ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা

এডিসের লার্ভা নির্মূলে ব্যর্থ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১২ মে ২০১৮

এডিসের লার্ভা নির্মূলে ব্যর্থ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন

মশিউর রহমান খান ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংসের বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়নে তেমন সফল হতে পারছে না। প্রতিবছর পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয়ের পাশপাশি জেল জরিমানা ও সচেতনতামূলক নানা উদ্যোগ নিয়েও একপর্যায়ে ব্যর্থ হচ্ছে ডিএসসিসি। এ নিয়ে সংস্থাটি উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। লার্ভা ও মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের বিশেষ অভিযানের ডিএসসিসি একটি অঞ্চলের ১৮ বাড়িতে অনুসন্ধান চালিয়ে এগারোটিতেই মশার লার্ভার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে। অঞ্চল-১ এর কমিটির এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে মশার লার্ভা পাওয়ার এ চিত্র উঠে এসেছে। গত ৭ মে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর সংস্থাটির অঞ্চল-১ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল মজুমদার (উপসচিব) স্বাক্ষর করে প্রতিবেদনটি পাঠান। ডিএসসিসির মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কমিটি ধানম-ি, কলাবাগান, পরিবাগ ও এলিফ্যান্ট রোডে পৃথক তিনটি পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন চিত্র পেয়েছে। মশার উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সংস্থার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এ রকম চিত্র যদি সব জায়গায়ই ধরা পড়ে তবে এ বছরও নগরবাসীর মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক কঠিন হবে এবং চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ এবারও শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ডিএসসিসি আগাম কার্যক্রম হিসেবে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত নানা রোগের প্রকোপ থেকে নাগরিকদের মুক্তি দিতে এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংসের কার্যক্রম হাতে নেয়। এতে স্থানীয় কাউন্সিলরদের প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে কমিটি গঠন করে সংস্থাটি। এতেই এই চিত্র ফুটে উঠেছে। সূত্র জানায়, ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর কমিটি অঞ্চলটির ১৮ বাড়ি পরিদর্শন করে। তারা ১১ বাড়িতেই মশার লার্ভা পেয়েছেন। এসব বাড়ির পানির ড্রাম, ফুলের টব, ঘরের আশপাশে পড়ে থাকা মাটির ভাঙ্গা হাঁড়ি-পাতিল, পরিত্যক্ত কলসি, বালতি, বোতল, কনটেনার, টায়ার, পলিথিন ব্যাগ, ছোট-বড় গর্ত, নালা ও পুকুরে জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি গত ৮ এপ্রিল সংস্থাটির অঞ্চল-১ এর ১৫ নং ওয়ার্ডের ৭টি বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। এর মধ্যে যে সব বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে, সঙ্গে সঙ্গে সেসব ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বাড়ির মালিকদের তাদের আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজন বাড়ি মালিককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হয়। একই চিত্র দেখা গেছে কলাবাগান এলাকাতেও। গত ২২ এপ্রিল এ এলাকার ৬ বাড়ি পরিদর্শন করেন। ৬ বাড়ির মধ্যে ৪ বাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়া যায়। লার্ভা ধ্বংস করে বাড়ির মালিকদের প্রতিনিয়ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। এ ছাড়া ৪৫ নম্বর বাড়ির নির্মাণ সামগ্রী রাস্তা ও ড্রেনে ফেলে রাখায় ও উত্তর ধানম-ির ১১৮ নম্বর বাড়িতে অবৈধ ওষুধ কারখানা পাওয়া যাওয়ায় বাড়ির মালিকদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়। ডিএসসিসির ২১ নং ওয়ার্ডে শাহবাগের পরিবাগ, এলিফ্যান্ট রোড ও নিউমার্কেট এলাকায় ৬ মে কমিটির সদস্যরা ৫ বাড়ি পরিদর্শন করে চারটিতেই লার্ভা পেয়েছেন। সিটি কর্পোরেশনের প্রতিবেদনটি দেখে অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সংস্থার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাদের মতে, এ রকম চিত্র যদি সব জায়গায়ই হয় তাহলে নগরবাসীর মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক কঠিন হবে। তাদের আশঙ্কা, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ এবারও ছড়িয়ে পড়বে। উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের জুলাইয়ের দিকে নগরজুড়ে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপের পর ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ, তথ্য জানাতে আক্রান্তদের ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদানসহ নানা উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। পাশাপাশি সংস্থাটি অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংসের বিশেষ কার্যক্রম হাতে নয়। প্রতিবছর পর্যাপ্ত অর্থ খরচের পাশাপাশি জেল জরিমানা ও সচেতনতামূলক নানা উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। এ জন্য মশার প্রকোপ বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে মশাবাহিত নানা রোগ।
×