ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান বসছে এ সপ্তাহে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

পদ্মা সেতুর  চতুর্থ স্প্যান বসছে এ সপ্তাহে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর ৪র্থ স্প্যান বসবে এই সপ্তাহের মধ্যেই। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মে মাসের ১/২ তারিখেই বসে যাবে ৪র্থ স্প্যান। এ লক্ষ্যে ৪র্থ এই স্প্যান ‘৭ই’ এখন একেবারেই প্রস্তুত। গত ২৫ এপ্রিল পেন্টিংয়ের কাজ শেষ হয়ে গেছে। সোনালি রঙের ওপর দেয়া হয়েছে ধূসর রং। কুমারভোগে পদ্মা সেতুর বিশেষায়িত ইয়ার্ডের পেন্টিং শেডে এই স্প্যানটির রঙের ফিনিশিং সম্পন্ন হয়েছে। এই কালার শপ থেকে শুক্রবার সকালে প্রায় ৩২ শ’ টন ওজনের ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই স্প্যানটি বের করে ক্রেনের লাইনে করে (ট্রেন লাইনের ন্যায়) পদ্মা তীরের জেটির কাছে নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এখানেই ৩৬ শ’ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজটি ‘৭ই’ নম্বর এই স্প্যানটিকে পাঁজাকোল করে নিয়ে জাহাজ যাবে জাজিরা প্রান্তের দিকে। ৪১ নম্বর খুঁটি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত এই স্প্যান বহনে। ওদিকে স্প্যানের একাংশের ভার বহনের জন্য তৈরি বিশেষ অবকাঠামোটি এখন ৩৯ নম্বর খুঁটি থেকে সরিয়ে আনা হচ্ছে ৪০ নম্বর খুঁটিতে। এছাড়া পদ্মা সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ২৯টি খুঁটির কাজ চলছে। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে খুঁটির কাজ। তবে ১৩টি খুঁটির কাজের পাইলের কাজ এখনও শুরু হয়নি। খুব শীঘ্রই এই খুঁটিগুলোর কাজ শেষ হবে। সেতুর মাওয়া প্রান্তের ৯ এবং ১২ নম্বর খুঁটির নক্সায় পাইলের বটম সেকশনের কাজ চলছে। বৈচিত্র্যময় পদ্মার তলদেশের গভীরে নরম মাটি থাকার কারণে ৩৩, ৩৪, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর খুঁটির ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তিত ডিজাইনে এই চার খুঁটিতে সাতটি করে পাইল বসছে। এর মধ্যে অন্যান্য খুঁটির ন্যায় রেকিং ছয়টি পাইল এবং মাঝে ভার্টিক্যাল অর্থাৎ সরাসরি সোজা আরও একটি অতিরিক্ত পাইল স্থাপন হচ্ছে। তবে দৈর্ঘ্য কমিয়ে ১২৮ থেকে ১১৪ মিটার করা হবে। এছাড়া ১৫, ১৯, ২৪, ২৫ ও ২৮ নম্বর খুঁটিতেও একই ডিজাইনে ৭টি করে পাইল বসবে। তলদেশের নরম মাটি, সেই একই কারণে পদ্মা সেতুর ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২ নম্বর খুঁটিতেই একই ডিজাইনে ৭টি করে পাইল বসবে। এইগুলোর লেন্থ নির্দিষ্ট করে দেয়া হলেও ১১টি নক্সা এখন পাওয়া যায়নি। এছাড়াও সেতুর দু’পারে হচ্ছে সংযোগ সেতুর (ভয়াডাক্ট) কাজ। দু’পারে ৩৬৫টি পাইল। এর মধ্যে জাজিরা প্রান্তে ১৯৩টি পাইলের সব বসে গিয়ে এর ওপর আরও ৪০টি ক্যাপ হচ্ছে। আর মাওয়া প্রান্তের ১৭২টি পাইলের মধ্যে ১১৬টি পাইল হয়ে গেছে। এদিকে মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের পদ্মা সেতুর দুই থানা পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ হলেও কার্যক্রম চালু হতে এখন বাকি রয়েছে কেবল জনবল নিয়োগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেলেই দুই থানার জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। জনবল নিয়োগ শেষেই চালু হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের দুই থানার কার্যক্রম। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র মতে, পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তার জন্য মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া টোল প্লাজার পাশে ‘পদ্মা সেতু উত্তর’ এবং শরীয়তপুরের জাজিরা টোল প্লাজার পাশে ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণ’ প্রান্তের উভয় থানার নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেছে। সূত্র মতে, পদ্মা সেতুর দুই থানার পৃথক চার তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একই ডিজাইনে নির্মাণ করা হয়েছে ওই দুই থানা। বাংলাদেশ পুলিশ ও সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতিটি থানা ১ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে। ভবিষ্যতে থানার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরও জমি প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করা হবে। পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, দুই থানার পৃথক চার তলা ভবন এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। একই ডিজাইনে নির্মাণ করা হয়েছে দু’টি থানা। চলতি বছরের মে মাসে সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য দুই থানা নির্মিত হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জনবল নিয়োগের জন্য এবং থানা কার্যক্রম শুরুর জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি দিলেই থানার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে।
×