ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আলপনায় বর্ণিল চার কিমি সড়ক

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

আলপনায় বর্ণিল চার কিমি সড়ক

সংবাদদাতা, নান্দাইল, ময়মনসিংহ, ১৩ এপ্রিল ॥ পুব আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে কেবল। কাক ডাকা সেই ভোর থেকেই স্কুলড্রেস পরা কিশোরীরা ছুটতে শুরু করে স্কুলের দিকে। উদ্দেশ্য বর্ণিল আল্পনায় মহাসড়ক রাঙাবে মনের মতো। ৪ কিলোমিটার সড়কে আল্পনা এঁকে স্বপ্ন ছুঁয়েছে ময়মনসিংহের নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে আল্পনায় সড়ক রাঙানোর কাজ। আর এতে অংশ নেয় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী। এদের সহযোগিতা করে বিদ্যালয়ের আরও প্রায় ১৭শ’ ছাত্রী। বিদ্যালয়টির ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখতে রাস্তার ধারে জড়ো হয় উপজেলার লক্ষাধিক জনগণ। নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ‘ঘাস ফড়িং’ নামে একটি সংগঠনের কারণে দেশে বেশ আলোচিত। এবার তারা বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখছে। পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কটিকে আল্পনায় রাঙানোর পরিকল্পনা করে। নান্দাইল উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে সড়কের দুই দিকে দুই কিলোমিটার করে চার কিলোমিটার সড়ক আল্পনায় রাঙানোর কাজ শুরু হয় শুক্রবার ভোরে। এতে রং দিয়ে সহযোগিতা করে আরএফএল রেইনবো গ্রুপ। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ আল্পনার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন। তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য আরও উপস্থিত হন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চৌধুরী স্বপন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুন ফাতেমা পপি, পৌর সভার মেয়র রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া প্রমুখ। চার কিলোমিটার দীর্ঘ আল্পনা আঁকতে ৪০টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ৪০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। চ-ীপাশা এলাকার আল মাহমুদ রবিন বলেন, ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে ফেরার পথে শিক্ষার্থীদের একটি দল রাস্তার পাশে দাঁড়ানো দেখে প্রথমে অবাক হলাম। পরে তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করলে ফারিয়া আফরিন নামে এক শিক্ষার্থী বলে ‘আঙ্কেল আমরা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ৪ কিলোমিটার সড়ক আল্পনায় রাঙিয়ে গিনেস বুকে রেকর্ড করব।’ ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, পুরাতন বছরের সকল দুঃখ কষ্ট ভুলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আমাদের এই আয়োজন। এই আয়োজনের মধ্যে আমরা সকল শুভ শক্তিকে জানান দিতে চাই। সেই সঙ্গে বিশ্বের সর্ববৃহৎ আল্পনা অঙ্কনের মাধ্যমে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিতে চাই। ওই স্কুলের দশম শ্রেণীর সুনিয়া আক্তার জানায়, প্রচ- রৌদ্রের ভেতর কাজ করার মাঝেও যে আনন্দ আছে তা আল্পনা না আঁকলে বুঝতাম না। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ঘুম থেকে উঠে স্কুলের মেয়েদের এমন আয়োজন দেখে অবাক হলাম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকি। নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবদুল খালেক বলেন, ৪ হাজার মিটার রাস্তা আল্পনা অঙ্কন করে আমাদের মেয়েরা বিশ্বের দীর্ঘতম আল্পনা অঙ্কনের রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ভারতের নদীয়া জেলায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ২.৯ কিলোমিটার রাস্তা আল্পনা অঙ্কন করে ‘গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে’ স্থান করে নেয়। সেই স্বপ্নের স্থানটিতে নিজেদের নাম উঠানোর লক্ষ্য নিয়ে আমাদের মেয়েরা এই আল্পনা অঙ্কনের উদ্দ্যোগ নেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্রীদের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাস্তার দুই দিকে ৪ হাজার মিটার রং দিয়ে আল্পনা অঙ্কন করেছে। এমন সৃজনশীল উদ্যোগকে সরকার সব সময় উৎসাহিত করে। এই বিষয়ে সাংসদ আনোয়ারুল আবেদীন খান বলেন, চৈত্রের খরতাপ মাথায় নিয়ে অসহ্য গরমে মনের সাহস আর শক্তিকে পুুঁজি করে রাস্তায় নেমে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ৩ মিটার প্রস্ত সড়কে আল্পনা এঁকে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবার পথে হাঁটছে বিদ্যালয়ের মেয়েরা। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
×