ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ১৬ ইউনিয়নে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ

সম্প্রসারিত এলাকা নিয়ে নতুন রূপ পাচ্ছে রাজধানী

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৬ মে ২০১৮

সম্প্রসারিত এলাকা নিয়ে নতুন রূপ পাচ্ছে রাজধানী

মশিউর রহমান খান ॥ নতুন বর্ধিত এলাকা নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন রূপে সাজছে তিলোত্তমা নগরী রাজধানী ঢাকা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সীমানার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হওয়া প্রতিটি সিটিতে ৮টি করে মোট ১৬টি ইউনিয়নকে মূল ঢাকার সঙ্গে উন্নয়ন সংযোগ স্থাপন করবে সরকার। দুই সিটির নতুন এলাকার উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে শত হাজার কোটি টাকা। নেয়া হচ্ছে নাগরিক সুবিধার সব প্রক্রিয়া। এ লক্ষ্যেই নিবিড়ভাবে কাজ করছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি কর্পোরেশন। সরকারের এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থাগুলোও একযোগে কাজ করবে বলে জানা গেছে। নতুন বৃহৎ সীমানায় পূর্বের সুবিধা বঞ্চিত বসবাসকারীদের জন্য সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তৈরি হবে নাগরিক সুবিধার এক নতুন ঢাকা। তবে নতুন ১৬ ইউনিয়ন সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রিত এলাকা হলেও আপাতত কোন ধরনের সমন্বয় ছাড়াই উন্নয়ন কর্মকা- সম্পন্ন হচ্ছে। বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থা যার যার মতো করে উন্নয়ন কর্মকা- সম্পাদন করছে। এতে পরবর্তীতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তবে নাগরিকের দ্বারপ্রান্তে নগরের ঘোষিত সেবা প্রদান করতে দুই সিটি কর্পোরেশনও একযোগে নিরবিচ্ছন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু ঘোষণায় নয় বাস্তবেই সব নাগরিক সুবিধা প্রদান করে মূল ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নতুন সীমানায় সব ধরনের নাগরিক সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হলে ঢাকাই হবে পৃথিবীর অন্যতম মেগা শহর। নাগরিকের দ্বারপ্রান্তে অধিক পরিমাণ সেবা পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার রাজধানী ঢাকাকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করে সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা করে। ২০১৭ সালের ৯ জুন প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে (নিকার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে ৮টি করে ইউনিয়ন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে একই বছরের ৩০ জুলাই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া ১৬ ইউনিয়নে মোট ৩৬টি নতুন ওয়ার্ড গঠন করে গেজেট প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ নিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ১শ’ ২৯টি। নতুন ওয়ার্ডসহ ঢাকার দুই সিটির আয়তন ১শ’ ২৯ বর্গকিলোমিটার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২শ’ ৭০ বর্গকিলোমিটারে। স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ অনুসারে দুই সিটি কর্পোরেশনের সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তারা কাউন্সিলর নির্বাচনের উদ্দেশে এসব ওয়ার্ড গঠনের সুপারিশ করেন। গেজেটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়নকে ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে বলা হয়। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, বেরাইদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নকে ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন চান দক্ষিণ সিটির নতুন ৮ ইউনিয়নে বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকদের প্রাপ্ত সব সুবিধার চেয়েও বেশি নাগরিক সুবিধাসম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করা। ইতোমধ্যেই তিনি এসব ইউনিয়নে বসবাসকারী নাগরিকদের নগরের ছোঁয়া দিতে ও নাগরিক সুবিধা প্রদানে নানা উন্নয়ন কর্মকা-ও শুরু করেছে সংস্থাটি। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, সম্প্রসারিত এলাকাকে সব নাগরিক সুবিধাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে ঢাকা উত্তরের প্যানেল মেয়র ওসমান গণি নতুন ৮ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। এ সময় মেয়র তাদের উদ্দেশে বলেন, সম্প্রসারিত এলাকাকে সুপরিকল্পিতভাবে আধুনিক নগরীতে রূপান্তরিত করা হবে। এসব এলাকার জনসাধারণ যেন সব ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে সরকার শুরু থেকেই সচেতন রয়েছে। কারণ এটি ডিএনসিসিরই অংশ তাই এর উন্নয়নের দায়িত্ব আমাদের। সভায় চেয়ারম্যানরা স্ব স্ব এলাকায় কি কি উন্নয়ন কর্মকা- সম্পন্ন করা প্রয়োজন তার সম্পর্কে জানতে চাইলে চেয়ারম্যানরা তাদের খোলামেলা মতামত তুলে ধরেন। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীর নাগরিকদের মত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নব সংযুক্ত ইউনিয়নগুলোতেও নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা দক্ষিণের সঙ্গে নতুন সংযুক্ত ৮টি ইউনিয়নের জন্য সরকার ৭শ’ ৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া আরও ৪শ’ কোটি টাকার বেশি কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উক্ত এলাকাগুলোতে বিভিন্ন রাস্তা, নর্দমা, ফুটপাত, এলইডি বাতি স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হবে। নতুন সীমানার সব অলিগলিসহ ছোটবড় রাস্তায় রাতে নির্বিঘেœ চলতে সম্পূর্ণ আধুনিক বাতি স্থাপন করে আলোকিত করা হবে। সব প্রকল্প এলাকায় উন্নয়ন কর্মকা- সম্পন্ন করা গেলে নাগরিক সেবা বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। সাঈদ খোকন বলেন, রাজধানীর আধুনিকতম সুযোগ-সুবিধা নবসংযুক্ত ইউনিয়নগুলিতেও নিশ্চিত করে আলোকিত করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা হিসেবে ইউনিয়নের অধিবাসীদের সব ধরনের নাগরিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মাতুয়াইল ইউনিয়নের ৪৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, ৪৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার নর্দমা ও ফুটপাথ নির্মাণ, ২শ’ ৬৭টি সড়কে ২ হাজার ১শ’ ৮৮টি এলইডি সড়কবাতি স্থাপন কাজ চলছে। এছাড়া সারুলিয়া ইউনিয়নেও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ চলছে। বাকি ইউনিয়নগুলিতেও পর্যায়ক্রমে এ ধরনের উন্নয়ন কাজ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। ডেমরা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ এলাকায়ও কিছু উন্নয়ন কাজের জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাকি উন্নয়ন কাজও অতি দ্রুত শুরু করা হবে। উন্নয়ন কর্মকা-ের পর বর্ধিত সীমানাকে সঙ্গে নিয়ে বর্তমানের চেয়ে আরও উন্নত ও নতুন ঢাকায় রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে। পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন নতুন বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে তিনি সমাজের সব শ্রেণীর নাগরিকদের সহায়তা কামনা করেন।
×