ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মৌলবাদী অর্থনীতির শক্তি নিষ্ক্রিয় করতে প্রগতিশীল শক্তির ঐক্য চাই

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১১ মার্চ ২০১৮

মৌলবাদী অর্থনীতির শক্তি নিষ্ক্রিয় করতে প্রগতিশীল  শক্তির ঐক্য  চাই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে দ্রুত মৌলবাদের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের হিসেবে বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৪ সালে ২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছিল মৌলবাদ সম্পৃক্ত শিল্প ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এই মুনাফা অর্জনের পেছনে ৬ লাখ ৫৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকার সম্পদ বিনিয়োগ রয়েছে। মৌলবাদ গোষ্ঠীর এই অর্থ ব্যয় হচ্ছে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে। সর্বশেষ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টায় লিপ্ত হয় জঙ্গী গোষ্ঠী। দেশে মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধি, প্রগতিশীল ও মননশীল মনের কেউ আর এখন নিরাপদ নন। মৌলবাদী অর্থনীতির এই শক্তি নিষ্ক্রিয় করতে হলে প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের গবেষণাভিত্তিক ‘বাংলাদেশে মৌলবাদ : জঙ্গীবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতির অন্দর-বাহির’ গ্রন্থের প্রকাশনা-আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ভাষা সংগ্রামী, কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র গবেষক আহমদ রফিকের সভাপতিত্বে আলোচনায় বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান, অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক মামুনুর রশীদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. শফিকুজ্জামান প্রমুখ। মৌলবাদ কি, তার উদ্ভব ও বিকাশ কেন কিভাবে ঘটে? এসবের পেছনের রাজনীতি, অর্থনীতি, মনস্তত্ত্ব-এর মর্মকথা কি, মৌলবাদ কখন এবং কেন অস্তিত্বে রূপ নেয়, মৌলবাদী জঙ্গীত্ব ধর্মের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতাকেই দখল করতে চায়। কেন এবং কিভাবে মৌলবাদ মূলধারার অর্থনীতির মধ্যে মৌলবাদের অর্থনীতি, সরকারের মধ্যে সরকার, রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র, গড়ে তোলে? এসব কার্যকরণের আন্তঃসম্পর্কের স্বরূপই বা কি? জটিল এসব বিষয়ের নির্মোহ বিশ্লেষণ, সংশ্লিষ্ট তাত্ত্বিক কাঠামো প্রণয়ন এবং সমাধানের পথনির্দেশক এসবই এই গ্রন্থের উপজীব্য বলে মনে করছেন অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। বইটিতে সরকারীভাবে নিষিদ্ধঘোষিত ও কালো তালিকাভুক্ত ১৩৩টি জঙ্গী সংগঠনের নাম তুলে ধরা হয়েছে। এরা প্রত্যক্ষভাবে ইসলাম ধর্মভিত্তিক জঙ্গী কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এসব সংগঠন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে সম্ভাব্য উচ্চ মুনাফা অর্জনের খাতসমূহে বিনিয়োগ করছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ওষুধ, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, যোগাযোগ, পরিবহন, জমি, দালান, সংবাদ মাধ্যম ও বেসরকারী সংস্থা ট্রাস্ট ফাউন্ডেশন এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত অর্থের মুনাফা জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাস সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। বেসরকারী খাতের ইসলামী ব্যাংকের দিকে ইঙ্গিত করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, ব্যাংকটির মুনাফার বেশিরভাগ জঙ্গীবাদ কর্মকান্ড সৃষ্টি এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার পেছনে এতদিন ব্যয় হয়েছে। এখন বোর্ডে কিছুটা রদবদল হওয়ায় ব্যাংকটির অনৈতিক কর্মকান্ডের অনেক কিছু বেরিয়ে আসছে। তিনি বলেন, পুরো ব্যাংকটির সম্পত্তি ভোগ করছে জামায়াত ইসলামী ও মওদুদীর অনুসারী ১০-১২ হাজার উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী। দেশের ৩০০ সংসদীয় এলাকা টার্গেট করে প্রত্যেক এলাকায় ২০-২৫ জন জামায়াত ও মওদুদী অনুসারীদের ঋণ দেয়া হয়েছে। অথচ এই ব্যাংকটির ৭৫ হাজার কোটি টাকা এদেশের সাধারণ মানুষের। তিনি বলেন, ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের মাত্র ১৬শ’ কোটি টাকা রয়েছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন মানুষ দর্শনহীন নয়। জামায়াত-শিবির ইসলাম বিকৃতকারী একটি শয়তানী রাজনৈতিক দল। এরা কোরান ও হাদিস বিকৃত করে দেশে অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করেছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম বলেন, আমরা কি এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে দিতে পারি না-যেখানে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ থাকবে না। দেশ পরিচালনায় সংবিধান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংবিধানের অনেক বিষয় পাঠ্যপুস্তকে নিয়ে আসা উচিত। তিনি বলেন, আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চীন এখন বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের সমর্থন দিলেও চীন ও আমেরিকানরা বিরোধিতা করে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। মামুনুর রশীদ বলেন, রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠন করে মৌলবাদ অর্থনীতির শক্তি বাড়ছে। এই শক্তি রোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও মৌলবাদী শক্তির উত্থান হয়েছে। সর্বশেষ ত্রিপুরার নির্বাচনে বামরা পরাজিত হয়েছে। এটা ভারতের জন্যও শুভ লক্ষণ নয়। তিনি আবুল বারকাতের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ভারতের মৌলবাদ অর্থনীতিও নিয়ে আপনাকে লিখতে হবে। ডাঃ কামরুল হাসান খান বলেন, মৌলবাদ অর্থনীতির শক্তি রুখে দিতে হলে প্রগতিশীলদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এখনই সময়। তা না হলে মৌলবাদের অর্থনীতি আরও সম্প্রসারণ হবে। পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, স্বাধীনতার ৪৫ বছরে দেশ আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, জনকল্যাণের অর্থনীতি প্রয়োজন। কিন্তু মৌলবাদ অর্থনীতির কাছে সবাই জিম্মি হয়ে পড়ছে। ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদেরকে অবশ্যই ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে হবে।
×