ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা পরিষদের আলোচনা সভা

বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দের প্রভাব খতিয়ে দেখতে মনিটরিং সেলের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দের প্রভাব খতিয়ে দেখতে মনিটরিং সেলের তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিবছর নারীর জন্য যে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তার প্রভাব কি দাঁড়াচ্ছে ও এর ফলাফল তাদের জীবনে কি ধরনের অভিঘাত তৈরি করছে তা খতিয়ে দেখার জন্য মনিটরিং সেলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। বৃৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম, মুনিরা খান মিলনায়তনে আসন্ন জাতীয় বাজেটে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাজেট বরাদ্দÑ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় এ সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানম বাজেট বরাদ্দের প্রভাব ও ফলাফল পর্যবেক্ষণের জন্য সরকারী-বেসরকারী পর্যায় থেকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ ও বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম। সভাটি পরিচালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী। সভায় সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানম আরও বলেন, সমাজ দর্শন, রাজনীতি, শিক্ষানীতি সকল ক্ষেত্রেই নারীর অধিকারহীনতার স্থান তৈরি হয়। যেখানে অর্থনীতি একটি অন্যতম ক্ষেত্র। দীর্ঘ দেড়শ বছরের সংগ্রামে যখন ‘নারীর অধিকার মানবাধিকার’ বিষয়টি আসল তখন থেকে সমাজ-রাষ্ট্রের সম্পদ, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির তৈরি নীতিমালা তার বণ্টন কীভাবে হচ্ছে সে জায়গায় নারী আন্দোলন কথা বলা ও কাজ করা শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরের যে বাজেট তৈরি হয় সেখানে নারীর জন্য কীভাবে অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে তা দেখা এবং আলোচনার বিষয়। নারীর জন্য কীভাবে, কি ধরনের বাজেট হচ্ছে, তার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ আছে কিনা, সে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ পাচ্ছে কিনা, কিভাবে নারী সমাজের দ্বিতীয় মাত্রার অবস্থান থেকে বের হয়ে আসবে সেই বিষয়গুলো নিয়ে নারী আন্দোলন কাজ করছে। তিনি বলেন ২০১৮ সালে উন্নয়নের বিশাল অগ্রগতির সূচক আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্যাপন করা হয়েছে। তার সঙ্গে নারী উন্নয়ন ভাবনা এবং যে বাধাগুলো আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।’ মূল প্রবন্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, বাজেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে। এ বছর জেন্ডার বাজেট ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। তিনি বলেন মোট ৪৩টি মন্ত্রণালয় জেন্ডার বাজেট পেশ করেছে। ৩২টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেট বেড়েছে ৭টি মন্ত্রণালয়ে কমেছে। বর্তমানে প্রতি ইউনিয়ন থেকে ১০ জন নারী তার ইউনিয়নের রাস্তাগুলো দেখাশোনার কাজ করে থাকে। প্রতি মাসে এর জন্য সরকারীভাবে নারীকে অর্থ দেয়া হয়। তবে নারীরা তাদের পারিবারিক সমস্যার পেছনেই এই টাকা খরচ করে। বাজেটে সরাসরি শুধু নারীদের নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্র কমেছে। মাদ্রাসায় ৫৪ শতাংশ টেকনিক্যাল এবং ভোকেশনাল এডুকেশনে ২৪ শতাংশ নারী আছে। তিনি আরও বলেন এখন সময় হয়েছে টেকনিক্যাল এডুকেশনের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন করার। একদশকে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে ২৮ শতাংশ পুরুষের অংশগ্রহণ কমেছে ২ শতাংশ। তবে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দ ও তার ফলাফল ও প্রভাব দেখাটা এখন জরুরী বলে তিনি উল্লেখ করেন। অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, কোন মন্ত্রণালয়ে কোন কোন পরিকল্পনায় নারী আছে সে বিষয়গুলো দেখা প্রয়োজন। নারীর জন্য যে প্রকল্প তৈরি হয় সেখানে ৪টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে করা হয়Ñ নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও দারিদ্র্য কমায়, সরকারী সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধি করে কিনা, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, শ্রবাজারে অংশগ্রহণ এবং নারীর গতিশীলতা, তথ্য ও বিষয়ে অভিগম্যতা। প্রতিটি বিষয়ই এখানে নির্দিষ্ট রয়েছে কিন্তু সেই অনুপাতে কাজ হচ্ছে কিনা এ বিষয়গুলো দেখার সময় এসেছে। বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস। পাশাপাশি ডে-কেয়ার সেন্টারের জন্য সরকার যদি প্রণোদনা দেয় তাহলে তা নারীর জীবনে অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নারীর উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণে নারীদের আরও অধিক হারে আনা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। প্রযুক্তিগত দিকে নারীর আরও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা এবং পরিমাণ পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। সেক্ষেত্রে সহিংসতা নির্মূলের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া নারীরা ক্রমাগত যে মানসিক সহিংসতার শিকার হয় সেই দিকটিও এখন দেখার সময় হয়েছে। এবং নরীর জীবনে সহিংসতার পাশাপাশি প্রতিবাদের গল্পও থাকতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সভায় সংগঠনের সহ-সভাপতি মাখদুমা নার্গিস রতœা, নাহার আহমেদ, ফওজিয়া মোসলেম লক্ষ্মী চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখীদাশ পুরকায়স্থ, সহ-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা, রোকেয়া সদন সম্পাদক নাসরিস মনসুর, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক বুলা ওসমান, স্বাস্থ্য সম্পাদক নূরুল ওয়ারা বেগম, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মাহাতাবুন নেসা, সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুস সংগঠনের নেত্রী ও সংগঠকবৃন্দসহ প্রায় ৭৫ জন উপস্থিত ছিল।
×