ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশে ওড়ে ঝাঁক বেঁধে, নকল করতে পারে মানুষের ভাষা গাছে গাছে টিয়ার নাচন

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১০ মার্চ ২০১৮

আকাশে ওড়ে ঝাঁক বেঁধে, নকল করতে পারে মানুষের ভাষা গাছে গাছে টিয়ার নাচন

সমুদ্র হক ॥ নীল আকাশের নিচে মুঠো মুঠো সবুজ। টিয়ার ঝাঁক। এখন মাঝে মধ্যেই দেখা যায়। এরা নাচে গাছে গাছে। বনভূমি কমে যাওয়ায় দুঃসাহসিক টিয়াও বুঝি আবাস হারাচ্ছে! বৃক্ষের কোটরি খুঁজে না পেয়ে এরা এখন আশ্রয় নিচ্ছে কোন গৃহস্থ বাড়িতে। নগরীতেও উড়ছে। কেউ ধরে খাঁচায় বন্দী করে পোষ মানায়। কেউ বন্দী করে বিক্রি করে। পাখিকূলে টিয়া একমাত্র পাখি যার গায়ের রং রঙের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। টিয়া রঙের শাড়ি, টিপ অনেকের পছন্দ। সুন্দর পাখি টিয়াকে নিয়ে কতই না উপমা দেয়া হয়। কবি কবিতা লেখে। টিয়ার একটি বড় গুণ- মানুষের ভাষার নির্দিষ্ট ও সীমিত কিছু শব্দ মুখস্ত রাখতে পারে। যা বলার চেষ্টা করে। অবশ্য ময়না পাখিও ভাষা মুখস্ত করতে পারে। তাই বলে এটা ভাববার কারণ নেই এরা বুদ্ধিমান। মানুষের কথা নকল করা এদের সহজাত প্রবৃত্তি। সেদিক থেকে এরা সৌভাগ্যবান পাখি। এদের আরেকটি সৌভাগ্য হলো, টিয়ার মাংস কেউ খায় না। এরা বড্ড বেঁচে গেছে। টিয়া ঝাঁক বেঁধে ওড়ে। উর্ধাকাশকে নিসর্গে ভরিয়ে দেয়। টিয়া সুরে সুরে ডেকে উড়ে বেড়ায়। যেমন মানুষ গুণগুণ করে গান গেয়ে হাঁটে। এরা জোড়ায় থাকতে বেশি পছন্দ করে। মনে হবে পাখিদের রোমান্টিক জুটি। নির্দিষ্ট উচ্চতায় এদের ওড়ার গতি বেশি। নেমে যখন গাছের ডালে বসে মনে হবে সবুজ পাতার সঙ্গে মিশে গিয়েছে। পা দিয়ে সরু ডাল আঁকড়ে ধরে সার্কাসের মতো নানা কসরত দেখায়। বিশ্বে খুব কম পাখি আছে যারা পা দু’টিকে হাত হিসেবে ব্যবহার করে। টিয়ার বিশেষ ক্ষমতা এরা খুবই সাবলিলভাবে পায়ের তিন আঙ্গুলের ফাঁকে কোন ফল ধরে মুখের ভেতরে নেয়। এরা দিব্বি ফল খেতে পারে এভাবে। টিয়া পাখির বাদাম খাওয়া দেখে অবাক হতে হয়। মানুষের মতো বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দানা বের করে মুখে পুরে নেয়। ধান ক্ষেতে ঝাঁক বেঁধে টিয়া নামে। ধানের শীষ কেটে ঠোঁটে নিয়ে উড়ে যায়। টিয়ার ঠোঁট অন্য পাখিদের চেয়ে আলাদা। ওপরের ঠোঁট বরশির মতো বাঁকানো। এই ঠোঁট তীক্ষè ও ধারালো। এই ঠোঁট দিয়ে মানুষ ও প্রাণীর চামড়া ফুটো করে দিতে পারে। বলা হয়, টিয়ার ঠোঁটে থাকে হিরার ধার। পায়ের নখে হাত দিলে মনে হবে সূঁচ বসানো। লোহার খাঁচা ছাড়া এদের আটকানো যায় না। বাঁশ বা কাঠের খাচা হলে এরা তা কেটে পালিয়ে যায়। লোহার খাঁচায় বসেও এরা ঠোকর দিয়ে চিকন রড কাটার চেষ্টা করে। যখন পারে না তখন খাঁচায় বসে ভাবতে থাকে। মনে হবে ভাবুক পাখি। মানুষের আচার আচরণ লক্ষ্য করার সময় এরা কণ্ঠে কথা তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। কথা শেখালে তা আরও দ্রুত হয়। কথা শেখার সময় খাবার দেয়ার সময় সাবধানে থাকতে হয়। বিশেষ করে কলা থেকে বিরত রাখতে হয়। কোন পাখি দেখতে সুন্দর! এমন প্রশ্নে টিয়ার নাম প্রথম চলে আসে। এই সুন্দর রূপ নিয়ে টিয়া কখনও অহংকার দেখায় না। অন্য পাখিদের সঙ্গে মিলে মিশে থাকার চেষ্টা করে। তবে অন্য পাখি টিয়াকে দেমাকি ভেবে কাছে ভিড়তে চায় না। টিয়া দুঃসাহসিক। টিয়া এমনিতেই শান্ত। তবে যখন আক্রমণ করে তখন হিংস্র্র হয়ে যায়। ধারালো ঠোঁটে কামড় দিয়ে অন্যকে ক্ষত করে দেয়। টিয়ার বড় একটি গুণ হলো, কোন পাখি আক্রান্ত হলে টিয়া গিয়ে রক্ষা করে। বিশ্বে টিয়ার ৩শ’ ৭২টি প্রজাতি আছে। যাদের বলা হয় সিট্রাসিনি। এর মধ্যে ৮৬ প্রজাতি সিট্রাসিফমির্স বর্গের অন্তর্ভুক্ত। টিয়ার বেশিরভাগের বাস উষ্ণ ও নিরক্ষীয় অঞ্চলে। কিছু প্রজাতির বাস নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে টিয়া উষ্ণ অঞ্চল বলেই মনে করে। দেশে চার ধরনের টিয়া দেখা যায়। ছোট টিয়া, বড় টিয়া, লালবুকওয়ালা টিয়া ও লটকন টিয়া। জলবায়ুর পরিবর্তন ও বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় টিয়া আবাস খুঁজে ফেরে। ঝাঁক বেঁধে ওড়ার পর কোন গাছই হয় এদের আবাস। এই আবাস পরিবর্তন হতে সময় নেয় না।
×