ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা কারাগারে থাকুন বা বাইরে, বিএনপি ভাঙবে না ॥ মওদুদ

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২৪ মার্চ ২০১৮

খালেদা কারাগারে থাকুন বা বাইরে, বিএনপি ভাঙবে না ॥ মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখতে সরকার ভয়ানক ফন্দি আঁটছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। একই সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়া নাগরিক ফোরাম আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকুক আর বেরিয়ে আসুক বিএনপি ভাঙ্গবে না। সুপ্রীমকোর্ট বারের নির্বাচনে দেশের জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষ কী ভাবছে তা পরিষ্কার হয়েছে। কারণ, সুপ্রীমকোর্ট বারে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। সবাই প্রতিযোগিতা করেছে। একটা উৎসবের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হয়েছে। কোথাও কোন করচুপি হয়নি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি এমন উৎসবপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয় তাহলে আওয়ামী লীগ পাবে ২৫ শতাংশ আর বিএনপি পাবে ৭৫ শতাংশ ভোট। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়া নাগরিক ফোরাম (জিনাফ) আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মওদুদ বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়েও দল ভাঙ্গার ব্যাপারে সরকারের আশা পূরণ হয়নি। অনেকেই অনেক রকম গুঞ্জন আপনারা শুনেছেন যে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে গেলেই তো বিএনপি ভেঙ্গে যাবে, এখনও এমন গুঞ্জন চলছে। আমি দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়ে বলতে চাই যে, খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করে সরকার যে আশাটা করেছিল, সেই আশা ভঙ্গ হয়েছে। খালেদা জিয়া বেরিয়ে আসুক আর কারাবন্দী থাকুক বিএনপি ভাঙ্গবে না, ঐক্যবদ্ধ থাকবে। মওদুদ বলেন, আগামী মাস আমাদের জন্য পরীক্ষার মাস। এখনও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। সরকার যদি সমঝোতায় না আসে তাহলে একটা সময় আসবে রাজপথ ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তিনি বলেন, যেখানে গণতন্ত্র নেই সেখানে উন্নয়শীলতার কোন অর্থ নেই। দেশ উন্নয়নশীল হওয়ার পেছনে সরকারের কোন একক কৃতিত্ব নেই। আমরা ক্ষমতায় থাকলে আরও ৭ থেকে ৮ বছর আগেই উন্নয়নশীল হতো দেশ। আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ও দুর্নীতির কারণে এটি দেরিতে হয়েছে। মওদুদ বলেন, সুপ্রীমকোর্ট বারের নির্বাচনের হাওয়া ওল্টানোর জন্য সরকারের অনেক প্রভাবশালী লোক চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা তা পারেনি। তিনি বলেন, সরকার ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচনের দিবাস্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সেই স্বপ্ন কোনদিনই বাস্তবায়িত হবে না। কারণ, সব কিছুর একটা সীমা আছে। এই সরকার সেই সীমা পেরিয়ে গেছে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কে এ জামানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতুল্লাহ প্রমুখ। রিজভী বলেন, সরকার সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে বন্দী করার পর জামিন বিলম্বিত করতে মামলার আইনী প্রক্রিয়ার জন্য ওকালতনামায় তার স্বাক্ষরের প্রয়োজন হলেও এতে বাধা দেয়া হচ্ছে। অনেকবার চেষ্টা করেও আইনজীবীরা ওকালতনামায় খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নিতে পারেননি কারা কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতায়। এ জন্য খালেদা জিয়ার মামলায় পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। সুপ্রীমকোর্ট বারের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী তথা বিএনপি সমর্থিত প্যানেল সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়ে রিজভী বলেন, এ বিজয় দেশের বিচারঙ্গনে সরকারী নগ্ন হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ। দেশের বিচার বিভাগের এই চরম সঙ্কটে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীরা সঠিক রায় দিয়ে বিচারালয়ে সরকারী নোংরা খেলার দ্ব্যর্থহীন প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দেশের বিচার বিভাগ সরকারী প্রভাবমুক্ত নয় দাবি করে রিজভী বলেন, বিচার বিভাগ সরকারের ইচ্ছা-পূরণেরই হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। সরকার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কোন ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আপোসহীন নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে। আর খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে এবং তার নেতৃত্বেই বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মামলায় সরকার একের পর এক হস্তক্ষেপ করে যে নোংরা খেলা খেলছে, তা দেখে গোটা জাতি শুধু বিস্মিত নয় ধিক্কার জানাচ্ছে। কয়েকদিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের রক্ষণশীল সদস্য এনথিয়া ম্যাকলনটায়ার বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গ্রেফতার নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে আমার আগ্রহ বাংলাদেশ নিয়ে, আমি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্ব ও মামলার বিষয়টি অনুসরণ করছি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়ার অধিকার থাকতে হবে। বিচার বিভাগকে অবশ্যই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। অভিযুক্ত প্রতিটি নাগরিকেরই নিরপেক্ষ আদালতের কাছে নিজেদের ‘ডিফেন্ড’ করার অধিকার অত্যন্ত গুরুপূর্ণ। রিজভী বলেন, আমাদের বিচার বিভাগ সরকারী প্রভাবমুক্ত নয়। বরং বিচার বিভাগ সরকারের ইচ্ছা-পূরণেরই হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনকে জেলে বন্দী করার পর তাকে আরও চারটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এসব মামলায় আইনী পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
×