ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

সব লণ্ড ভণ্ড করে দিচ্ছেন ট্রাম্প ॥ হোয়াইট হাউসে বরখাস্ত আতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৭:২২, ১১ এপ্রিল ২০১৮

সব লণ্ড ভণ্ড করে দিচ্ছেন ট্রাম্প ॥ হোয়াইট হাউসে বরখাস্ত আতঙ্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৬ হাজার কোটি ডলারের শুল্ক আরোপ করেছেন। হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয় চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত অর্থনীতির তরফ থেকে অসম প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করার জন্যই এটা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ওদিকে এর জবাবে চীনও ৩ হাজার কোটি ডলার মূল্যের ১২৮টি মার্কিন পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। মার্কিন শুল্প আরোপের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে ট্রাম্পের সহকর্মীরা বৈঠকের পর বৈঠকে মিলিত হয়ে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন যে এমন পদক্ষেপের জন্য যথেষ্ট মূল্য দিতে হতে পারে। এতে মার্কিন শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং শেয়ার বাাজরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তারা ট্রাম্পকে স্মরণ করিয়ে দেন যে এর আগে মার্চ মাসেই তিনি এ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের ওপর যে বৈশ্বিক শুল্ক আরোপ করেছিলেন তার জবাবে ইউরোপীয় মিত্ররাও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি নেয় এবং পরিণতিতে হোয়াইট হাউসের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্ট পদত্যাগ করেন। গত ১৩ মার্চ ট্রাম্প এক টুইটের মারফত পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে বরখাস্ত করেন এবং উগ্রপন্থী সিআইএপ্রধান মাইক পোম্পিওকে তাঁর স্থ’লাভিষিক্ত করেন। এর তিন দিন পর ট্রাম্পের তাড়নায় উৎসাহিত হয়ে এ্যান্টর্নি জেনারেল জেফ সেসশন্স এফবিআইএর ডেপুটি ডিরেক্টর এন্ড্রু ম্যাকেরকে বরখাস্ত করেন। ব্যুরোর তরফ থেকে এই এন্ড্রুই রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত করছিলেন। ট্রাম্পের পরবর্তী টুইটগুলোতে বিশেষ কৌঁসুলি বরার্ট মুয়েলারকে প্রথমবারের মতো স্বনামে সমালোচনা করা হয়। তা থেকে এমন আশঙ্কার সৃষ্টি হয় যে প্রেসিডেন্ট তাকে বরখাস্ত করতে পারেন। যার পরিণতিতে এক সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে দারুণ প্রভাব ফেলার মতো নীতি-নির্ধারণী উদ্যোগ এবং উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের রদবদল এই দুইয়ের মিশ্রণের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরে। সেখানে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার এক কালো ছায়া বিস্তার করেছে। হোয়াইট হাউস স্টাফদের ভয় কখন কার চাকরি যায় পরবর্তী ই-মেইল বা ফোনকলটাই হয়ত জানিয়ে দেবে যে কাউকে না কাউকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের কেউ কেউ সাংবাদিকদের পর্যন্ত জিজ্ঞেস করছে যে স্টাফ পরিবর্তনের যেসব গুজব শোনা যাচ্ছে সেগুলো সত্য কিনা। ধারণা করছে যে যারা সরকার চালাচ্ছে তাদের চেয়ে সাংবাদিকরা এ সম্পর্কে ভাল জানতে পারে। ট্রাম্পের নিজস্ব এইডরা পর্যন্ত আশঙ্কা করছে যে তার কা-কারখানা দেশ ও বিশ্বের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। হোয়াইট হাউস থেকে প্রথম বেরিয়ে গেছেন চীফ অব স্টাফ রেইনস প্রাইবাস এবং সেই সঙ্গে তার বেশ কয়েক সহকর্মী। ট্রাম্পের বরখাস্তের সিদ্ধান্তের মধ্যে এ পর্যন্ত সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত হলো টিলারসনকে বিদায় দেয়া। অন্যরা হয় কেলেঙ্কারির বোঝা মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন নয়ত ট্রাম্পের হুকুম তামিলকারী চীফ অব স্টাফ অবসরপ্রাপ্ত মেরিন জেনারেল জন কেলি তাদের বিদায় দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের স্টাফ সেক্রেটারি রব পর্টার তার প্রাক্তন স্ত্রীদের মারধর করতেন এটা জনসমক্ষে জানাজানি হওয়ার পর তাঁকে বের করে দেয়া হয়। এরপর বিদায় নেন ট্রাম্পের শীর্ষ মিডিয়া স্ট্র্যাটেজিস্ট হোপ হিকস্। ট্রাম্পের ওপর তার যথেষ্ট প্রভাব ছিল এবং হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছিলেন যে তাঁর বিদায়ে ট্রাম্প অসুবিধায় পড়বেন। শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা গ্যারি কোহেন ধাতব পদার্থের ওপর শুল্ক আরোপ নিয়ে হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর পদত্যাগ করেন। ১৯ মার্চ প্রেসিডেন্ট তার আইনী টিমকে ঢেলে সাজিয়ে ওয়াশিংটনের সুপরিচিত আইনজীবী জোসেফ ডি জেনোভাকে টিমে যুক্ত করেন। এই জেনোভাই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য এফবিআই ও বিচার বিভাগকে অভিযুক্ত করেছিলেন। প্রশাসন কর্মকর্তাদের ধারণা সামনে আরও পদত্যাগ ও বহিষ্কারের ঘটনা আসছে। অবশিষ্ট যেসব উপদেষ্টা আছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ দু’জন কেলি এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টারও শীঘ্রই ট্রাম্পকে ছেড়ে যাবেন বলে তাদের সহকর্মীদের ধারণা এতে ট্রাম্প মঞ্চে একাকী হয়ে পড়বেন। কিন্তু দেশ পরিচালনায় নিজের ক্ষমতা ও সামর্থ্য সম্পর্কে অধিকতর আস্থাবান ট্রাম্প নিজের চারপাশে তার পছন্দের লোকদের রাখতে চান। আর পছন্দের লোকজন বলতে টেলিভিশনে তিনি যেসব লোকদের দেখতে পছন্দ করেন। কোহেনের শূন্যস্থান পূরণের জন্য তিনি তার শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়ে এসেছেন ল্যারি কাডলোকে যিনি এক সময় ছিলেন প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের জুনিয়র এইড এবং সিএনবিসির নিয়মিত অনুষ্ঠান শিল্পী। তিনি ফক্স এ্যান্ড ফ্রেন্ডস্রে প্রাক্তন শিল্পী হিদার নুয়াটকে পররাষ্ট্র দফতরের শীর্ষ পাবলিক ডিপ্লোমেসির পদে নিযুক্ত করেছেন। সমস্যাকবলিত ভেটারান এ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব দেয়ার জন্য ফক্সের আরেক কনট্রিবিউটার পিট হেগসেথের ওপরও তার দৃষ্টি রয়েছে। এসব কা-কারখানা ট্রাম্প তার বন্ধুদেরই শুধু যে আহত করছেন তাই নয়, উপরন্তু আমেরিকার মিত্রদেরও ক্ষুব্ধ করছেন এবং শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছেন। সম্ভবত তিনি কারোর কথাই শুনছেন না এবং নিজেই যা ভাল মনে করছেন তা করে ছাড়ছেন। সূত্র : টাইম
×