ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তে রঞ্জিত রাঙ্গামাটি, উত্তাল খাগড়াছড়িতে আজ হরতাল, যৌথ অভিযান

পাহাড়ে টার্গেট সিরিয়াল কিলিং

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ মে ২০১৮

পাহাড়ে টার্গেট সিরিয়াল কিলিং

মোয়াজ্জেমুল হক/জীতেন বড়ুয়া/মোহাম্মদ আলী ॥ তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে শুরু হয়েছে টার্গেট ও সিরিয়াল কিলিং। অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে অস্বস্তিকর ও আতঙ্কময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে পাহাড়ে। বেড়েই চলেছে লাশের মিছিল। খুন, অপহরণ, গুম, পাল্টা খুন, চাঁদাবাজির পাশাপাশি পাহাড়ের দুই সংগঠনের চার গ্রুপের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে এখন আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে একাধিক স্পট। আধিপত্য বিস্তারের চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হিং¯্র ছোবল হানছে। ফলে একের পর এক ঝরে যাচ্ছে প্রাণ। প্রতিহিংসায় অস্ত্রের ঝনঝনানির নেপথ্যে রয়েছে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস, সন্তু গ্রুপ), জেএসএস (এমএন লারমা গ্রুপ), ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (প্রসিত গ্রুপ) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) গ্রুপের একক আধিপত্য বিস্তারের অপতৎপরতা। গত ৫ মাসে পাহাড়ে টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে ১৮। আর গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঝরে গেছে আরও ৬ তরতাজা প্রাণ। সিরিয়াল ও টার্গেট কিলিং সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া নিরপরাধ মানুষের প্রাণও ঝরে যাচ্ছে। খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সিরিয়াল ও টার্গেট কিলিংয়ের এই অপতৎপরতার জের হিসেবে বর্তমানে চরম আতঙ্কে রয়েছেন ইউপিডিএফ ও জেএসএস সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংগঠনগুলোর শীর্ষ ও মাঝারি পর্যায়ের নেতারা। আর অপহরণ করে গুম করার আতঙ্কে রয়েছে সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোর ক্যাডার সদস্যরা। বর্তমানে টার্গেট কিলিংয়ের চরম আতঙ্কে রয়েছেন ইউপিডিএফ সদস্য খাগড়াছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা। চার পাহাড়ী সংগঠনের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের অনেকে বর্তমানে নিজ নিজ নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে তেমন কোথাও আসা যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে। এরা সরকারী-বেসরকারী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া থেকেও নিজেদের বিরত রাখছেন। অনেকে নিজেদের বাড়িঘর বাদ দিয়ে অন্যত্র রাত যাপনের পথও বেছে নিয়েছেন। যোগাযোগের ফোনও রিসিভ করেন না। বেসরকারী হিসাব মতে, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে গত ৫ মাসে জেএসএস ও ইউপিডিএফের চার গ্রুপের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে প্রাণ হারিয়েছে তাদের ১৮ নেতাকর্মী। সর্বশেষ গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার শুধু নানিয়ারচরে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৬ জন। যার মধ্যে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা এবং ইউপিডিএল গণতান্ত্রিক এর আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা অন্যতম। টার্গেট করে এদের হত্যা করার প্রক্রিয়ায় অসহায় অনেকে হচ্ছেন বলির পাঠা। এদিকে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের ঘটনার পর রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির পাহাড়ী পল্লীগুলোতে অজানা শঙ্কায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। নানিয়ারচর ও রাঙ্গামাটি মহালছড়ি সড়ক দিয়ে জন ও যান চলাচলে সীমিত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবারের ঘটনা নিয়ে কোন পক্ষ এখনও থানায় মামলা করেনি। চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইসি ড. এসএম মনিরুজ্জামান শনিবার নানিয়ারচর পরিদর্শন করেছেন। এর আগে সকালে রাঙ্গামাটি রিজিওনে জেলার উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। এরপর তিনি নানিয়ারচরে গিয়ে সদর এলাকায় সর্বস্তরের মানুষ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় জেলা প্রশাসক এসএম মামুনুর রশিদ ও পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর কবির উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমার হত্যাকা-স্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে সীমান্তবর্তী ক্যাঙ্গালছড়ি এলাকায় শুক্রবার পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ও তনক চাকমার মরদেহ খাগড়াছড়ি মধুপুরের তেতুলতলায় এবং সুজন চাকমা ও সেতু লাল চাকমার লাশ মহালছড়িতে শনিবার তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গুলিতে নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বরিশালে নিয়ে দাফন করা হয় চালক মোঃ সজীবকে। অপরদিকে শুক্রবার নানিয়ারচরে হত্যাকা-ের শিকার জিপ চালক সজীব হত্যার বিচার ও পাহাড়ে চাঁদাবাজি বন্ধ এবং অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে ৭২ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। আজ রবিবার খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বাঙালী ছাত্র পরিষদ। শনিবার সকালে খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছে মানববন্ধন, কালো পতাকা ও লাঠি মিছিল। এছাড়া অপহৃতদের বাঙালীদের উদ্ধার ও জিপ চালক সজীব হত্যাকারীদের আটকে ব্যর্থ হলে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে পালিত হবে ৪৮ ঘণ্টা হরতাল। শনিবার খাগড়াছড়ির চেঙ্গি স্কোয়ারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাঙালী ছাত্র পরিষদ। বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত সামাজিক অপরাধবহির্ভূত খুনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩৯ জন। অপহৃত হয়েছে ২ হাজার ৩৯৬ জন। হত্যার শিকার অধিকাংশই বাঙালী। বাঙালীদের খুনের নেপথ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও চাঁদাবাজির ঘটনা। নিহতদের এক-তৃতীয়াংশ পাহাড়ী। এসব হত্যাকা-ের নেপথ্যে রয়েছে নিজেদের অন্তর্কোন্দল। চলতি বছরের এ পর্যন্ত রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে খুন হয়েছে ১৮ জন। গত ৪ মার্চ থেকে অহৃত অবস্থায় রয়েছে রামগড়ের মারমা ঐক্য পরিষদ নেতা চাই থুই। গত ১৬ এপ্রিল থেকে অপহৃত হয়ে আছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলার কাঠ ব্যবসায়ী মোঃ সালাউদ্দিন ও ড্রাইভার বাহার মিয়া ও মরহম আলী। এ তিনজনকে মহালছড়ির মাইসছড়ি থেকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণের ১৯ দিন পেরিয়ে গেলেও তারা জীবিত না মৃত তার খোঁজ মেলেনি। ফিরে দেখা-রক্তে রঞ্জিত পাহাড় ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটিতে অনাধি রঞ্জন চাকমা (৫৫) নামে ইউপিডিএফ সমর্থক ইউপি সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই হত্যার জন্য ইউপিডিএফকে (গণতান্ত্রিক) দায়ী করে ইউপিডিএফ। ওই দিন সকালে অনাধিকে নানিয়ারচর সতের মাইল ও আঠার মাইলের মধ্যবর্তী চিরঞ্জীব দোজরপাড়া এলাকার নিজ বাসা থেকে ডেকে বের করে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিন রাঙ্গামাটির জুরাছড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দ চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগ এ হত্যাকা-ের জন্য সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসকে দায়ী করে। একদিন পরই ৭ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি শহরে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভানেত্রী ঝর্ণা খীসার বাসায় হামলা চালিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গায় ইউপিডিএফকর্মী ও সংগঠক অনল বিকাশ চাকমাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। ইউপিডিএফ এ হত্যাকা-ের জন্য নতুন ইউপিডিএফকে দায়ী করে। ৩ জানুয়ারি বিলাইছড়ি উপজেলায় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বরায় তংচঙ্গ্যাকে গুলি করা হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এ ঘটনার জন্য যুবলীগ জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করেছিল। একই দিন খাগড়াছড়ি জেলা শহরে স্লুইস গেইট এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা মিঠুন চাকমাকে। ইউপিডিএফ এ হত্যার জন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করে। ২১ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সুভাষ চাকমা নামের একজন গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। তিনিও ইউপিডিএফ কর্মী ছিলেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি শহরের হরিনাথপাড়া এলাকায় ইউপিডিএফ কর্মী দীলিপ কুমার চাকমাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি ইউপিডিএফের হরিনাথ পাড়ার সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন। তিনি পানছড়ির চেঙ্গী ইউনিয়নের মনিপুর এলাকার সন্তোষ কুমার চাকমার ছেলে। ১১ মার্চ বাঘাইছড়িতে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় ইউপিডিএফকর্মী নতুন মনি চাকমাকে। তিনি ইউপিডিএফের প্রসিত বিকাশ খীসার পক্ষের ছিলেন। ১৮ মার্চ রাঙ্গামাটির কুতুবছড়ি থেকে অপহরণ করা হয় ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে। ৩২ দিন পর ১৯ এপ্রিল মুক্তি পান তারা। এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করে ইউপিডিএফ। ১২ এপ্রিল পাল্টাপাল্টি হামলায় মারা যায় ৩ জন। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় ইউপিডিএফের এক সদস্যকে গুলিতে হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেএসএসের (এমএন লারমা) দুই কর্মীকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন ইউপিডিএফ কর্মী জনি তঞ্চঙ্গ্যা (৪০), জেএসএস (এমএন লারমা) কর্মী পঞ্চায়ন চাকমা ওরফে সাধন চাকমা (৩০) ও কালোময় চাকমা (২৯)। ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ি শহরের পেরাছড়া এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় সূর্য বিকাশ চাকমা নামে একজন নিহত হন। তিনিও ইউপিডিএফ এর দুই অংশের বিরোধের কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২২ এপ্রিল খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার মরাটিলা এলাকায় ইউপিডিএফ ও জেএসএসের (এমএন লারমা) মধ্যে গোলাগুলিতে সুনীল বিকাশ ত্রিপুরা (৪০) নামে এক ইউপিডিএফ নেতা নিহত হন। সর্বশেষ ৩ মে নানিয়ারচর উপজেলায় নিজ কার্যালয়ে সামনে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেএসএসের (এমএন লারমা) অন্যতম শীর্ষ নেতা শক্তিমান চাকমাকে। এইসময় তার সঙ্গে থাকা সংগঠনটির আরেক নেতা রূপম চাকমাও গুলিবিদ্ধ হন। এর একদিন পরই ৪ মে শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়ায় অংশ নিতে যাওয়ার পথে সশস্ত্র হামলায় নিহত হন ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের অন্যতম শীর্ষ নেতা তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা, একই দলের নেতা সুজন চাকমা, সেতুলাল চাকমা, টনক চাকমা এবং তাদের গাড়িচালক সজীব। সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ের সাধারণ মানুষ সংঘাতের অবসান চাইলেও আঞ্চলিক দলগুলো একে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বলতে রাজি নয়। শান্তি চুক্তির পর ২০১৫ সালে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের মধ্যে অলিখিত সমঝোতা হলে সংঘাত বন্ধ থাকে। কিন্তু ২০১৭ সনে নবেম্বরের ১৫ তারিখ ইউপিডিএফ ভেঙ্গে গণতান্ত্রিক ইউপিডিফের জন্ম হয়। নবগঠিত ইউপিডিএফের হাতে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ৪ মে পর্যন্ত আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে উভয় পক্ষের অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছে। জেএসএস ভেঙ্গে চার গ্রুপের অপতৎপরতায় অস্থির পাহাড় ॥ দীর্ঘ দু’দশকের সশস্ত্র সংঘাত নিরসনে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হলে সবার প্রত্যাশা ছিল পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত হবে বহু কাক্সিক্ষত শান্তি। কিন্তু পার্বত্য পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের সময় পাহাড়ীদের একটি অংশ এর বিরোধিতা করে ইউনাইটেড পিপলস অব ডেমোক্র্যাটিকস ফ্রন্ট ইউপিডিএফ নামে আরেকটি সংগঠন জন্ম নেয়। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রসিত বিকাশ খীসা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সন্তু লারমার একক নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে জনসংহতি সমিতি ভেঙ্গে আরেকটি জেএসএস এমএন লারমা নামে আরেকটি সংগঠন জন্ম লাভ করে। ইউপিডিএফ ভেঙ্গে ২০১৭ সালের ১৫ নবেম্বর জন্ম নেয় গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ নামে আরেকটি সংগঠন। যার ৫ মাসের মাথায় গত শুক্রবার দুপুরে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা। আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে প্রতিনিয়ত সবুজ পাহাড় রক্তে লাল হয়ে উঠছে, অস্ত্রের কাছে হেরে যাচ্ছে মানুষের মানবতা আর মানবিকতা। অস্ত্রধারীদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে প্রতিটি পাহাড়ী-বাঙালী পরিবার। কিলিং মিশনে বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ॥ ইউপিডিএফ ভেঙ্গে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠার ৫ মাসের মাথায় পাহাড়ে কিলিং মেশিনে বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ১২ মাসে খাগড়াছড়িতেই অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে প্রায় ২৪টি। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতেই তিনবার অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। তবে অধিকাংশ আসামিই বর্তমানে জেলহাজতের বাইরে রয়েছে। ইউপিডিএফ নেতা নিরন চাকমা শনিবার জানান, পাহাড়ের এ সমস্যা রাজনৈতিক। আর ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের জন্য সন্তু লারমা দায়ী। তিনি সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন বলে তার দাবি। আগে সরকার তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে যা করত এখন সন্তু লারমাকে দিয়ে করানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন। এসব হত্যাকা-ের বিষয়ে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, ‘আঞ্চলিক দলগুলোর সশস্ত্র তৎপরতা এবং বেপরোয়া হত্যার ঘটনাকে সরকার গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। এখন সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবেই আমরা পদক্ষেপ নেব।’ বাংলাদেশ মানবধিকার কমিশনের সাবেক কমিশনার নিরূপা দেওয়ান জানান, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় হতাশা থেকে এবং কিছু মানুষের প্ররোচনায় এসব ঘটনা ঘটছে। আমরা পাহাড়ে সংঘাত চাই না, শান্তি চাই। শান্তি প্রতিষ্ঠায় আঞ্চলিক দল এবং সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সংঘাত যে কোন উপায়ে বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে না পারে সে জন্য মানুষের ভয়ভীতি সৃষ্টি জন্য এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে এত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তারা ইচ্ছা করলে সংঘাত বন্ধ করতে পারে। পাহাড়ের মানুষ এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
×