ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের সঙ্গে এমওইউ সই

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের সঙ্গে এমওইউ সই

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার জেনেভায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সঙ্গে এই এমওইউ সই হয়েছে। জেনেভায় ইউএনএইচসিআরের সদর দফতরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক এবং ইউএনএইচসিআরের মহাপরিচালক ফিলিপো গ্র্যান্ডি নিজ নিজ পক্ষে এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন। ইউএনএইচসিআরের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের এই সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের ফলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটি সহজ হবে। রোহিঙ্গারা যে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফেরত যাবেন, এর মাধ্যমে সেটিও নিশ্চিত হওয়া যাবে। এর আগে ১৯৯২ সালে যখন রোহিঙ্গারা এসেছিল, তখনও ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির আদলে এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে সমঝোতা স্মারকটি চূড়ান্ত করে সই করা হয়েছে। সমঝোতা স্মারকে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার অধিবাসী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সমঝোতা স্মারকে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার ভূমিকা এবং কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদভাবে বলা আছে। স্মারক অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের তথ্য সরবরাহ, কাঠামো তৈরির জন্য জমি দেয়া ও অন্যান্য সুবিধা নিয়ে কাজ করবে সরকার। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া, তাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া, চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে ইউএনএইচসিআর। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে সরকার ও শরণার্থী সংস্থা তথ্য সরবরাহ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিল, যা মূল প্রত্যাবাসন চুক্তির সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে জাতিসংঘকে যুক্ত করতে প্রথমে মিয়ানমার আপত্তি জানিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ বরাবরই চেয়েছে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও জড়িত থাকুক। মিয়ানমারের সঙ্গে এ নিয়ে একাধিকবার আলোচনা শেষে দেশটি জাতিসংঘকে যুক্ত করতে রাজি হয়। গত বছরের ২৫ আগস্ট তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালানোকে কেন্দ্র করে রাখাইনে দমনপীড়ন চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় মগরাও। বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সেখানে তাদের মারধর করে ঘর-বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নারীদের ধর্ষণ ছাড়াও ফসলসহ মূল্যবান দ্রব্যাদি লুট করা হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়াদের মধ্যেও অনেকের শরীরে ক্ষতের চিহ্ন দেখা গেছে। জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমারে জাতিগত নিধন চালানো হয়েছে। নিন্দার ঝড় উঠে বিশ্বজুড়েও। এমনকি দেশটির গণতন্ত্রকামী নেত্রী আউং সান সুচির ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন বিশ্ব নেতারাও। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ইতোমধ্যেই দু’টি চুক্তি হয়েছে। পাশাপাশি একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপও গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক চাপ ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমার সম্মত হলেও কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়নি।
×