অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বাজার মূলধন ১ বিলিয়ন ডলার ছাঁড়িয়েছে। গত মঙ্গলবার লেনদেন শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৮ হাজার ৫৪৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ারের সর্বশেষ মূল্য ছিল ২১৪ টাকা। আর এতেই কোম্পানিটি বিলিয়ন ডলার কোম্পানির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলো।
তবে এই নতুন এলিট তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পেছনে সক্রিয় ছিল ডিএসইর বেশ কয়েকটি বড় ব্রোকারেজ হাউস। কারণ গত কিছুদিন ধরেই এইসব ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমেই ইউনাটেড পাওয়ারের অধিকাংশ শেয়ারের লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে আগ্রাসী ক্রেতার ভূমিকাতে দেখা গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল কোম্পানিটির এই শিল্প পরিবারের মালিকাধীন ব্রোকারেজ হাউস ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ। এছাড়া ইবিএল সিকিউরিটিজ, আইডিএলসি সিকিউরিটিজসহ বেশ কিছু ব্র্রোকারেজ হাউসে শেয়ারটির বেশি সংখ্যক শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মে কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি শেয়ার কিনেছে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। শুধুমাত্র ওই দিনে ব্রোকারেজ হাউসটিতে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭২৫টি ইউনাইটেড পাওয়ারের শেয়ার কেনা হয়। দ্বিতীয় প্রধান ক্রেতার তালিকায় ছিল লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ। এই হাউসের পক্ষে মোট ২ লাখ ৩ হাজার ৭৭৭টি শেয়ার কেনা হয়েছিল। তবে এর বাইরে আর কেউ ১ লাখের বেশি শেয়ার কেনার তালিকায় ছিল না। ৭৩ হাজার ৮১০টি শেয়ার কিনে তৃতীয় তালিকায় ছিল ব্র্যাক ইপিএল। একই দিনে শান্তা সিকিউরিটিজ কিনেছে ৫৬ হাজার ৭০০টি শেয়ার কিনেছে। ইউনিয়ন ক্যাপিটাল কিনেছে মোট ৫১ হাজার ৭০০টি শেয়ার কিনেছে।
৬ মে অবশ্য সর্বোচ্চ শেয়ার কেনার তালিকায় ছিল ব্র্যাক ইপিএল লিমিটেড। এই দিনে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫৫টি শেয়ার কিনেছিল। তবে এই দিনেও শেয়ার ক্রেতার দ্বিতীয় তালিকায় ছিল ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। দিনটিতে মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৮টি শেয়ার কিনেছিল। মোট ৭০ হাজার শেয়ার কিনে তৃতীয় স্থানে ছিল শান্তা সিকিউরিটিজ। সিটি ব্রোকারেজ হাউসের পক্ষে মোট ৫৯ হাজার ৩৫০টি শেয়ার কেনা হয়েছে। গত ৩ মে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আইডিএলসির পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি শেয়ার কেনা হয়েছে। এই দিনে মোট ১ লাখ ৩৩ হাজারটি শেয়ার কেনা হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড। দিনটিতে মোট ৭৮ হাজার ১৫৫টি শেয়ার কেনা হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ইপিএল কিনেছে মোট ৭০ হাজার ৭৮৩টি। এরপরে চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে ছিল আইডিএলসি।
এদিকে শেয়ার কেনার বিপরীতে গত ৮ মে কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি বিক্রি করেছে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ। হাউসটি শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে মোট ২ লাখ ৪ হাজার ৯টি শেয়ার বিক্রি করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ। কোম্পানিটির ১ লাখ ৬০ হাজার ১০টি শেয়ার বিক্রি করেছে হাউসটি। ৩ মে কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি করেছে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ। কোম্পানিটির মোট ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৬৬টি শেয়ার বিক্রি করেছে। ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ মোট ৫০ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছে এই দিনে। অর্থাৎ শেয়ার কেনা-বেচার তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, গত কয়েকদিনে কোম্পানির উল্লেখযোগ্য শেয়ার কেনা-বেচার সম্পন্ন হয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর এক শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের কারণে কোন কোম্পানির লেনদেন ও দর বাড়তে পারে। তবে সেটির পেছনে কোন কারসাজি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের। কোম্পানির শেয়ার একই শিল্প পরিবারের কোন ব্রোকারেজ হাউসে অতিরিক্ত কিনতে পারে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিলার একাউন্টে সেটি করতে পারে না। তবে বিনিয়োগকারীদের একাউন্টে তা কিনতে পারে। সেক্ষেত্রে দোষের কিছু নেই।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৮০০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৩৯৯ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৩৯ কোটি ৯২ লাখ ৩৯ হাজার ১৬৮টি। এর মধ্যে পরিচালনা পর্ষদের কাছে রয়েছে ৯০ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ শেয়ার। তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ, ১৮) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৮৮ পয়সা। এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৭৭ পয়সা।
আর গত ৯ মাসে (জুলাই, ১৭ মার্চ, ১৮) ইপিএস হয়েছে ৮ টাকা ৪১ পয়সা। এর আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৮ টাকা শূন্য ৫ পয়সা। ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৩৭ টাকা ৭১ পয়সা।
