ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মণিরামপুরে পুনর্বাসিত ভিখারিণীর দোকান জবরদখল

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ১০ মার্চ ২০১৮

মণিরামপুরে পুনর্বাসিত  ভিখারিণীর দোকান  জবরদখল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মণিরামপুরে সামেলা বেগম (৫৫) নামে এক স্বামীপরিত্যক্তা পুনর্বাসিত ভিখারিণীর দোকান জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, গত দশ মাস ধরে শাহিনুর রহমান টিটো নামে এক ব্যক্তি দোকানটি দখলে নিয়ে তালা মেরে রেখেছেন। সামেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও কোনও প্রতিকার পাননি। মণিরামপুর উপজেলাকে ‘ভিক্ষুকমুক্ত’ করার লক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোকানটি পেয়েছিলেন সামেলা। গত বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উপজেলার সিলেমপুর বাজারে এক অনুষ্ঠানে সামেলার হাতে ওই দোকানের দখল হস্তান্তর করেন। ভিক্ষুকদের জন্য গতবছর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খানপুর ইউনিয়নের সিলেমপুর বাজারে দুটি পাকা ও তিনটি টিনের দোকান তৈরি করা হয়। পাকা ঘর দুটির মধ্যে একটি বরাদ্দ দেয়া হয় সামেলাকে। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ওই দোকানে ব্যবসা করে বাকি দিনগুলো কাটাতে চেয়েছিলেন তিনি। খানপুর ইউনিয়নের ফেদাইপুর গ্রামে সরকারীভাবে পাওয়া একখ- জমিতে ঝুপড়ি ঘর করে বাস করেন সামেলা। তার ২৪ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। ওই ছেলে জন্মানোর কিছুদিন আগে তার স্বামী আব্দুস সাত্তার এলাকা ছেড়ে চলে যান। সেই থেকে আর খবর নেননি স্ত্রী সন্তানের। স্বামীহারা সামেলা টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমে পড়েন থালা হাতে। সামেলা অভিযোগ করেন, দোকান তৈরির সময় সকাল-বিকেল পানি দিয়ে তিনি দেয়াল ভিজিয়েছেন। দোকান হস্তান্তরের সময় তৎকালীন ইউএনও মুহাম্মদ অতুল ম-ল তাকে ‘৭-৮ হাজার টাকা দেবেন’ বলেছিলেন। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দোকান পাওয়ার পরপরই শেখপাড়া খানপুর গ্রামের মৃত রফিকুল বিশ্বাসের ছেলে শাহিনুর রহমান টিটো সেটি দখলে নিয়ে তালা মেরে দেন। সামেলা বলেন, ‘দোকান উদ্ধারে আমি ডিসি, ইউএনও ও এসিল্যান্ড অফিসে গিয়েছি কয়েকবার। সব জায়গা থেকে আমাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমি আমার দোকান ফিরে পেতে চাই।’ সিলেমপুর বাজারে গিয়ে সামেলার দোকানটি তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। ওই সময় টিটোকে পাওয়া যায়নি। কথা হয় তার স্বজনদের সঙ্গে। টিটোর চাচা আবু বক্কর বিশ্বাস বলেন, ‘বাজারের অধিকাংশ জমি ছিল আমাদের পূর্ব পুরুষদের। পরে তা খাস হয়ে যায়। যেখানে সরকার ফকিরদের জন্য ঘর করেছে ওই জায়গায় ইটের পোতার ওপর দোকান করে টিটো চাল আটা বিক্রি করত। দোকান মেরামতের জন্য ওটা ভাঙ্গা হলে সেই সুযোগে ইউএনও ওখানে দোকান করে ফকিরদের মাঝে বরাদ্দ দিয়েছেন। দোকানের ওই জায়গা আগে টিটোর দখলে ছিল বলে সে তাতে তালা মেরে দিয়েছে।’ দোকানটি টিটো জোর করে দখলে নিলেও তিনি কিন্তু সেখানে কোন ব্যবসা করেন না। দোকানটিতে তালা মেরে তিনি নওয়াপাড়ায় আকিজ জুটমিলে শ্রমিকের কাজ করেন। এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমি ঢাকায় ট্রেনিংয়ে আছি। এসিল্যান্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলছি।’ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেন, ‘কেউ ভিক্ষুকের দোকান জোর করে দখল করে তালাবদ্ধ করে রাখলে তালা ভেঙ্গে তা দখলমুক্ত করা হবে।’
×