ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অসচ্ছল দরিদ্র রোগীদের ডায়ালাইসিসের ভরসা স্থল

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২৬ মে ২০১৮

অসচ্ছল দরিদ্র রোগীদের ডায়ালাইসিসের ভরসা স্থল

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ২৩ বছর বয়সী নাজমুন্নাহার দীর্ঘ দশ বছর ধরে কিডনি রোগে ভুগছেন। তার বাড়ি বরিশালে হলেও পরিবারসহ থাকেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। চার ভাই বোনের মধ্যে সেজো নাজমুন্নাহার। তাদের সংসার চলে ভাইয়ের আয়ে। ভাই গার্মেন্টে চাকরি করে। কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণে ডিগ্রীতে ভর্তি হয়েও লেখাপড়া বন্ধ হয়েছে তার। গত চার বছর ধরে তার ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করিয়েছেন। কোথাও বিনা পয়সায় করাতে পারেননি। ২০১৭ সালের ১৭ জুন থেকে তিনি গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারে ডায়ালাইসিস শুরু করেছেন। তার আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় এখান থেকে তাকে একেবারে বিনামূল্যে ডায়ালাইসিস করে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারে কথা হয় তার সঙ্গে। ২০১৭ সালের ১৩ মে ১০০ আসনের এই ডায়ালাইসসি সেন্টার শুরু হয়। এখন এখানে ১০৮ আসন রয়েছে। এর মধ্যে এইচআইভি পজেটিভ রোগীদের জন্য ২৩টি আলাদা বেড, আলাদা দুটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া তিনটি কেবিনের ব্যবস্থা রয়েছে। এইচআইভি পজেটিভ জোনে কথা হয় শরিফুল ইসলামের (৩৭) সঙ্গে। তার বাড়ি কুমিল্লায়। তিন বছর হয়েছে এইচআইভি পজেটিভ ধরা পড়েছে। আর কিডনির সমস্যা সাড়ে চার বছর ধরে। ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন আড়াই বছরে ধরে। তিনি বলেন, আগে কুমিল্লায় ডায়ালাইসিস করাতাম। সেখানে লাগত ৩ হাজার ১০০ টাকা। আর এই প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকে এখানে করাচ্ছি মাত্র ১১ টাকা করে। যখন ডায়ালাইসিস করাতে হয় তখন কুমিল্লা থেকে এসে করিয়ে যাই। শুধু নাজমুন্নাহার বা শরিফুল নয়, এখানে তাদের মতো অনেক কিডনি রোগী সামর্থ্য অনুযায়ী কম খরচে ডায়ালাইসিস করাতে পারছেন। যা বাইরে করাতে গেলে লাগত প্রতি সার্কেলে তিন থেকে সাত হাজার টাকা। তাই এই সেন্টারটি এখন অতিদরিদ্র, দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের ভরসার জায়গা। রোগীদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ছয় ভাগে ভাগ করে সার্কেল প্রতি ডায়ালাইসিসের চার্জ নেয়া হয়। অতিদরিদ্রের কোন চার্জ লাগে না। দরিদ্র রোগীর কাছ থেকে নেয়া হয় সার্কেল প্রতি ৫৩৪ টাকা, নিম্ন মধ্যবিত্ত রোগীর জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা, মধ্যবিত্তের জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা, উচ্চ মধ্যবিত্তের ২ হাজার ৫০০ টাকা। আর উচ্চবিত্তের জন্য ৩ হাজার টাকা চার্জ নেয়া হয়। গত একবছরে এই ডায়ালাইসিস সেন্টার থেকে ১২৬৬ রোগী ৬৩ হাজার ১২৫টি ডায়ালাইসিস নিয়েছেন। নারী ও পুরুষের সমাহারে হলেও মাত্র ৩০ শতাংশ রোগী ডায়ালাইসিস সুবিধা নিচ্ছেন। কিছু রোগীর একটি, কয়েকজন তিনটি এবং অধিকাংশ সপ্তাহে দুইটি করে ডায়ালাইসিস নেন। সব সামাজিক শ্রেণীর নারীরা চিকিৎসার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। মোট রোগীর ৮ শতাংশ ঢাকার বাইরের জেলা থেকে এসে ডায়ালাইসিস করেন। গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিসি সেন্টারের অফিস থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত নিবন্ধিত ১২শ’ ৬৬ রোগীর মধ্যে ৮৮৫ পুরুষ এবং ৩৮১ মহিলা। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশের বেশি রোগীর বয়স ৪০ বছরের অধিক। এই ১ হাজার ২৬৬ রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ১৪৬ জন। এর মধ্যে ১৭ জন মারা গেছে এই সেন্টারে। আর বাকিরা মারা গেছেন বাড়িতে বা অন্য হাসপাতালে। অফিস থেকে আরও জানা যায়, দরিদ্র রোগীদের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৮৮ নিম্নবিত্তরা, ৬২ দশমিক ৯ মধ্যবিত্তরা, ৬০ শতাংশ উচ্চবিত্তদের ৬৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ সপ্তাহে দু’বার ডায়ালাইসিসি নিয়ে থাকেন। ৬৩ শতাংশ অতিদরিদ্র নিয়ে রোগী সপ্তাহে তিনবার নিয়ে থাকেন। দরিদ্র রোগীদের ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ, নিম্ন মধ্যবিত্তদের ২৬৫ দশমিক ৫, মধ্যবিত্তদের ২৯৫ শতাংশ এবং উচ্চবিত্তরা ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।
×