ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেবে সর্বকনিষ্ঠ ও সর্বজ্যেষ্ঠ সাঁতারু

১৫ বছরের রাশেদা, ৬৮ বছরের মিজানুরের অদম্য স্বপ্ন...

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৬ মার্চ ২০১৮

১৫ বছরের রাশেদা, ৬৮ বছরের মিজানুরের অদম্য স্বপ্ন...

রুমেল খান ॥ আগামী ১৯ মার্চ ফরচুন বাংলা চ্যানেল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। টেকনাফ ফিশারিজ ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ডের ফেরিঘাট পর্যন্ত ১৬.১ কিলোমিটার পথ সাঁতরে পাড়ি দেবেন ৩২ সাঁতারু। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এসব তথ্য জানান আয়োজক ষড়জ এ্যাডভেঞ্চারের সিইও লিপটন সরকার (টানা ১২ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেয়া একমাত্র সাঁতারু)। এ সময় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক নিখিল রঞ্জন রায় (অতিরিক্ত সচিব), বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের সিনিয়র ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ আবদুল্লাহ আল মুহিন, মার্কেটিং ম্যানেজার ফয়সাল মাহমুদ, ট্রাভেল এ্যান্ড ফ্যাশনের সম্পাদক এবং কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব এবং এক্সট্রিম বাংলার ফজলুল কবির সিনা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ছয়বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেয়া মনিরুজ্জামান এবং তিনবারের জয়ী সামছুজ্জামান আরাফাতও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা বিমানে নিহত যাত্রীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এবারের অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ প্রতিযোগিতার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার ঘটেছে দুই সাঁতারুকে নিয়ে। তাদের একজন সর্বকনিষ্ঠ এবং অপরজন সর্বজ্যেষ্ঠ বয়সী। একজনের বয়স মাত্র ১৫, অপরজনের ৬৮। রাশেদা খাতুন। বয়স ১৫। বগুড়ার মেয়ে। বাবা ফল ব্যবসায়ী। অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী (তাপসী রাবেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়)। তিন বোনের মধ্যে মেজ। বগুড়ার পৌর পার্কের পুকুরে মাসুদ রানা সুইমিং ক্লাবের কোচ মাসুদ রানা স্যারের কাছে সাঁতার শেখে ছয় বছর বয়সে। নিজেদের বাড়ি থেকে ওই পুকুরের দূরত্ব মাত্র তিন মিনিট (পায়ে হেঁটে গেলে)। জাতীয় পর্যায়েও সাঁতারে অংশ নিয়ে প্রচুর সাফল্য পেয়েছে রাশেদা। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে অর্জন করেছে ১৯ পদক। সবগুলোই স্বর্ণ। ২০১৪ সাল থেকে সে খেলছে বাংলাদেশ আনসারের হয়ে। রাশেদার ইভেন্টগুলো হলো : ১০০ ও ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল, ৫০ ও ১০০ মিটার ব্যাক স্ট্রোক। চলমান বাংলাদেশ যুব গেমসেও খেলেছে রাশেদা। কিন্তু পর্যাপ্ত অনুশীলনের অভাবে কাক্সিক্ষত সাফল্য পায়নি সে। এই ব্যর্থতা সে ঘোচাতে চায় বাংলা চ্যানেল অতিক্রম করে। যদিও সাগরে কোনদিন সাঁতার কাটেনি সে, এমনকি সাগর নিজ চোখে দেখেওনি। কিন্তু বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে যখন বাংলা চ্যানেলে সাঁতরানোর প্রস্তাব পেল তখন আগ্রহী হয়ে ওঠে সে। ‘পুকুরে ও সুইমিং পুলে সাঁতার কেটেছি, কিন্তু সাগরে সাঁতার কাটিনি। তাই খুবই ইচ্ছে সাগরে সাঁতার কাটার। তবে ওখানে গিয়ে সরাসরিই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারব না। আমাদের সব প্রতিযোগীকে তিনদিন সাগরে সাঁতার কাটার কলাকৌশল শেখানো হবে। তারপর প্রতিযোগিতায় অংশ নেব।’ দ্রুতগতির এবং স্বল্পপাল্লার সাঁতার এবং ধীরগতির এবং দূরপাল্লার সাঁতারের মধ্যে অনেক পার্থক্য। রাশেদা কী পারবে? ‘হ্যাঁ, পারব। আত্মবিশ্বাস আছে। সত্যিকারের সুইমার অবশ্যই পারবে, কারণ সে সুইমিংয়ের বেসিক জানে। তাছাড়া এমনিতেই পুলে আমরা তিন-চার ঘণ্টা অনুশীলন করে থাকি। বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে ওই একই সময় বা আরেকটু বেশি সময় লাগবে। কাজেই সমস্যা হবে না।’ গত এক যুগে মাত্র একজন নারী বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। তিনি ভারতের ঋতু কেদিয়া। রাশেদার স্বপ্ন- বাংলাদেশের প্রথম মহিলা হিসেবে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেবে সে। মিজানুর রহমান। মুখমন্ডলে সাদা দাড়ি। বয়স ৬৮। জীবনে কখনও স্কুল, কলেজ বা জাতীয় পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেননি। ৫২ বছর বয়সে ভিন্ন কারণে সাঁতার-ব্যয়াম শুরু করেন তিনি, ‘সাংঘাতিক ভোজনবিলাসী ছিলাম। ফলে ওজন বেড়ে গিয়েছিল অনেক (১০১ কেজি)। অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি। ডাক্তার পরামর্শ দেন, স্লিম হতে হলে সাঁতার প্র্যাকটিস করতেই হবে। সেই থেকে শুরু। যদিও শৈশবেই সাঁতার শিখেছিলাম। কিন্তু শিখে তা আর কাজে লাগাইনি। এখন কাজে লাগাচ্ছি শেষ বয়সে এসে। এখন ওজন ৮৪ কেজি। শরীরও ফিট। ডাক্তারের পরামর্শে খাবারে পরিবর্তন আনি। ইয়োগা করি। একদিন পরপরই রোজা রাখি। রোজা রেখেই সাঁতার কাটি। এবার পাড়ি দেব বাংলা চ্যানেল।’ ঢাকার আফতাবনগরে (থাকেন বনশ্রীতে) মিজানুর ওখানে একটি সুইমিং পুলে এলাকার শিশুদের ফ্রি সাঁতার (ফ্রি লাইফ জ্যাকেটসহ) শেখান গত তিন বছর ধরে। দেশের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায়। এক ছেলে, এক মেয়ের জনক। নিজের সুস্থতার মান কোন্ পর্যায়ে আছে- সেটা পরিমাপ করার জন্যই মূলত বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে চান মিজানুর। এর আগেও সমুদ্র দর্শন করেছেন, কিন্তু সেখানে সাঁতরাবেন এবারই প্রথম। প্রেস কনফারেন্সেই প্রথম জানতে পেরেছেন তিনিই হতে যাচ্ছেন এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বেশি বয়সী সাঁতারু। এটা জেনে তার প্রতিক্রিয়া, ‘খুবই ভাল লাগছে। আশাকরি বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে পারব। কারণ এর আগে জহিরুল হক হলের পুকুরে টানা ৫ ঘণ্টা সাঁতার কাটার অভ্যাস আছে। স্ত্রী, ছেলেমেয়েরাও খুবই উৎসাহ দিচ্ছে।’ প্রথম জীবনে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা, এরপর রংয়ের ব্যবসা করেছেন। এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছেন মিজানুর।
×