনত না। দিন মজুর, স্বল্প আয়ের লোকজনই ছিল এই সেমাইয়ের ক্রেতা। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে এই চিকন সেমাই মধ্যবিত্তের ঘরে প্রবেশ করতে থাকে। শহরের কিছু দোকানিও এই সেমাই তোলে। একই সময়ে বগুড়ার কালিতলা এলাকার একটি ইঞ্জনিয়ারিং ওয়ার্কশপ দুই মোটরে চালিত সেমাই বানানোর যন্ত্র আবিষ্কার করে। দিনে দিনে গ্রামে ও শহরে এই চিকন সেমাই তৈরির বিস্তার ঘটে। চাহিদাও বাড়ে। বগুড়া ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যায়। চাহিদার প্রয়োজনে সেমাই তৈরির যন্ত্র বড় আকারে বিদ্যুত চালিত আধুনিকায়ন হয়ে যায়। এরপর চিকন সেমাইকে আর পিছনের ফিরে তাকাতে হয়নি। পরিচিতি ছাড়িয়ে পড়ে সারা দেশে ও বিদেশে। যারা বগুড়ার বাইরে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকেন তারা পরিচিতজনের কাছে বগুড়ার চিকন সেমাইয়ের আগাম বুকিং দিয়েছেন। বিদেশ বিভুঁইয়ে যারা থাকেন তারাও ঈদ মৌসুমে স্বজনদের কাছে এয়ার ফ্রেইটে চিকন সেমাই পাঠানোর ইনডেন্ট দেন। বগুড়ার মানুষের আত্মীয় স্বজন যারা কর্মক্ষেত্র ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় থাকেন ঈদে নিজের বাড়িতে আসতে না পাড়লে তাদেরও এই চিকন সেমাইয়ের আবদার থাকে। ঈদের আগে কুরিয়ার সার্ভিসসহ নানা মাধ্যমে চিকন সেমাই তাদের কাছে পাঠাতেই হবে। বর্তমানে ভর বছর এই চিকন সেমাই মেলে। রমজান মাসে চাহিদা বেড়ে যায়। ট্রাকে করে এই সেমাই যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলায়। চাহিদার প্রয়োজনে ঈদের প্রায় দুই মাস আগে চিকন সেমাই তৈরির হিড়িক পড়ে। বগুড়ার প্রতিটি এলাকায় ‘সেমাই পল্লী’ গড়ে উঠেছে। শহরতলির সাবগ্রাম, বেজোড়া, শ্যাওলাগাতি, কালিসামাটি, ফুলবাড়ি, ফুলতলা এলাকায় শ্রমিকরা সেহরির পর কাজ শুরু করে। একটানা কাজ চলে বিকাল পর্যন্ত। প্রতিটি ছোট কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ৫শ’ কেজি করে সেমাই তৈরি হয়। প্রতিদিনের উৎপাদন ৬০ থেকে ৮০ টন (৬০ থেকে ৮০ হাজার কেজি)। প্রতি কেজি সেমাই খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭৫ টাকা দরে।
×