কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর চূড়ান্ত করতে দেশটির নতুন পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে আগামী ৮ এপ্রিল দুইদিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। তার এই সফরে তিস্তা চুক্তিসহ দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক ইস্যু প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। এই সফর চূড়ান্ত করতেই ঢাকা আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। আর নরেন্দ্র মোদির সফরে তিস্তা চুক্তিও হতে পারে। এপ্রিলের ঢাকা সফরে তিস্তা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করবেন বিজয় কেশব গোখলে। এছাড়াও গুরুত্ব পাবে বাংলাদেশ-চীন-ভারত সম্পর্কের নতুন দিকগুলো।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারত তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে চায় বলে এই সফরকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সাম্প্রতিককালের সম্পর্কের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে ভারত। এই অঞ্চলের চালকের আসনটি অন্য কোন দেশের হাতে দিতে চায় না মোদি সরকার। যে কারণে অতি সম্প্রতি সমুদ্র নিরাপত্তা ইস্যুতে ফ্রান্সের সঙ্গে বিশেষ চুক্তি করেছে ভারত।
বাংলাদেশকে বিশেষ বন্ধু হিসেবে রেখে আঞ্চলিক রাজনীতিতে ঢাকাকে নয়াদিল্লীর পাশে চায় মোদি সরকার। তবে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক নিয়ে চিন্তিত নয় নয়াদিল্লী। গত দুই বছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং যে সকল সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে সেটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে নয়াদিল্লী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মাসে ভারতের গণমাধ্যমকর্মীদের স্পষ্ট করে বলেছেন যে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক শুধু দেশের উন্নয়নের স্বার্থে। এতে ভারতের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।
বিজয় কেশব গোখলের ঢাকা সফরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। সেই সাক্ষাতে দিল্লীর বার্তা দেবেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
এসবের পাশাপাশি ভারতের পাশে বাংলাদেশের সরব সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাবেন গোখলে। সবচেয়ে বড় কথা ঢাকা এবং নয়াদিল্লীর মধ্যে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা তিস্তা ইস্যুতে বিশেষ বার্তা দিতে পারেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
বিজয় কেশব গোখলের ঢাকা সফর সফল হলে চলতি বছরের মধ্যভাগে কিংবা তার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে আসতে পারেন। সে সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বণ্টনের বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন। যেমনটি গত ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের ক্ষেত্রে দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ সফরের আগে ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে চীন সফর করবেন। দোকলাম ইস্যুতে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনার পর এটাই হবে দুইদেশের উচ্চপর্যায়ের মধ্যে প্রথম সফর। এছাড়া আগামী জুনে চীনের সাংহাইতে একটি সম্মেলনে ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, চীন সফরে বিজয় কেশব গোখলে দ্বিপক্ষীয় বিষয় ছাড়াও পররাষ্ট্র সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ভারতের কূটনীতিকরা বলছেন, যে কোন সময়ের চেয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমানে সুসম্পর্ক রয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও নয়াদিল্লী ঢাকার পক্ষেই রয়েছে, এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বোঝাতেই বিজয় কেশব গোখলে বাংলাদেশ সফরে আসছেন।
