ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুরু হলো পবিত্র মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৮ মে ২০১৮

শুরু হলো পবিত্র মাহে রমজান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রহমত, বরকত আর নাজাতের বারতা নিয়ে দীর্ঘ ১১ মাস পর ঘরে ঘরে আবার এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। সিয়াম সাধনার মাস। বৃহস্পতিবার দিবাগত শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আরবি ১৪৩৯ হিজরির রমজানের পবিত্রতা। দিনব্যাপী পানাহার বন্ধের মধ্য দিয়ে সংযম আর আত্মশুদ্ধির এই চর্চা চলবে মাসব্যাপী। রমজানুল মোবারক। গত বুধবার রমজানের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় শুক্রবার থেকে রমজান শুরুর সিদ্ধান্ত জানায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতেই রোজা পালনের জন্য এশার নামাজের পাশাপাশি তারাবির নামাজেও শরিক হন মুসল্লিরা। ভোররাতে সেহরি খেয়ে আজ শুক্রবার থেকে রোজা করছেন তারা। সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন ধরনের খাদ্য-পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থেকে মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছেন। মসজিদে মসজিদে তারাবি জামায়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রমজানের আনুষ্ঠানিকতা। শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে আজকের দিনের উপবাস। দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকা ছাড়াও জাগতিক মোহ, কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা দমন করে আত্মশুদ্ধির সাধনা চলবে পুরো রমজান মাসে। রোজা রাখার পাশাপাশি সাধ্যমতো দান-খয়রাত ও বেশি বেশি নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এই মাসের দিনগুলো অতিবাহিত করবেন মুসল্লিরা। এ দিকে পবিত্র রমজান উপলক্ষে বানী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। এ ছাড়া বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে দেশবাসীকে। ইসলাম ধর্মমতে, রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন রহমত, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত এবং শেষ ১০ দিন মুক্তির সওগাত নিয়ে আসে। রহমত ও বরকতের দিক দিয়ে রমজান মাস বছরের অন্য ১১ মাস থেকে ভিন্ন। এ সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, রমজান মাসের প্রথমাংশে রহমত, দ্বিতীয়াংশে মাগফিরাত অর্থাৎ ক্ষমা আর তৃতীয়াংশে নাজাত তথা দোজখ থেকে মুক্তি। রমজানের পাশাপাশি মুসলমানদের মধ্যে মাসব্যাপী উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী ইফতার পার্টি, সেহরি পার্টিও থাকবে জমজমাট। এ ছাড়া পথে ঘাটে হোটেল রেস্তরাঁয় থাকবে জমজমাট ইফতারের আয়োজন। আনাচে-কানাচে এসব ইফতারির পসরায় থাকবে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পেঁয়াজু, জিলাপি, হালিম, খেজুরসহ রকমারি খাবার। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পবিত্র রমজান উপলক্ষে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব পাশে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার রোজাদার মুসল্লির জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ধনী গরিব সবাই এক সঙ্গে ইফতারের সুযোগ পাবেন। রমজান উপলক্ষে রোজাদারদের স্বাগত জানাতে রাজধানীর হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বিপণিবিতানগুলোতে বিশেষ আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে রোজাদারদের আকর্ষণ করতে এসব হোটেল, রেস্টুরেন্টে প্যান্ডেল সামিয়ানা টানিয়ে ইফতারের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। দীর্ঘ এক বছর পর আবারও বাহারি আয়োজনে আজ থেকে চকবাজারে বসছে ঐতিহ্যবাহী ইফতারির পসরা। পবিত্র রমজান উপলক্ষে রাজধানীর মার্কেট ও শপিংমলগুলোও নতুন করে সাজছে। রমজানের পাশাপাশি এক মাসব্যাপী চলবে কেনাকাটাও। ইতোমধ্যে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে সরকারী আধা সরকারী অফিসের নতুন সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়সূচী অনুযায়ী রমজান মাসে সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত অফিস চলবে। এ ছাড়া মানুষের দৈনন্দিন জীবন ধারাতে একমাস পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। এ দিকে রমজানে বিদ্যুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এ দিকে এক বানীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ রমজানের পবিত্রতা ও তাৎপর্য অনুধাবন করে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সঠিক প্রতিফলন ঘটানোর এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। মাহে রমজান উপলক্ষে দেশবাসীসহ মুসলিম উন্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ রাষ্ট্রপতি জানিয়ে বলেন, ‘রমজানের পবিত্রতা সকলের মাঝে উদ্ভাসিত হোক। রমজানের সংযম ও আত্মশুদ্ধির মহান শিক্ষা সমাজের সকল স্তরে ও সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক। আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি সিয়াম ধনী-গরিব সকলের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে পবিত্র রমজানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যাবতীয় ভোগবিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ, উচ্ছৃঙ্খলতা ও সংঘাত পরিহার করে ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনে শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, রমজান আত্মসংযম, অনুকম্পা ও ক্ষমা লাভের মাস। এ মাসে ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষার মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ হয়। জীবনের সর্বস্তরে ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
×