ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আয় বাড়াতে পরিশোধিত মূলধন কমাবে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৭ মে ২০১৮

 আয় বাড়াতে পরিশোধিত মূলধন  কমাবে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ার প্রতি আয় ও সম্পদ বাড়ানোর জন্য এবার পরিশোধিত মূলধন ৪০ শতাংশ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। অবশ্য এজন্য উচ্চ আদালত ও নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে কোম্পানিটির। আগামী ২৪ মে হতে যাওয়া বিলম্বিত বার্ষিক সাধারণ সভায়ও (এজিএম) বিশেষ এজেন্ডা হিসেবে এ পরিকল্পনা উত্থাপন করা হবে। বৃহস্পতিবার পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সুহৃদ কর্তৃপক্ষ জানায়, শেয়ার প্রতি আয় ও সম্পদ বাড়ানোর জন্য বিদ্যমান পাঁচটি শেয়ারের বিপরীতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যেরই তিনটি করে শেয়ার ইস্যু করতে চায় তারা। কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর ধারা ৫৯ ও ৬০-এর আলোকে উচ্চ আদালতের কাছে এর অনুমোদন চাইবে তারা। আসন্ন এজিএমেও শেয়ারহোল্ডারদের সামনে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। সব প্রক্রিয়াগত অনুমোদন পেলে শেয়ারহোল্ডার শনাক্ত করতে নতুন রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করবে কোম্পানি। স্থানীয় শেয়ারবাজারে পরিশোধিত মূলধন কমানোর একাধিক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, আমাদের বাজারে এটি দেখা না গেলেও বিশ্বের অন্যান্য বাজারে এ ঘটনা বিরল নয়। এটি ইপিএস, এনএভি বাড়িয়ে দেখাতে কার্যকর একটি উদ্যোগ। একই সম্পদ ও মুনাফা তুলনামূলক কম সংখ্যক শেয়ারের মধ্যে ভাগ হলে শেয়ার প্রতি মুনাফা ও সম্পদ বাড়বেই। শেয়ারদরও সেভাবেই সমন্বয় হয়। তবে শেয়ারহোল্ডারদের প্রকৃত উপকারটি তখনই হয়, যখন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির বিক্রি, পরিচালন দতা, ইপিএস ও লভ্যাংশ বাড়াতে সক্ষম হয় এবং সেটি টেকসই হয়। উল্লেখ্য, নতুন ম্যানেজমেন্ট দায়িত্ব নেয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২০১৭ হিসাব বছরের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হয়েছে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানির চেয়ারম্যানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এজিএম অনুষ্ঠানের জন্য ৩১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেয় গত বছরের ৫ অক্টোবর। এজন্য ২৮ ডিসেম্বর পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী এজিএম করতে পারেনি তারা। পর্ষদ চেয়ারম্যান উচ্চ আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত কোম্পানিটিকে আগামী ৩১ মে’র মধ্যে এজিএম সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ মে বেলা ১১টায় গাজীপুরের কোনাবাড়িতে অবস্থিত মেঘের ছায়া কনভেনশন সেন্টারে এজিএম করবে কোম্পানি। সভার রেকর্ড ডেট ছিল ৩০ নবেম্বর। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্যও কোনো লভ্যাংশ সুপারিশ করেনি প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। গেল হিসাব বছরে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৫৭ পয়সা, আগের বছর যেখানে লোকসান ছিল ৪ পয়সা। এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে শেয়ার প্রতি ২৪ পয়সা লোকসান দেখানোর পর তৃতীয় প্রান্তিকে এসে শেয়ার প্রতি ৪৩ পয়সা মুনাফা দেখিয়েছে কোম্পানিটি। সব মিলিয়ে বছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানির ইপিএস দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যেখানে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১৯ পয়সা। ৩১ মার্চ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ১১ টাকা ৫১ পয়সা। ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে আসার আগে মুনাফায় থাকলেও ২০১৫ সাল থেকেই লোকসান দেখাচ্ছে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ। ম্যানেজমেন্টের দুগ্রুপে দ্বন্দ্ব, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা। সব সমস্যা সমাধান করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ভালো ফল উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অক্টোবরে দায়িত্ব নিয়ে নতুন পর্ষদ। ১০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে বর্তমানে সুহৃদের পরিশোধিত মূলধন ৫২ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের মাত্র ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ-এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে। বাকি সব শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। ডিএসইতে সর্বশেষ ১৮ টাকা ৬০ পয়সায় সুহৃদের শেয়ার হাতবদল হয়। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর ছিল ২০ টাকা ৪০ পয়সা ও সর্বনিম্ন ৮ টাকা।
×