ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এলপিজি ভোক্তাদের বীমার আওতায় আনতে চায় সরকার

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

এলপিজি ভোক্তাদের বীমার আওতায় আনতে চায় সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি ব্যবহারকারী ভোক্তাকে বীমার আওতায় আনতে চায় সরকার। রবিবার জ্বালানি বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এলপিজি ভোক্তাদের বীমার আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এলপিজি সিলিন্ডারের বিস্ফোরণে প্রায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ, বিচার কোনটিই ভোক্তার ভাগ্যে জোটে না। বৈঠকে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, মানুষ রান্নার কাজে বিপুল পরিমাণ এলপিজি ব্যবহার করছে। দুঃখজনক হলেও সত্য সাম্প্রতিক সময়ে কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। কোন অবস্থাতেই একটি দুর্ঘটনাও কাম্য নয়। যাতে কোথাও দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রতিমন্ত্রী নির্দেশ দেন। সরকারের নীতিমালার কারণে এলপিজির ব্যবহার গত নয় বছরে ৮০০ গুণ বেড়েছে। তিনি বলেন, ব্যবহার বাড়লেও নিরাপত্তার সঠিক সূচক অনুসরণ করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন তিনি। সাধারণভাবে এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বলা হলেও বিস্ফোরক অধিদফতর প্রত্যেকটি ঘটনার পর যে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করছে তাতে বলা হচ্ছে এটি রান্নাঘর বিস্ফোরণ। এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ নয়। সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার পর এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বিষয়ে জানতে চাইলে বিস্ফোরক অধিদফতরের চীফ ইন্সপেক্টর শামসুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো রান্নাঘর বিস্ফোরণ। তদন্তে সিলিন্ডারগুলোর ত্রুটি ধরা পড়েনি। তিনি জানান, খুব ছোট কোন ছিদ্র থেকে গ্যাস বের হয়ে ঘরে জমা হতে থাকে। পুরো রান্নাঘরে গ্যাস জমে যাওয়ার পর কেউ আগুন জ্বালালে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এসব ছিদ্র এতটাই ছোট যে ভোক্তাও বুঝতে পারছেন না। এজন্য ব্যবহারের পূর্বে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী বলে মনে করেন তিনি। রবিবার জ্বালানি বিভাগের বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদন বলা হয়, প্রত্যেকটি কোম্পানি তাদের ভোক্তাদের নিবন্ধন করে একটি ডাটাবেস তৈরি করবে। এরপর নিবন্ধনকৃত ভোক্তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বীমা সুবিধার আওতায় আনতে পারে। যাতে করে গ্রাহক কোন দুর্ঘটনার স্বীকার হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন। জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব (অপারেশন-২) আকরামুজ্জামান প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। ওই প্রতিবেদনে এলপিজি ব্যবহারকারীদের সতর্ক হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সিলিন্ডারের গায়ে খোদাই করে লেখা মেয়াদ দেখে ক্রয় করার পাশাপাশি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয় দুর্ঘটনার কারণ এবং প্রতিকারের উপায়ের উপর প্রচারণা চালাতে হবে। ব্যবহারকারীদের সচেতন করে তুলতে হবে। এলপিজি বোতল নির্দিষ্ট সময় পরপর পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়া আধুনিক সেফটি রেগুলেটর ব্যবহার করতে হবে। প্রতি তিন বছর পর রেগুলেটর এবং প্রতিবছর একবার হোস পাইপ পরিবর্তন করতে হবে। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ভবিষ্যতে দেশের প্রায় সকল এলাকাতে এলপিজি ব্যবহার হবে। ইতোমধ্যে জ্বালানি বিভাগ দেশে ৫৫টি কোম্পানিকে এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপন করার অনুমোদন দিয়েছে। আর বিস্ফোরক অধিদফতর থেকে প্রাথমিক অনুমোদন নিয়েছে ১০০ কোম্পানি। যদিও এর সবগুলো এখনও বিপণন শুরু করেনি। এলপিজির বাজার সম্প্রসারণের সঙ্গে এর বহুমুখী ব্যবহারের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে গাড়ি চালানোর জ্বালানি হিসেবে অটোগ্যাস (এলপিজি) ব্যবহার করার চিন্তা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনটি কোম্পানিকে সরাদেশে অটোগ্যাস স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ব্যবহার সম্প্রসারণের সঙ্গে এর নিরাপত্তার বিষয়েও জোর দেয়া হচ্ছে। বৈঠক সূত্র জানায়, বীমা করার বিষয়ে এলপিজি বিপণনকারীদের সঙ্গে মন্ত্রণালয় পৃথক বৈঠক করবে। কোম্পানিগুলোকেই তাদের ভোক্তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। বৈঠকে জ্বালানি সচিব নজিম উদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×