ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাতের মুঠোয় বিনোদন

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৯ মার্চ ২০১৮

হাতের মুঠোয় বিনোদন

আমাদের এ সময় বিনোদন হলো, বিশেষ করে আমার ক্ষেত্রে- ফেসবুক চালানো, খবরের কাগজ পড়া, মোবাইলে পুরনো দিনের সেই জগন্ময় মিত্রের আমলের গান শোনা। মাঝেমধ্যে দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া। ৬৬ বয়সের এই বিনোদনের সঙ্গে ফেলে আসা সেই ১৬ বছর বয়সের বিনোদনের পার্থক্য আজ ফারাক ব্যবধান। ওই বয়সে বিনোদন ছিল- গ্রামোফোনে আর রেডিওতে গান শোনা, বই পড়া, প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখা। ওই বয়স থেকে আমাদের প্রিয় তারকা হয়ে উঠেছিলেন- কানন দেবী, সুচিত্রা সেন, সুরাইয়া, প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়া, উত্তম কুমার এবং আরও অনেকে। ১৯৭২ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকের কথা। বয়স তখন আমার উনিশ, প্রথম কলকাতায় বেড়াতে গিয়ে এক অনুষ্ঠানে পংকজ কুমার মল্লিক, কানন দেবী, মঞ্জু দে, সাধনা বসু প্রমুখকে কাছ থেকে দেখলাম। সাধনা বসুর সঙ্গে ওইদিন প্রথম কথা বলার সুযোগ পেলাম। সেই সূত্র ধরে পরদিন তাঁর বাসায় উপস্থিত। বার বার তাঁর প্রশংসা করায় সাধনা বসু গাইলেন -‘ওগো তন্দ্রাহারা রাতের দেউলে জাগে’ গানটির কয়েক লাইন। নীল রঙের সিল্কের শাড়ি পরিহিতা সাধনা বসু জানিয়েছিলেন, ‘নাও দাদা, এই সামান্য চা টুকু খেয়ে নাও। আমার সামর্থ্য থাকলে তোমায় ইংরেজ ফুড খাওয়াতাম।’ সাধনা বসুকে দেখার পর থেকে ফিল্ম স্টারদের কাছ থেকে দেখা, তাঁদের সঙ্গে কথা বলাও আমার জীবনে সেটাও এক ধরনের বিনোদন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইতিহাসের ছাত্র ছিলাম বলেই পুরনো দিনের ফিল্ম স্টারদের কাছ থেকে দেখতে ব্যাকুল ছিলাম ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। তারকাদের কাছ থেকে দেখা, তাঁদের সঙ্গে কথা বলা আমার কাছে বিনোদনের মতো ছিল। আর তাই তো তাঁদের দেখেছি আমি চোখে, এঁরা হলেন- সুরাইয়া, মালা সিনহা, নিন্মি, বীনা রায়, বেগম পারা, স্বর্ণলতা, মমতাজ শান্তি, স্মৃতিরেখা বিশ্বাস, অশোক কুমার, দেব আনন্দ, দিলীপ কুমার, কানন দেবী, রবীন মজুমদার- প্রমুখ। ব্যাঙ্গালুরু গিয়েছিলাম শুধু দেবিকা রানিকে দেখবো বলে- সে দেখাও সফল হয়েছিল। তারকাদের কাছ থেকে দেখার সেই বিনোদন বহুদিন আগে ফুরিয়ে গেছে। বয়স বাড়ে, অনেক সখ এবং বিনোদনের ধারাও পাল্টে যায়- যা আজ আমার জীবনেও ঘটেছে। পত্র মিতালী করা ছিল আরেক বিনোদন। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আমার জীবনে প্রায় ১০ হাজার পত্রমিতা এসেছিল। তখন ছিল না কোন ধরনের নোংরামি। পত্র মিতালী নিয়ে আমি একটি বইও লিখেছিলাম ‘পত্র মিতালী’ নামে। আমার মতে পত্র মিতালীর নতুন ভার্সন হলো ফেসবুক। এই ফেসবুক আজ বিনোদন এবং সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। কেউ ভাল কাজে ফেসবুক ব্যবহার করছেন, আবার কেউবা ফেসবুককে প্রতারণার আরেক ফাঁদ হিসাবে ব্যবহারও করছেন আর এটাই ওদের কাছে এক ধরনের বিনোদন। সিনেমহলে গিয়ে ছবি দেখার সেই বিনোদন ফুরিয়ে গেছে আমার বয়সী মানুষদের জীবন থেকে অনেক আগেই। এখন তো আমি ইউটিউবে খুঁজি কানন দেবীর ‘শেষ উত্তর’ মুভি। খুঁজে পাওয়াও সহজ। ইউটিউবে যখন দেখি কানন দেবী হাত নেড়ে নেড়ে...’ তুফানমেল তুফানমেল যায় তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে ময়নামতির হাট এড়িয়ে ‘গানখানি গাইছেন তখন তো মনে হয়, বিনোদন আমার হাতের মুঠোয়। রূপনগর, ঢাকা থেকে
×