ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ॥ মে মাসে ঢাকায় ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন

মিয়ানমার রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করতে সম্মত

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩০ মার্চ ২০১৮

মিয়ানমার রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করতে সম্মত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী মে মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন। এই সম্মেলনে জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হবে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক সেমিনারে এ কথা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম। ওই সম্মেলনের বিষয়েই এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুটি জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। কেবল তা-ই নয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে কিছু করার জন্যও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হবে। সম্মেলনে অংশ নিতে আসা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪ মে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন নিয়ে যাওয়া হবে উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছে রোহিঙ্গা আশ্রয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের মানবিকতার বিষয়টি তুলে ধরা হবে। তিনি জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সঙ্গে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) সমঝোতা হয়েছিল। এখন মিয়ানমারও সংস্থাটির সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করতে রাজি হয়েছে। রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনকে (ইউএনইচসিআর) অন্তর্ভুক্ত করতে মিয়ানমার সম্মত হয়েছে বলে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম জানান, মিয়ানমার বলছে, বাংলাদেশের দেয়া রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক তালিকায় তথ্যের ঘাটতি আছে। তারা (মিয়ানমার) শীঘ্রই দ্বিতীয় দফা আরেকটি তালিকা দেবে। গত মাসে মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সফরের সময়ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরকে অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মত ছিল না মিয়ানমার। জাতিসংঘের ওই প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হকও ছিলেন। সে সময় মিয়ানমার থেকে ফিরে এসে শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রথম দিকে সপ্তাহে ১৫শ’করে রোহিঙ্গা নেবে মিয়ানমার। পরে এ সংখ্যা বাড়বে। এর আগে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমিতে ফেরাতে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দুই দিনের বৈঠকে বসেন। পরে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করতে একটি ‘ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে বলা হয়, যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন আগামী ২ বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৯৮০ সালে দুই দেশের সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী ‘সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা’ সন্ত্রাসীদের হস্তান্তর করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানায়। তবে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার নানা টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ করে আসছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনাকে মিয়ানমারের পূর্বপরিকল্পিত এবং কোন জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলেও আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি। সম্প্রতি সংস্থাটির মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো মিয়ানমার অসম্ভব করে তুলেছে। সেখানে (রাখাইন) রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার মত কোন নিরাপদ পরিস্থিতিও নেই। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত হামলার ধুয়া তুলে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দেশটির কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছিল। তখন থেকে নির্যাতন নিপীড়ন থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে আনুমানিক ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বর্তমানে তারা কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করছে।
×