ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অদম্য ১০ নারী পেলেন অনন্যা সম্মাননা

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৮ এপ্রিল ২০১৮

অদম্য ১০ নারী পেলেন অনন্যা সম্মাননা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাগো নারী জাগো বহ্নি-শিখা/জাগো স্বাহা সীমান্তে রক্ত-টিকা ...। পুরুষশাসিত সমাজে তারা জ্বলে উঠেছেন আলোর প্রদীপ হয়ে। অজস্র প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তৈরি করে নিয়েছেন আপন অবস্থান। হতদরিদ্র পরিবারের কিশোরীটি ফুটবল খেলে অর্জন করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। স্বামী কর্তৃক নির্যাতিতা কুড়িগ্রামের এক নারী অটোরিক্সা চালিয়ে সৃষ্টি করেছেন অনন্য উদাহরণ। কেউ বা আবার অন্ধজনকে দেখিয়েছেন দৃষ্টিশক্তির নতুন পথ। শত বাধা পেরুনো এমন দশ আলোকিত নারী পেলেন অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা। নানা ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছরের সম্মাননাপ্রাপ্ত সেই অদম্য নারীরা হলেন শিক্ষক ডাঃ সাদেকা হালিম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানম, নারী উদ্যোক্তা ফারজানা চৌধুরী, সাংবাদিক নবনীতা চৌধুরী, গ্রামীণ নারীর স্বনির্ভরতায় স্বপ্না রাণী, তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার কর্মী নাদিরা খানম, ক্রীড়া সংগঠক মাহফুজা আক্তার কিরণ, সমাজসেবক নাজিয়া জাবীন, কণ্ঠশিল্পী শারমিন সুলতানা সুমি ও ফুটবলার মারিয়া মান্ডা। পাক্ষিক অনন্যা প্রবর্তিত এই সম্মাননা প্রদান করা হলো শনিবার। বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি। সভাপতিত্বের পাশাপাশি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যনন্দনের নৃত্যশিল্পীরা। এর পর সঙ্গীত পরিবেশন করেন অনিমা মুক্তি গোমেজ। এরপর প্রদর্শিত হয় সম্মাননাপ্রাপ্ত দশ নারীর জীবনীভিত্তিক তথ্যচিত্র। ফারজানা ইসলাম বলেন, এই নারীদের জীবনগল্প অনুপ্রেরণা যোগাবে। তারাই বাংলাদেশকে বিশ^ দরবারে তুলে ধরছে, ধরবে। আমার দৃঢ় বিশ^াস তারাই পারবেন। দীপু মনি বলেন, আজকের এ মঞ্চের নারীরা সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়েই সাফল্য পেয়েছে। তারা আরও সাফল্য পাবে- এটাই প্রত্যাশা। তাসমিমা হোসেন বলেন, তসলিমা নাসরীনের মাথার মূল্য যে বছর (১৯৯৩) ৪০ হাজার টাকা ধরা হয়, সে বছর থেকে আমরা অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা চালু করি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবন্ধকতা পেরনো নারীদের তুলে এনে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। সম্মাননাপ্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেক হালিম, ফিফার সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণ, স্পর্শ ব্রেইলের প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জাবীন, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ফারজানা চৌধুরী, ডিবিসি’র সম্পাদক নবনীতা চৌধুরীসহ সবাই সমাজের জন্য স্ব স্ব ক্ষেত্র থেকে কাজ করে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। নাদিরা খানম বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার কাছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে দাবি, তিনি সংসদে আমাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করে দেন। আমরা সংসদে দাঁড়িয়ে আমাদের অবেহলা, লাঞ্চনার কথা বলতে চাই। স্বপ্না রাণী বলেন, অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পড়াশোনার করার সুযোগ মেলেনি। স্বামীর সংসার ছেড়ে এসে অটোরিক্সা চালিয়ে আমি সংসার চালাচ্ছি। এখন আমার প্রত্যাশা, আমি পিকআপ চালাব। তাইলে আমার সন্তানদের আরও ভালভাবে মানুষ করতে পারব। শারমিন সুলতানা সুমি বলেন, নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য হওয়ায় খুব কষ্ট করে বড় হয়েছি। আমার মায়ের শখ ছিল একটা গাড়ির, যা আমি গান গেয়ে কিনে দিতে পেরেছি। আমার কাছে এটাই বড় প্রাপ্তি জীবনের। ১৯৯৩ সাল থেকে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। প্রতি বছর নিজ নিজ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ১০জন বিশিষ্ট নারীকে এই সম্মাননা দেয়া হয়। কবি হাসান হাফিজুর রহমানকে নিবেদিত আলোচনা ॥ বাংলা কবিতায় বাদ বদলে অনন্য ভূমিকা রাখা এক কবি হাসান হাফিজুর রহমান। প্রয়াত হয়েছেন কবি, সৃষ্টির নির্যাসে রয়ে গেছে তাঁর কবিতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ১৬ খ-ের দলিলপত্র সম্পাদনা তাঁর আরেক অনন্য কীর্তি। দেশের অন্যতম প্রধান এই কবিকে নিবেদিত আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হলো শনিবার। বিকেলে বনানী ডিওএইচএস কমিউনিটি সেন্টারে এ আলোচনাসভার আয়োজন করে জামালপুর সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিষদ। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপক রফিকুল্লাহ খান, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, নজরুল গবেষক সৌমিত্র শেখর, নৌ-পরিবহন সচিব আব্দুস সামাদ ফারুক, সংগঠক রাশেদুল হাসান শেলী প্রমুখ। কবি হাসান হাফিজুর রহমানের কবিতা থেকে কিছু অংশ আবৃতি করেন নাট্যাভিনেতা এম এম মহসিন ও শাহাদাত হোসেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, তেপ্পান্ন-চুয়ান্ন সাল পর্যন্ত কবি শামসুর রাহমান ছিলেন অরাজনৈতিক মানুষ। একুশের সঙ্কলনে তিনি লেখা দিতে চাননি। সে সময় কলকাতার একটি কাগজে প্রকাশিত শামসুল রাহমানের একটি কবিতা একুশের সঙ্কলনে লিপিবদ্ধ করেন হাসান হাফিজুর রহমান। সেটি পড়ে মনেই হয়নি যে কবিতাটি একুশের জন্য লেখা নয়। সম্পাদকের দায়বদ্ধতা থেকে তিনি এ কাজটি করেছিলেন। মাত্র ৫০ বছর বয়সে তিনি মারা গেছেন। একে অকাল মৃত্যুই বলা যায়। কিন্তু এত অল্প সময়ে তিনি আমাদের যা দিয়ে গেছেন, তা অনেক দিন পর্যন্ত আমাদের মধ্যে থেকে যাবে। আনিসুল হক বলেন, হাসান হাফিজুর রহমানের সান্নিধ্য না পেয়েও আমরা তাঁর অবদান সম্পর্কে অবগত। বাংলা সাহিত্যকে প্রাদেশিকতা, আঞ্চলিকতা ও গ্রাম্যতা থেকে রক্ষা করেছেন এই কবি। তাঁর হাত থেকে যেসব লেখকের লেখাগুলো একুশের সঙ্কলনে স্থান পেয়েছিল, পরে তাঁরাই গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যক হয়ে উঠেছিলেন। সোমিত্র শেখর বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট নির্মাণে হাসান হাফিজুর রহমানের রয়েছে অনন্য অবদান। তাঁর কবিতায় মানুষকে সংগঠিত হওয়ার ইঙ্গিত ছিল। তাঁর অনুজ ও পরিবারের সদস্যরা কি তাঁর আদর্শ অনুসরণ করতে পেরেছেন? ঋষিজের স্মরণে আলতাফ আলী হাসু ॥ ‘ও সখিনা গেছস কিনা ভুইলা আমারে’ কিংবা ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’সহ অনেক জনপ্রিয় গানের গীতিকবি আলতাফ আলী হাসু। মুক্তিযোদ্ধা এই গীতিকবি ছিলেন ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক। অষ্টাদশতম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর আয়োজনে শনিবার স্মরণ করা হলো আলতাফ আলী হাসুকে। এ স্মরণানুষ্ঠানে প্রদান করা তাঁর নামাঙ্কিত স্মৃতিপদক। আলতাফ আলী স্মৃতিপদক পেয়েছেন ছড়াকার আসলাম সানী ও লেখক আমীরুল ইসলাম। শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, কথাসাহিত্যিক আখতার হুসেন ও আলতাফ আলী হাসুর সহধর্মিণী মিনারা বেগম। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর। আলোচনা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে সম্মেলক কণ্ঠে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী, ক্রান্তি, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, আনন্দ, স্ব-ভূমি, পঞ্চাভাস্কও, সমস্বর ও ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা।
×