ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অব্যাহত কূটনৈতিক অগ্রযাত্রার সাফল্য ;###;ওআইসির সহকারী মহাসচিব পদে লড়ছে

নেতৃত্বে বাংলাদেশ ॥ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ফোরামের

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

নেতৃত্বে বাংলাদেশ ॥ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ফোরামের

তৌহিদুর রহমান ॥ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ফোরামে বাংলাদেশের নেতৃত্ব বাড়ছে। একাধিক ফোরামে বাংলাদেশ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার জাতিসংঘের তিনটি ফোরামে বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছে। এদিকে ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) সহকারী মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বাংলাদেশ। এই পদে বিজয়ী হলে মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের প্রভাব আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ মঙ্গলবার জাতিসংঘের তিনটি ফোরামে বিজয়ী হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ এখন অস্ত্রনিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অব কেমিক্যাল উইপনসের (ওপিসিডব্লিউ) নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সমন্বয় কার্যক্রম জোরদারকরণ সংক্রান্ত রিজিওনাল কনসালটেটিভ গ্রুপের (আরসিজি) চেয়ারম্যানও বাংলাদেশ। এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজি) কো-চেয়ার এবং স্টিয়ারিং গ্রুপের সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। এছাড়া আরও একাধিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ফোরামের নেতৃত্বে রয়েছে। সূত্র জানায়, জাতিসংঘের ইকোসক চেম্বারে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইকোসক) সহযোগী সংস্থাগুলোর নির্বাচন গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ইকোসকের ৫৪টি সদস্য রাষ্ট্র ভোটে অংশগ্রহণ করে। ইকোসকের বিভিন্ন সহযোগী অঙ্গ সংস্থার এই নির্বাচনে বাংলাদেশ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং নির্বাচিত হয়। যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সংস্থায় বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছে সেগুলো হলোÑ কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেনের (সিএসডব্লিউ) ১১ সদস্যের নির্বাচন। এর মেয়াদ চার বছর (২০১৯-২০২২)। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া এই ফোরামে নির্বাচিত হয়েছে। ইউনিসেফের তহবিল পরিচালনা পরিষদের ১৪ সদস্যের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ফোরামের মেয়াদ তিন বছর (২০১৯-২০২১)। এই ফোরামে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে বাংলাদেশ, মঙ্গোলিয়া ও পাকিস্তান নির্বাচিত হয়েছে। ইউএন উইমেনের পরিচালনা পরিষদের ১৭ সদস্যের নির্বাচন হয়েছে। এই ফোরামের মেয়াদ তিন বছর (২০১৯-২০২১)। এতে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে বাংলাদেশ, ভারত, মঙ্গোলিয়া, নেপাল ও সৌদি আরব নির্বাচিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইকোসকের যে তিনটি সহযোগী অঙ্গে বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছে তা আমাদের নারী ও শিশুদের অধিকার সুরক্ষা এবং জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকারের অবদান, অব্যাহত সাফল্য ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কারণে তাৎপর্যপূর্ণ এই নির্বাচনগুলোতে বাংলাদেশ জয়ী হতে পেরেছে। সিএসডব্লিউয়ের বর্তমান সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আরও চার বছরের জন্য পুনঃনির্বাচিত হলো। এর ফলে নারীর অধিকার সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহনকারী এই কমিশনে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে। উল্লেখ্য, চলতি বছরে সিএসডব্লিউয়ের ৬২তম অধিবেশনে বাংলাদেশ ব্যুরোর ‘ভাইস চেয়ার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। এছাড়া ইউনিসেফ এবং ইউএন উইমেনের পরিচালনা পরিষদের সদস্য হওয়াতে বাংলাদেশ আগামী তিন বছর সক্রিয়ভাবে সংস্থা দুটির কার্যাবলী, অর্থসংস্থান ও এর যথাযথ ব্যবহারে ভূমিকা রাখতে পারবে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং ‘এজেন্ডা-২০৩০’ এর বাস্তবায়নেও সংস্থা দুটিকে আরও ভালভাবে কাজে লাগাতে পারবে। স্থায়ী মিশনের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে বিজয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অব্যাহত কূটনৈতিক অগ্রযাত্রার সাফল্য প্রমাণ করে। এই নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুসংহত হলো। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের নেতৃত্বে রয়েছে। গত বছর রাসায়নিক অস্ত্রনিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অব কেমিক্যাল উইপনসের (ওপিসিডব্লিউ) নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এ পদে এবারই প্রথম নির্বাচিত হয়। ওপিসিডব্লিউয়ের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া কূটনীতির ক্ষেত্রে এটি ছিল একটি ‘বড় অর্জন’। রাসায়নিক অস্ত্রনিরোধ সনদ কার্যকর করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু করে ওপিসিডব্লিউ। নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক সংস্থাটিতে বর্তমানে ১৮৯টি দেশ সদস্য হিসেবে রয়েছে। এই পদে বাংলাদেশ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওপিসিডব্লিউ এর স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মাদ বেলাল দায়িত্ব পালন করছেন। নেদারল্যান্ডসের হেগে ওপিসিডব্লিউয়ের ৮৪তম নির্বাহী কমিটির সভায় বাংলাদেশ এই পদে দায়িত্ব লাভ করে। এদিকে বাংলাদেশ ২০১৮ সালের জন্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সমন্বয় কার্যক্রম জোরদারকরণ সংক্রান্ত রিজিওনাল কনসালটেটিভ গ্রুপের (আরসিজি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। গত বছর ডিসেম্বরে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় বাংলাদেশ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী সংস্থার (ইউএনওসিএইচএ) উদ্যোগে সিভিল-মিলিটারি সমন্বয়ের মাধ্যমে বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলা কার্যক্রম জোরদারকরণের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে মানবিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একক প্ল্যাটফরম হিসেবে আরসিজি গঠন করা হয়। আরসিজি গঠনের উদ্দেশ্য হলো বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় আন্তঃদেশীয় সিভিল-মিলিটারি সমন্বয় জোরদারকরণ, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে কার্যকর অপারেশনাল প্ল্যান তৈরি এবং এর অনুশীলন ও দুর্যোগ সাড়াদান কার্যক্রম বাস্তবায়নে অভিজ্ঞতা, শিক্ষণও তথ্য বিনিময় ইত্যাদি। সূত্র জানায়, এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজি) কো-চেয়ার এবং স্টিয়ারিং গ্রুপের সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। গত বছর শ্রীলঙ্কায় মুদ্রাপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের এই বৈশ্বিক সংস্থাটির ২০তম বার্ষিক সভায় বাংলাদেশকে দুই বছরের জন্য কো-চেয়ার নির্বাচন করা হয়। এপিজির স্থায়ী কো-চেয়ার অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ এই দায়িত্বে থাকবে। একইসঙ্গে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এপিজির স্টিয়ারিং গ্রুপের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদ- নির্ধারণকারী সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে এপিজি প্রতিষ্ঠিত। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এপিজির কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সরকারের পক্ষে এপিজির প্রাইমারি কন্ট্যাক্ট পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ এপিজির বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপ ও এক্সপার্ট গ্রুপ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। একইসঙ্গে আঞ্চলিক পর্যায়ে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এদিকে ওআইসির সহকারী মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বাংলাদেশ। আগামী ৫-৬ মে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ওআইসি পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলনকে সামনে রেখে এই প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছে। ওআইসির ৫টি সহকারী মহাসচিব পদ রয়েছে। মহাসচিবের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তার অন্যতম ওই পদে এবারে বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল আহসান। এ পদে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী কাজাখস্তান। ওআইসিতে প্রতিটি মহাদেশ থেকে একজন করে সহকারী মহাসচিব থাকেন। এশিয়া মহাদেশ থেকে কাজাখস্তান ও বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তবে ৫৭ মুসলিম রাষ্ট্রের জোট ওআইসির অনেক সদস্যের সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, এবারে ওআইসির যে পদে বাংলাদেশ লড়ছে সেটির অবস্থান সংস্থাটির অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী দ্বিতীয় সারিতে হলেও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮৩ সালের পর এবারই প্রথম বাংলাদেশ ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে। সেই বিবেচনায় এবারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন বা সিএফএম আয়োজনের হোস্ট কান্ট্রি হিসেবেও সহকারী মহাসচিব পদে নির্বাচনে বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা পেতে পারে বলে আশা ঢাকা।
×