ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় কাউন্সিল উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকতে ছাত্র সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান

ভাংচুর চলবে না ॥ ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১২ মে ২০১৮

ভাংচুর চলবে না ॥ ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকার জন্য দেশের ছাত্রসমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- বা ভাংচুরের ঘটনা বরদাশত করা হবে না। কোন বিষয়েই বেশি বাড়াবাড়ি করা ভাল না। এসব কর্মকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, সে যত বড় দলের বড় নেতা হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে ছাত্রলীগের আগামী নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হোক সেটা আমি চাই। স্যাক্রিফাইস (ত্যাগ) ছাড়া বড় নেতা হওয়া যায় না। এবার ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়সসীমা ২৮ বছর করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই কমিটি ২ বছর ৯ মাস হয়ে গেছে। এতে অনেকের এক বছর নষ্ট হয়েছে। সে কারণে এক বছর বেশি বয়সীদেরও পদপ্রত্যাশীর তালিকায় রাখা হবে। শুক্রবার বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় কাউন্সিল উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারের ধারাবাহিকতার প্রয়োজনের কথা পুনরুল্লেখ করে আরও বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয় আমরা তা প্রমাণ করেছি। ওরা (বিএনপি-জামায়াত) ক্ষমতায় এলে দেশে আবারও সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি হবে, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মদদদাতারা ক্ষমতায় এসে দেশকে আবার ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। এরা দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চায়। আগেও তারা সে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু জনগণ তা হতে দেয়নি। দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কেউই তা রুখতে পারবে না। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার দিকে দেশের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের পরিচালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কাজী এনায়েত, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান কমিশনার আরিফুর রহমান লিমন ও অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ বাপ্পি। সম্মেলনের শুরুতেই সংগঠনের সঙ্গীত ‘ছাত্রলীগ, জয় জয় ছাত্রলীগ’ পরিবেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তালি দিয়ে গানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান। এরপর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। ছাত্রলীগ সম্মাদিত বইয়ের উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁকে সম্মেলনের ব্যাজ পরিয়ে দেয়া হয়। এরপর ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক উপকমিটির সদস্যদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় ‘ধন্য বাংলাদেশ ধন্য... শেখ মুজিবের জন্য’, ‘এ মাটি নয় জঙ্গীবাদের, এ মাটি মানবতার’ শীর্ষক গীতিনৃত্য প্রত্যক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক রিপোর্ট তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দফতর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও আকর্ষণীয়, বর্ণাঢ্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের সম্মেলনে সংগঠনের ৮৭টি জেলা ইউনিটের প্রায় ৪০ হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটর ছাড়াও সাবেক ও বর্তমান প্রায় লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য এক সংগঠনের নাম ছাত্রলীগ। তাই বর্তমান ও সাবেক ছাত্র নেতাদের পদচারণায় মুখর পুরো উদ্যানই যেন পরিণত হয়েছিল ছাত্রলীগের মিলন মেলায়। সম্মেলনকে ঘিরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে সাজানো হয় বর্ণাঢ্য ও মনোরমভাবে। সম্মেলনস্থলের আশাপাশের সড়কসহ গোটা মহানগরীকে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নানা রঙের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন এবং ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পতাকা দিয়ে মোড়া ছিল পুরো রাজধানী। নানা জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য তোরণ। চারটি গেট দিয়ে দুপুর থেকেই ছাত্রলীগের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটররা সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল চারটায় সম্মেলনস্থলে পৌঁছানোর আগেই প্রায় ৫০ হাজার স্থান সাংকুলান সম্মলিত সুবিশাল প্যান্ডেল পরিপূর্ণ হয়ে আশপাশের কোন জায়গায় খালি ছিল না। সারাদেশ থেকে আগত বিপুলসংখ্যেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে সামাল দিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে বেশ বেগ পেতে হয়। প্রধানমন্ত্রী ঠিক চারটায় সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হলে স্লোগানে স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের শেষ দিকে মুষলধারে বৃষ্টি নামলেও হাজার হাজার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর উৎসবমুখর পরিবেশের এতটুকুও বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেনি। বক্তব্যে পর্ব শেষে রাতে মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশের ছাত্রসমাজের উদ্দেশে বলেন, সততার সঙ্গে রাজনীতি করেছি বলেই আজকে পদ্মা সেতু আমরা নিজেদের অর্থায়নে করতে সক্ষম হয়েছি। তাই আমি আমাদের ছাত্রদের বলতে চাই, কোনো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম (ভ্যান্ডালিজম) চলবে না। ছাত্ররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাংচুর করবেÑ এটা আমি বরদাশত করব না। কারণ পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলো যদিও স্বায়ত্তশাসিত। কিন্তু প্রত্যেকটি খরচ দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নির্দেশ দেয়া আছে, ভাংচুরকারীরা যে দলের হোক, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দীর্ঘ ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসির বাড়িতে ভাংচুর ও ঘরে ঢুকে লুটপাট করা হয়েছে। আমরাও তো আন্দোলন করেছি। ভিসির বাড়িতে ঢুকে লুটপাট করা, তার রুম ভাঙ্গা, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা কোনদিনও ঘটেনি। ইতোমধ্যে অনেকে ধরা পড়েছে, আরও ধরা পড়বে। লুটপাটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও ধরা হবে। এ ধরনের কোন ঘটনা আমি আর চাই না। কারণ ভিসির বাড়িতে আক্রমণ বা শিক্ষকদের অপমান করা সহ্য করার মতো নয়। আর আমি শিক্ষকদেরও বলব, শিক্ষকরা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে লাগবে আর তার ফল ছাত্ররা ভোগ করবে সেটাও আমি চাই না। শিক্ষকদের কিছু বলার থাকলে আমাকে এসে বলবে। দিনে-রাতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ঘুমায়। বাকি সময়টা তো দেশের কাজেই লাগায়। কেউ তো বলবে না ব্যবস্থা নেয়নি, আমরা সমাধান করতে জানি। তবে কোনকিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা কখনও বরদাশত করব না। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ যেন শিক্ষা-দীক্ষায় গ্রহণ করার জন্য, অপব্যবহার করার জন্য না। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকার জন্য ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গীবাদ সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তি থেকে দূর থাকতে হবে। এ ধরনের কাজে কেউ যদি জড়িত থাকে তাকে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করতে হবে। ইতোমধ্যে আমি র‌্যাবসহ সকলকে বলে রেখেছি, মাদক ব্যবসায়ী এবং জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। আমি ছাত্রলীগের ছেলেদের বলব, রাস্তা কীভাবে পার হতে হয়, কীভাবে রাস্তায় চলতে হয় সেটাও জানতে হবে। নিয়মটা মানতে হবে সবাইকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি জিনিস হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। নিজের ক্যাম্পাস এবং নিজের জায়গায় একটা ফুলের গাছ লাগাবে, একটু বৃক্ষরোপণ করবে। পাশাপাশি ছুটিতে নিজের এলাকায় গেলে ছেলেমেয়েদের অক্ষরজ্ঞান দেয়া নিজেদের দায়িত্ব। নিজ নিজ এলাকায় গেলে এটা করতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকে মানুষ কী সেবা পাচ্ছে। দরকার হলে সেখানে ভলান্টিয়ার সার্ভিস দিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে কোথাও দুর্নীতি হচ্ছে কী না- সেটাও দেখতে হবে। নেতা কেউ বানিয়ে দিলেই হবে না- নিজের কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা-বিশ^াস অর্জন করেই নেতৃত্ব অর্জন করতে হয়। আর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না। বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র ৯ বছরেই বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোলমডেল। বাংলাদেশের এতো স্বল্পতম সময়ে এতো অগ্রগতি দেখে বিশ্ব নেতারাও হতবাক হয়ে প্রশ্ন করছেন। মাত্র ৯ বছরে আমরা এত উন্নয়ন করেছি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা পারলেন না কেন? আসলে এরা ক্ষমতায় থেকে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন, বিদেশে অর্থপাচার, লুট-দুর্নীতিতে ব্যস্ত ছিল। জনগণের দিকে তাকায়নি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ আমাকে বার বার হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সততার পথে যে পথ চলবে, আর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাকে যেটুকু কাজ দিয়েছে তা শেষ না করা পর্যন্ত কেউ তার ক্ষতি করতে পারবে না। আর আমি নিজের ভাগ্য নয়, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। যতদিন বেঁচে আছি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করে যাব। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছাত্রলীগের যারা বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছে তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন,তবে দুর্ভাগ্য কিছু আছে, কিছু কিছু নেতারা বিপথে চলে গেছে। এখনও বিএনপিতে দুচারজন খুঁজে পাবেন। এরা বেইমান, মোনাফেক, এরা আদর্শে বিশ^াস করে না। আদর্শহীন রাজনীতি কোন রাজনীতি নয়। আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করলে জনগণকে কিছু দেয়া যায়। আমি কথা দিয়েছিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব, সেই বিচার আমরা করেছি। এই যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে খালেদা জিয়া আমার লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল। আপনারা জানেন, অনেক উচ্চ পর্যায় থেকে ফোন এসেছিল, কিন্তু সেই বিচার আমরা করেছি। যুদ্ধাপরাধী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার করে আমরা দেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তি বজায় থাকবে, শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকবে। অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, সরকার গঠনের পর থেকে প্রতি বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় আছে। ছাত্ররা পড়াশোনা করবে। ছাত্রদের পড়াশোনা কিসে ভালো হবে সেটা আমরা জানি। আমি আমার ছাত্রদের কাছে একটি কথাই বলবো, প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রথম কাজ হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণ করা। শিক্ষার নীতিমালা, শিক্ষার ব্যাপারে কী করতে হবে না হবে- আমাদের বয়স হয়েছে। নিশ্চয় আমরা অনেক ভাল জানি। আর জানি বলেই আমরা সেইভাবে সময়োপযোগী শিক্ষাার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণে সমস্যা এবং এ নিয়ে কাউকে হতাশা প্রকাশ না করার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বরেন, গতকালকে (বৃহস্পতিবার) একটা দিন ছিল। সকলের মনে আশা ছিল, যে কালকে রাতেই এটা উৎক্ষেপণ হবে। আপনারা জানেন এটা অত্যন্ত সেনসিটিভ (স্পর্শকাতর) একটা বিষয়। সম্পূর্ণটাই কম্পিউটারাইজড। যখন রাতে শুরু হলো, জয়সহ (সজীব ওয়াজেদ জয়) আমাদের অনেকে সেখানে উপস্থিত। আমি তাদের বলেছিলান, আমাকে ফোন করতে। তারা আমাকে ফোন করে বলেছিল, ১৫-২০ মিনিট পরে এটা হবে। ঠিক ১৫ মিনিট পর যখন শুরু হবে তখন আর হলো না। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এটা অরবিটে পৌঁছতে সময় লাগে। এটা লিঙ্ক করতে হয়। এই লিঙ্কটা হতে দুই থেকে তিন মাসের মতো সময় লাগে। এটা নিয়ে কারো দুশ্চিন্তার কিছু নাই। ইনশাল্লাহ স্যাটেলাইট অবশ্যই উৎক্ষেপণ হবে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট আকাশে যাবে। আমরা যে আকাশও জয় করেছি, এটা সব থেকে বড় ব্যাপারা। আমি অন্তত এটুকু বলবো, কেউ যেন আবার মন খারাপ না করে। মন খারাপ আমারও হয়েছিল, মাত্র ৪৬ সেকেন্ডের জন্য আমাদের স্যাটেলাইট উড়তে পারল না। তবে এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কোন অস্বাভাবিক নয়। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। অবশ্যই আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট মহাকাশে যাত্রা করবে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং তাঁর কারাগারের রোজনামচা পড়লে তাঁর নিজের জীবন পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন সেটাও সেখানে লেখা আছে। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বলব, জাতির পিতার বই দুটি যেমন পড়তে হবে, সেই আদর্শটাও বুকে ধারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশের যা কিছু অর্জন তার প্রতিটি পড়তে ছাত্রলীগের অসামান্য অবদান রয়েছে। ভাষার আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ, সামরিক শাসন অবসান করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা ও সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগ করেছে ছাত্রলীগ। তিনি বলেন, ছাত্র সমাজকে প্রস্তুত হতে হবে। আমার বয়স ৭১ বছর। তোমরা আমার নাতি-নাতনির বয়সী। তোমাদেরই দেশটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সততা-নিষ্ঠা আর একাগ্রতা থাকতে হবে। ছাত্রলীগের যে মূলনীতি শিক্ষা শান্তি প্রগতি। সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শান্তির বাণী নিয়ে প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে হবে- এটাই আমরা চাই। জিয়াউর রহমানের সময় ছাত্র সমাজের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছিল অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছিলেন। এককভাবে মানুষের ভোট কেড়ে নিয়ে যায় তারা। নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। সেখানেও যে আন্দোলন হয়েছিল তাতে ছাত্রলীগের অবদান ছিল। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ওই বছরের ২৩ মার্চ ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়াকে বিদায় নিতে হয়। এরপর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা জয়ী হই। কিন্তু পরে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে পাঁচটি বছর ধরে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিমরোলার চালায়। তারা বাংলা ভাই সৃষ্টি করে, দেশজুড়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। তাদের কারণেই দেশে জরুরী অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখনও আমাকে প্রথম গ্রেফতার করা হয়। ওই সময়ও ছাত্রলীগ আন্দোলন করেছে, প্রতিবাদ করেছে। ২০২১ সালের আগেই দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগই দেশের উন্নয়ন করে, মানুষের কল্যাণে কাজ করে। অন্যরা ক্ষমতায় এলে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, দুর্নীতি-অর্থ পাচার, খুনী-যুদ্ধাপরাধীদের মদদদান আর নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। পৃথিবীর কোন বড় দেশ সাহস পায়নি, একমাত্র আমরাই ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে দেশে আশ্রয় দিয়েছি। তাই ২০২১ সালের মধ্যেই আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, কেউ আর দেশকে পিছিয়ে দিতে পারবে না।
×