ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যোগ হবে বিআরটিসির বহরে;###;প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৭৯৮ কোটি টাকা;###;ঋণ দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক

আনা হচ্ছে ৮শ’ বাস-ট্রাক ॥ আগামী মাসে আন্তর্জাতিক টেন্ডার

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৮ এপ্রিল ২০১৮

আনা হচ্ছে ৮শ’ বাস-ট্রাক ॥ আগামী মাসে আন্তর্জাতিক টেন্ডার

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) সেবার মান বাড়াতে আমদানি করা হচ্ছে ৮শ’ বাস ও ট্রাক। চলতি বছরের শেষ দিকে বিআরটিসি বহরে এসব যানবাহন যুক্ত হতে পারে। আগামী মাসে পরিবহন ক্রয়ে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের আগস্টে এক হাজার ১শ’ বাস ও ট্রাক কেনার পরিকল্পনা নেয় সরকার। যদিও এর অনেক আগে থেকেই নতুন এসব গাড়ি আমদানির কথা বলে আসছিল সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। নানা জটিলতায় প্রায় দুই বছর বিষয়টির তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। এক বছর আটমাস পর এসব যানবাহন ক্রয়ে আন্তর্জাতিক টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরুর কথা হচ্ছে। জানা গেছে, বিআরটিসির জন্য বাস ও ট্রাক সংগ্রহের লক্ষ্যে পৃথক দুটি প্রকল্প ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। ভারতের অর্থায়নে প্রকল্প দুটির মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় হবে ৭৯৮ কোটি টাকা। দুই প্রকল্পে ৫৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেবে ভারত। বাকি অর্থের যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে ৬শ বাস কিনতে ব্যয় হবে ৫৮১ কোটি টাকা। আর ২১৭ কোটি টাকায় কেনা হবে ৫শ’ ট্রাক। প্রকল্প দুটি সম্পর্কে বিআরটিসির এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। তাই দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যাংকটির সম্মতি প্রয়োজন। সর্বশেষ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে অনুষ্ঠিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা শীর্ষক সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় দ্রুত প্রকল্প দুটির দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও যানবাহনের গুণগত মান নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, দূরপাল্লার প্রতিটি এসি বাস কিনতে ব্যয় হবে ৭৬ লাখ টাকা। আর নন-এসিগুলোর দাম পড়বে প্রতিটি ৪৬ লাখ টাকা। এছাড়া প্রতিটি ডাবল ডেকার বাস ক্রয়ে ব্যয় হবে ৭৯ লাখ ও এসি সিটি বাসের জন্য ৭৫ লাখ টাকা। এসব বাসের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১২ বছর। বিআরটিসির ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সংস্থাটির বহরে বর্তমানে মোট ১ হাজার ৫৩৮ বাস রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫৭টিই অচল। অচল বাসগুলোর ৩০১ মেরামতযোগ্য। বাকি ২৫৬টির মধ্যে ১৫০ এরই মধ্যে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। আরও ১০০ অচল বাস নিলামে তোলার প্রক্রিয়া চলমান। ৩০১ মেরামতযোগ্য বাসের মধ্যে ১০৪ দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানির। বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, এসব বাস মেরামতের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ৪ লাখ ডলার অনুদান হিসেবে দিচ্ছে। অন্যদিকে সচল ৯৮১ বাসের মধ্যে সরাসরি যাত্রীসেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে ৬৭৩। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা শহরের ৪৪ রুটে চলছে ২৬৭ সিটি বাস এবং ১৫০ আন্তঃজেলা রুটে ৪০৬ দূরপাল্লার বাস। বাকিগুলোর মধ্যে সচিবালয়ের স্টাফ বাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ১৩৭, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ১৩৫, নারীদের বিশেষায়িত সেবা হিসেবে ১৮ ও দুটি স্কুল বাস। এর বাইরে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা, ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা, আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা-আগরতলা ও ঢাকা-শিলং-গোহাটি রুটে আন্তর্জাতিক বাস পরিচালনা করছে বিআরটিসি। বাস ট্রাক কেনার সিদ্ধান্ত ॥ ভারত থেকে ২শ’ ডাবল ডেকার, ১শ’ নন এসি বাস ও ৫শ’ ট্রাক আনতে দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রীয় ঋণের (এলওসি) শর্তানুযায়ী সে দেশে প্রস্তুত করা বাস-ট্রাক কিনতে হবে। এর আগে ‘টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন’ বা নির্মাণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে যে ভিন্নমত দেখা দিয়েছিল কয়েক দফা বৈঠক শেষে দু’দেশের কর্তৃপক্ষ তাতে একমত হয়েছে। এতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বাস-ট্রাকের মান নিয়ে কোন ছাড় দেয়নি। গত দুই এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে বৈঠক হয়। ‘পুনঃনিরীক্ষা’ এ বৈঠকে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রী অনুমোদনের পর টেন্ডার আহ্বান করা হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ এহসান-ই-এলাহী জানান, যাচাই বাছাই শেষ হয়েছে। কোয়ালিটির ক্ষেত্রে আমরা কোন ছাড় দেইনি। এখন টেন্ডার হবে। টেন্ডারে ভারতীয় বাস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতায় যে ভাল করবে তার বাস-ট্রাক নেয়া হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, চলতি বছরের অক্টোবরের দিকে বাস-ট্রাক বহর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) বহরে যুক্ত হবে। ঢাকার বাস-ট্রাক সঙ্কট কাটাতে ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি’র জন্য প্রায় দু’বছর থেকে ভারতীয় ঋণে ১১শ’ বাস ও ট্রাক কেনার প্রকল্প প্রক্রিয়া চলছিল। বিআরটিসিতে গত ৬ মাসে ২৩ নতুন রুট চালু হয়েছে। এসব রুট পুরাতন ৬৫ গাড়ি দিয়ে চালানো হচ্ছে। পুরাতন রুটগুলোতেও বাস সঙ্কট রয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া শেষে এসব বাস-ট্রাক আনতে টেন্ডার আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) শর্তানুসারে বাস কিনতে হবে ভারতীয় ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি থেকে। এখন সরকার শীঘ্রই একটি আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করবে। এতে ভারতীয় কোম্পানিগুলো অংশগ্রহণ করবে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে বাসগুলো এ বছরের শেষ দিকে যুক্ত হতে পারে বিআরটিসির বহরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘বাস ও ট্রাক কেনা প্রকল্পের রিভিউ মিটিং হয়েছে। যেখানে টেন্ডারে যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। টেন্ডার হলে পরে ভারতের যারা বাস তৈরি করেন তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে। যারা ভাল করবে তাদের বাস আনা হবে। এটা তাদের দেশে তৈরি বা জয়েন্টভেঞ্চারে হতে পারে। এজন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এক থেকে দেড় মাস সময় লাগতে পারে। এর মধ্যে মূল্য নির্ধারণের কাজ রয়েছে। তারপর বাস-ট্রাক তৈরি করতে আরও চার-পাঁচ মাস লাগবে। সব মিলিয়ে বছর শেষে বাংলাদেশের সরকারী পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি পাবে ২শ’ ডাবল ডেকার, একশ’ নন এসি বাস ও ৫০০ ট্রাক। তখন ঢাকাসহ দূরপাল্লার রুটে এসব নতুন বাস নামনো হবে। তাই নতুন বাস ও ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বছরের শেষ নাগাদ।
×