ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশাখ বরণ

পাঁচটার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করা গ্রহণযোগ্য নয় ॥ নূর

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৬ মার্চ ২০১৮

 পাঁচটার মধ্যে সব  অনুষ্ঠান শেষ  করা গ্রহণযোগ্য  নয় ॥ নূর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নববর্ষ উদযাপনে বিকেল পাঁচটার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করার সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয় ২০১৬ সালে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘোষণা অনুযায়ী, পহেলা বৈশাখের দিন বিকেল পাঁচটার পর উন্মুক্তস্থানে কোন অনুষ্ঠান করা যাবে না। যা গত বছরও বলবৎ ছিল। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত দুই বছর পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বাতিল করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এবারে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেছেন, বিকেল পাঁচটার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার সিদ্ধান্তটি গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা সাংস্কৃতিক জাগরণের কথা বলছি। কিন্তু এ ধরনের সিদ্ধান্ত যে অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি, তারা পরোক্ষভাবে লাভবান হচ্ছে। বিকেল পাঁচটার পর অনুষ্ঠান না হলেও, হাতিরঝিল ও বসুন্ধরা তিন শ’ ফুটের মতো উন্মুক্তস্থানে রাত দশটা-এগারোটা পর্যন্ত মানুষের সমাগম থাকে। তাদেরও নিরাপত্তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই দিয়েছেন। সেটি যেহেতু দিয়েছেন, সেহেতু অনুষ্ঠানেও তারা নিরাপত্তা দেয়ার সক্ষমতা রাখেন বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। রবিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক আশিষ কুমার সরকার, প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, এর অধীনস্ত দফতর, অধিদফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, যারা ঘর থেকে বের হতে চান, তাদের ঘরে ঢোকানোর চেষ্টা করছি আমরা। অথচ যাদের আমরা দমন করতে চাচ্ছি, তারাই এ সুযোগে প্রকাশ্যে নিজস্ব কর্মকা- চালানোর সুযোগ নিচ্ছে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সংস্কৃতিমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে রামেন্দু মজুমদার বলেন, বিকেল পাঁচটার মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ করার সিদ্ধান্তটি আমাদের সংস্কৃতিকর্মীদের মর্মাহত করেছে। আশা করি, সংস্কৃতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা হবে। এ বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বিকেল পাঁচটার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার সিদ্ধান্তটি অবশ্যই সরকারের পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কারণ, যতবেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ততবেশি সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। জোট ইতোমধ্যে পহেলা বৈশাখে রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি সরকার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করে, তাহলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, শিল্পকলা একাডেমি দুই দিনব্যাপী নববর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, যাতে থাকছে চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান। আয়োজন থাকছে জাতীয় গণগ্রন্থাগার, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, শিশু একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ও একাডেমিগুলোতে। এছাড়াও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাংলা একাডেমি ও বিসিকের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে দশ দিনব্যাপী বাংলা নববর্ষের মেলা। প্রতি বছরের মতো বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া দেশের প্রতিটি কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানায়) ঐতিহ্যবাহী বাঙালী খাবার সরবরাহ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×