ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এইচএসসি পরীক্ষা আজ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২ এপ্রিল ২০১৮

এইচএসসি পরীক্ষা  আজ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দফতরের কঠোর সব পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই আজ দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। প্রথম দিন সকাল ১০টায় পরীক্ষায় বসছে ১৩ লাখ পরীক্ষার্থী। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের প্রেক্ষাপটে এ পরীক্ষা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ থাকলেও সেই উদ্বেগ কাটাতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেয়া হয়েছে বলে বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ডসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর। এদিকে প্রশ্নফাঁস চক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। শান্তিপূর্ণ পরীক্ষা আয়োজনে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আজ প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হবে বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা। পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এবারের পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছে ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ শিক্ষার্থী। গেল বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৭১ জন। দেশের মোট আট হাজার ৯৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মোট দুই হাজার ৫৪১টি কেন্দ্রে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে দশ লাখ ৯২ হাজার ৬০৭ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিমে এক লাখ ১২৭ জন, কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি বিএম-এ এক লাখ ১৭ হাজার ৭৫৪ জন এবং ডিআইবিএসে ৯৬৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছয় লাখ ৯২ হাজার ৭৩০ জন ছাত্র এবং ছয় লাখ ১৮ হাজার ৭২৭ জন ছাত্রী। নানা পদক্ষেপ, প্রশ্নফাঁস বন্ধের আশা ॥ শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে আসন নিতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে এসএমএস করে সেট কোডের নির্দেশনা পাঠাবে শিক্ষা বোর্ড। তারপর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা যাবে। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমন মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন, যা দিয়ে ছবি তোলা যায় না। পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-ওওও/১৯৭৬) এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে এ আদেশ দেয়া হয়েছে। আদেশ ২ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার দিনগুলোতে বলবৎ থাকবে। এদিকে প্রশ্ন ফাঁসের পর আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ আশা করছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেয়া নতুন উদ্যোগের ফলে এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না। তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের নজরদারি জোরদার করেছে যেন প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয়। তবে এটা মনে রাখতে হবে প্রশ্নপত্র কিন্তু বেশ কিছুদিন আগেই প্রণীত হয়ে গেছে। আমাদের সিস্টেমে এই প্রশ্নপত্র বিভিন্ন সময় আড়াইশ থেকে পৌনে তিনশ’ মানুষের দেখার সুযোগ থাকে। এ শিক্ষাবিদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে প্রশ্নপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার সময় তা ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই সম্ভাবনা রোধ করতে এবার বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বোর্ড কর্তৃপক্ষের ধারণা হয়েছে ভল্ট কিংবা ট্রেজারি থেকে যখন প্রশ্নপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে যায় তখন তা ফাঁস হয়ে যায়। সেটি যদি সত্য হয় তাহলে আমি আশা করি এবারের এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের দুষ্টচক্রে পড়বে না। শিক্ষাসচিব মোঃ সোহরাব হোসেন বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় খুবই উদ্বিগ্ন। প্রশ্নফাঁস রোধে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি। এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নিয়োজিত ২৮টি ইউনিট কাজ করবে। আগামীতে আর প্রশ্নফাঁস হবে না বলে আশা করি। প্রশ্নফাঁস চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার ॥ এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। শনিবার বিকেল ৪টায় র‌্যাব-১ এর একটি দল রাজধানীর তেজগাঁও লিংক রোড এলাকা থেকে তাদের আটক করে। আটকরা হলেন- মিজানুর রহমান মিলন (২৪) ও রাফসান চৌধুরী (২৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন ফাঁসে ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন চেক করে প্রশ্ন ফাঁসের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান রবিবার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় গ্রেফতার মিজানুর রহমান ২০১৫ সালে কুড়িগ্রাম থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হয়। এরপর থেকেই সে এ কাজে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৫ সালে জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ছাড়াও পরীক্ষার রেজাল্ট পরিবর্তনের কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। আটক মিজান নিজেকে ঢাকা বোর্ডের কর্মচারী এবং বকশীবাজার এলাকায় বসবাস করত বলে জানাত। সে ফেসবুকের একাধিক এ্যাকাউন্ট থেকে প্রশ্ন সরবরাহ করবে বলে আগাম পোস্ট দিত এবং এজন্য অগ্রিম টাকা বিকাশের মাধ্যমে চাইত। অপরাধীরা অনেক পরীক্ষার্থী প্রশ্ন পাওয়ার আশায় বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করত। এ ক্ষেত্রে মিজান কাউকে পূর্বের বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কাটছাঁট করে সরবরাহ করত। আবার মাঝে মাঝে ফেসবুকের বিভিন্ন লিংক থেকে প্রাপ্ত প্রশ্ন সরবরাহ করত। প্রশ্নপত্র বাবদ সে ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা নিত বলে স্বীকার করেছে। এ পর্যন্ত আনুমানিক সে ৮/৯ লাখ টাকা প্রশ্ন সরবরাহের নামে গ্রহণ করেছে। অপর আটক রাফসান চৌধুরী এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর থেকেই এক নিকট বন্ধুর মারফতে এ কাজে জড়ায়। সে প্রশ্নফাঁসসহ রেজাল্ট পরিবর্তনের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা বিকাশের মাধ্যমে গ্রহণ করত। মিজানের মতো একই কৌশলে সে প্রথমে ফেসবুকে প্রশ্ন সরবরাহের আশ্বাস দিয়ে অগ্রিম টাকা নিত। সে ২০১৬ সাল থেকে এই পর্যন্ত আনুমানিক ৩-৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানায়। রাফসানকে ২০১৬ সালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে আটকের পর সাত মাস কারাভোগ করে।
×