ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন

সড়কে যথেচ্ছাচার

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

সড়কে যথেচ্ছাচার

সারা দেশে গণপরিবহন সেক্টরে এক নৈরাজ্যজনক অবস্থা বিরাজ করছে। রাজধানীর অবস্থা আরো করুণ। পরিবহন কোম্পানীর বাস-মিনিবাস দিন দিন বেপরোয়া হচ্ছে। চালকদের যথেচ্ছাচারের শেষ নেই। এসব গাড়ীর চালক-শ্রমিকদের কাছে যাত্রী-পথচারী সবার জীবন বিপন্ন। রাস্তাায় নামলেই মৃত্যুদূত তাড়া করছে যাত্রী বা পথচারীকে। কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে মালিক ও শ্রমিক মিলে যা ইচ্ছা তাই করার সাহস দেখাচ্ছে। মালিকের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটিয়েও তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। কারণ পরিবহন ব্যবসা যারা করছেন, তারা সবাই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা। এ জন্য চালক-শ্রমিকরা আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র যাত্রী উঠা-নামার নামে অশুভ প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। এমনিভাবে প্রতিদিন বেপরোয়া বাস-ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে রাজিবের মতো বহু তাজাপ্রাণ,বহু স্বপ্ন। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেক, অগণিত। এ সব দুর্ঘটনায় পুলিশ ঘাতক বাস চালক-শ্রমিকদের আটক করলেও অনেকেই জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। প্রতিদিন কোন কোন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে। যার অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে বেড়াতে হচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারকে। শুধু দুর্ঘটনা নয়, গণপরিবহনে চলছে যাত্রী হয়রানি ও প্রতারণা। সিটিং, গেটলক, স্পেশাল ও ডাইরেক্ট সার্ভিসের নামে আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া। ক্ষেত্র বিশেষ দু-একজন যাত্রী প্রতিবাদ করলে উল্টো তাদের নাজেহাল হতে হয়। যাত্রীরা পরিবহন খাতের মালিক শ্রমিকদের হাতে পুরোপুরি জিম্মি। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ আইন অমান্য করা। ওভারস্পিড, ওভারলোড, ওভারটেকিং, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক এবং রাস্তা অবৈধ দখলের ফলে প্রতিদিনই ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এছাড়া যাত্রী ও পথচারীদের অসচেতনতাও অনেকাংশে দায়ী। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর ক্ষতির পরিমান ৩৪ হাজার কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ২ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অসীম। এর ফলে কেবল মানুষের মৃত্যু নয়,অপূরণীয় আরো ক্ষতির বোঝা চাপিয়ে দেয় জনসাধারণের জীবনে। সারাদেশে পরিবহন সেক্টরে একটা বিশৃংখল অবস্থা বিরাজ করছে। এ খাত মাফিয়া চক্রের হাতে চলে গেছে। এদের কাছে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও অসহায়। রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বাস চালু করতে গিয়ে খোদ এ সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীকেও পিছু হটতে হয়েছে। এখনই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিকার ও প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দুর্ঘটনার কারণ করো আজানা নয়। কিন্তু সমস্যাটি হচেছ, সমাধানের উদ্যোগ না নেয়া। প্রকৃতপক্ষে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতা, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থর সম্মিলিত প্রয়াস ছাড়া এ সেক্টরের উন্নতি সম্ভব নয়। এ জন্য সবার আগে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কারণ এই খাতটি সব সময় রাজনৈতিক প্রভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। বর্তমানে সড়ক ব্যবস্থাপনা বলতে কিছু দেখা যায় না। তাই সড়ক ব্যবস্থপনায় আনতে হবে পরিবর্তন। আইনের কঠোর প্রয়োগসহ দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে যাত্রীদের জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করতে হবে। সেগুনবাগিচা, ঢাকা থেকে
×