ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ

ঢামেকে সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৮ মে ২০১৮

ঢামেকে সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন

নিখিল মানখিন ॥ দুরারোগ্য ব্যাধি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত আট বছরের শিশু সোহেল। সাড়ে চার বছর বয়স থেকেই সে এ রোগে ভুগছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা করানো হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করাতে ভারতের মাদ্রাজে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এজন্য প্রয়োজন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। শিশুটির পিতা মোঃ জসিম (৪২) একজন দরিদ্র কৃষক। তার পক্ষে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সন্তানের এমন অবস্থায় সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছেন মোঃ জসিম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাজার হাজার থ্যালাসেমিয়া রোগী ব্যয়বহুল চিকিৎসা করাতে না পেরে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে থ্যালাসেমিয়া রোগের চূড়ান্ত চিকিৎসা ‘বোনম্যারো প্রতিস্থাপন’ চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৮ জনের বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হয়েছে ৩৫টি। বোনম্যারো প্রতিস্থাপন চালু হলেও তা দেশের রোগীর তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব থেলাসেমিয়া দিবস। বোনম্যারো (অস্থিমজ্জা) প্রতিস্থাপনে আশার আলো দেখছে বাংলাদেশ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) শুরু হওয়ার পর ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালেও (সিএমএইচ) কয়েকজন ক্যান্সার রোগী বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত চার বছরে ৩৫ রোগীর বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেক রোগী সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রক্তরোগবিদ্যা (হেমাটোলজি) বিভাগের প্রধান ও হাসপাতালটির বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন ইউনিটের প্রধান এম এ খান জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ইউনিটের মাধ্যমে ব্লাড ক্যান্সার, লিউকোমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, লিম্ফোমা, সিভিয়ার এ্যাপ্লাস্টি এ্যানিমিয়াসহ জটিল রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব হবে। সফলভাবে কর্মসূচীটি অব্যাহত রাখা গেলে রোগীরা অল্প খরচে উন্নতমানের চিকিৎসা পাবেন। তাদের আর অন্য কোথাও যেতে হবে না। ব্যয়বহুল হওয়ায় দেশের অনেক রোগী অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করানো ছাড়াই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ঢাকা মেডিক্যালে স্থাপিত বোনম্যারু প্রতিস্থাপন ইউনিটের মাধ্যমে বর্তমানে সীমিতসংখ্যক রোগীকে সেবা দেয়া সম্ভব বলে জানান অধ্যাপক এম এ খান। অধ্যাপক ডাঃ এম এ খান জনকণ্ঠকে জানান, বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে কয়েকগুণ কম খরচে বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে ঢামেক হাসপাতালে। সব প্রতিস্থাপনই সফল হয়েছে। বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের (এমজিএইচ) সহযোগিতায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন ইউনিটে প্রথম রোগী ছিলেন ৫২ বছর বয়সী ওমর আলী। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ওমর আলীর বোনম্যারো প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৪ সালের ১০ মার্চ। এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সকল রোগী সুস্থ আছেন বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ এম এ খান । ঢামেকের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, এখানে রোগীর বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করতে খরচ হয় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। আর সরকারী অনুদান পেলে তা নেমে আসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায়। ভারত ও সিঙ্গাপুরে এ কাজে খরচ হয় যথাক্রমে ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত লাগে। থ্যালাসেমিয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে এখনও থ্যালাসেমিয়া রোগের চূড়ান্ত চিকিৎসা চলছে সীমিত পরিসরে। অথচ ডিএনএ এ্যানালাইসিস পদ্ধতির মাধ্যমে খুব সহজেই থ্যালাসেমিয়া রোগ নিরুপণ করা যায়। ডিএনএ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত উৎপাদন করে। এই ডিএনএ সুস্থ কিনা তা পরীক্ষার জন্যই এ্যানালাইসিস পদ্ধতি।
×